E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘বাংলার জনগণ কোনভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আপোস করবে না’

২০২৫ মে ০২ ১৩:৪১:৫৪
‘বাংলার জনগণ কোনভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আপোস করবে না’

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : 'বাংলার জনগণ কোনভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আপোস করবে না' জানিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাত ১০টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বিবৃতি দেয় ওই রাজনৈতিক দলটি।

বিবৃতির শুরুতেই এ রাজনৈতিক দলটি উল্লেখ করে, 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ ও অসাংবিধানিক দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার। যে সীমান্তে এই করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত চলমান রয়েছে। পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে ভারত এবং চীনেরও সীমান্ত রয়েছে। এ রকম জায়গায় করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে এবং ঐ এলাকায় যেহেতু বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্বার্থ রয়েছে সেহেতু সে সকল রাষ্ট্রের মধ্যে স্বার্থগত দ্বন্দ্বও রয়েছে। সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসলে বাংলাদেশ প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলছে বিশেষজ্ঞরা।'

এ বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ আরও উল্লেখ করে, 'একটি শান্তিকামী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে অংশ নিতে পারে না। একদিকে এই অবৈধ দখলদার সরকারের শিরোমণি ফ্যাসিস্ট ইউনূস বলেছে, 'প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে'। সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বিরোধপূর্ণ সমস্যাসমূহের সমাধান করেছেন। অথচ দেশবিরোধী শক্তির প্রতিভূ ফ্যাসিস্ট ইউনূস দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে আসছে। বাংলাদেশ কার সঙ্গে ও কীসের জন্য যুদ্ধ করবে? বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হলে তার দায়ভার এই অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক দখলদার গোষ্ঠীকে নিতে হবে। আসলে তারা তাদের গণতান্ত্রিক বৈধতা না থাকা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতে এ ধরনের অর্বাচীন মন্তব্য করছে। আবার এই অবৈধ সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছে, 'আমাদের সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়।'

অন্যদিকে তারা মানবিক করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। যে সরকার সীমান্তের সুরক্ষা দিতে পারে না, তারা মানবিক করিডোর দেওয়ার চিন্তা করে কীভাবে এবং কীসের ভিত্তিতে এটাকে মানবিক করিডোর বলা হচ্ছে ও তার শর্তগুলো কী কী? জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন এই সরকার এখন পর্যন্ত সেটা জনগণের সামনে প্রকাশ করেনি। এই সরকার আসলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ছেলেখেলা করছে।'

এ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'প্রকৃতপক্ষে, তারা একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে বিদেশি প্রভুদের খুশি করার মাধ্যমে তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার দুরভিসন্ধি আঁটছে। এছাড়াও করিডোর দিলে সেটার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে এবং এতে যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটবে না, এই নিশ্চয়তা কে দেবে?

এর পূর্বে মানবিক কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিপন্ন জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ১১লাখ সদস্যকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছিল। এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। ফলে মিয়ানমার প্রাথমিকভাবে দুই লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নিতে এবং পর্যায় ক্রমে আরও ফেরত নেবে বলে রাজি হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের সময়ে রোহিঙ্গাদের তালিকাও করা আছে। এই অবৈধ সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কোনো ভূমিকা তো রাখতেই পারছে না। বরং অতিসম্প্রতি ১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এমনিতেই এই অঞ্চলকে ঘিরে শক্তিশালী দেশগুলোর পৃথক পৃথক পরিকল্পনা আছে এবং তাদের স্বার্থগত দ্বন্দ্ব আছে। সুতরাং এই অঞ্চলে বাংলাদেশ কোনো স্বার্থগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে দেশের স্বার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতি চরম হুমকির মুখে পড়বে।

তাছাড়া একটি অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক সরকার কোনোভাবেই এ রকম স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার রাখে না। যদি এই অবৈধ ও অসাংবিধানিক ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে তারা জনগণের সম্মিলিত অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বরাবরের ন্যায় গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।' এছাড়া, 'বাংলার জনগণ কোনোভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আপোস করবে না এবং তা বিকিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না' উল্লেখ করে এ বিবৃতির ইতি টানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এর আগে, এ বছরের প্রথমার্ধে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করেছিল জাতিসংঘ। এ জন্য গৃহযুদ্ধে পর্যুদস্ত রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের কাছে জাতিসংঘ ‘করিডোর’ দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ বলে জানানো হয়।

গত রবিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে করিডোর দেওয়ার সিন্ধান্তের বিষয়ে প্রথম তথ্য দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

ওই সময় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর দেওয়া নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) একটা হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ তবে কি কি শর্তে মানবিক করিডোর দিতে চায় বাংলাদেশ তা খোলাসা করেননি তিনি। এর পর থেকে দেশের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব সহ গণমাধ্যমেও উঠে আসে এর পক্ষে বিপক্ষে নানা মত।

উল্লেখ করা যেতে পারে, বিএনপি'র পরে আওয়ামী লীগের এ বিবৃতির মাধ্যমে 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্তে করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত' ইস্যূতে, দেশের সবচেয়ে বড় দুইটি রাজনৈতিক দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাঁদের নিজ নিজ দলীয় অবস্থান দেশের জনগণ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট স্পষ্ট করলো।

(আরআর/এএস/মে ০২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test