E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নড়াইলের রাজনীতির চালচিত্র 

ফুরফুরে মেজাজে বিএনপি, জামায়াতের ভোটের প্রস্তুতি, দল গোছাচ্ছে এনসিপি

২০২৫ জুলাই ০৮ ১৮:০০:৪৭
ফুরফুরে মেজাজে বিএনপি, জামায়াতের ভোটের প্রস্তুতি, দল গোছাচ্ছে এনসিপি

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : একসময় নড়াইলের রাজনীতি ছিল আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে। নড়াইল জেলা ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। সে সময়  বিএনপির অধিকাংশ কর্মসূচি সীমাবদ্ধ ছিল বাড়ির চৌহদ্দিতে কিংবা শহরের প্রান্তিক কোনো নির্জন জায়গায়। জামায়াতের অস্তিত্ব ছিল অদৃশ্য, তাদের দলীয় কর্মসূচি চলত গোপনে তথা নিরবে। কিন্তুু সময় বদলেছে, বদলেছে দৃশ্যপট। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নড়াইলে রাজনীতির চালচিত্র বদলে গেছে।

এখন আর জেলার রাজনীতির দৃশ্যপটে নেই আওয়ামী লীগ। হামলা-মামলার কারণে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী এখন আত্মগোপনে। জেলা কার্যালয় পড়ে আছে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায়। আওয়ামী লীগ আমলে সরব জাতীয় পার্টিরও তেমন কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা নেই।

অন্যদিকে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। সাংগঠনিক কাজের মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি ও জামাত।

সকেল-বিকেল চলছে তাদের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং। সংগঠনকে চাঙা করতে হয়েছে পুনর্গঠনের কার্যক্রম। দল গুছিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তারা। সভা-সমাবেশ করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনকেও।

তবে এখনো রাজনৈতিক ময়দানে তেমন কোনো সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বিএনপি এখন ভোটের মাঠে

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন মামলার চাপে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছিলেন বিপর্যস্ত। দলের জেলা কার্যালয় ছিল বছরের পর বছর তালাবদ্ধ। কর্মসূচি বলতে যা বোঝায়, তা সীমাবদ্ধ ছিল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের বাড়ির চারদেয়ালের মধ্যে। কখনো কখনো আবার শহর থেকে দূরের নির্জন স্থানে। এখন বিএনপির কার্যালয় জমজমাট। সেখানে নিয়মিত বসছে সভা-সমাবেশ, কর্মীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে দলীয় কার্যালয়। দল পুনর্গঠনে প্রথমেই তিনটি উপজেলা, তিনটি পৌরসভা ও একটি থানায় গঠন করা হয় নতুন কমিটি। এরপর সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে গঠিত হয় জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে দুটি আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় হয়েছেন। তারা ঘুরে ঘুরে করছেন গণসংযোগ, অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় কর্মসূচিতে। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে নতুন উদ্যম। সব কিছু মিলে, বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে নড়াইল জেলা বিএনপি।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমাদের নেতা-কর্মীরা হামলা-মামলা, হয়রানি ও নানা ধরনের দমন-পীড়নের মুখেও রাজপথ ছাড়েননি। আমি নিজেও অনেক মামলা খেয়েছি, জেল খেটেছি, দমন-পীড়নের শিকার হয়েছি। আমার বাড়ির চারদেয়ালের মাঝে অধিকাংশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।’

তিনি আশা করছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নড়াইলের দুটি আসনেই বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।

জামায়াতের নজর নির্বাচনে

কোনো বাধা-নিষেধ ছাড়াই নড়াইলে এখন দলীয় কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত। রাজপথে নিয়মিত মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করছে তারা। সংগঠনের গতি বাড়াতে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা কমিটি হালনাগাদ করা হয়েছে।

এ মুহূর্তে আসন্ন নির্বাচন নিয়েই বেশি ভাবছে তারা। স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সংসদ—একসঙ্গে দুটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। ইতিমধ্যে সংসদ নির্বাচনে নড়াইলের দুটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম সামনে এনেছে তারা। প্রতিটি সেন্টারে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও পোলিং এজেন্ট কারা হবে, তা–ও ঠিক করা হয়েছে।

নড়াইল জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আতাউর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমাদের প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ ছিল না; করলেই হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা আমাদের অবস্থান জানান দিয়েছি। এখন কোনো বাধা ছাড়াই আমরা দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি এবং সেই সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

দল গোছাচ্ছে এনসিপি

নড়াইলে জেলা শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল এলাকায় এনসিপির একটি কার্যালয় আছে। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা ও দুটি উপজেলায় সমন্বয় কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো মিছিল-মিটিং কিংবা দৃশ্যমান নির্বাচনী কার্যক্রম লক্ষ করা যায়নি নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির।

এ বিষয়ে জেলা সমন্বয়কারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এনসিপি একটি নতুন দল। বাস্তবতা হচ্ছে, অন্যদের মতো এত নেতা-কর্মী এনসিপির নেই। এ কারণে তেমন কোনো কার্যক্রম হয়নি। তবে ১০ জুলাই এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা নড়াইলে এসে একটি পদযাত্রা করবেন, আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নড়াইলবাসী এনসিপি সম্পর্কে জানতে পারবে। এ ছাড়া আহ্বায়ক কমিটি গঠন হলে কার্যক্রম আরও বাড়বে।’

রাজনীতির দৃশ্যপটে নেই আ.লীগের নেতা-কর্মীরা

গত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নড়াইলে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়, উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয় ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও নড়াইল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজামুদ্দিন খানসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরপর নড়াইলের আদালত ও চারটি থানায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে কয়েকটি মামলা হয়। এরপর গ্রেপ্তার এড়াতে নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। ওই সব মামলায় মাঝে-মধ্যে নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছে। কেউ কেউ আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাচ্ছেন। কেউ কেউ জামিনে বের হচ্ছেন, তবে যারা জামিনে মুক্ত হচ্ছে তারাও খুব একটা প্রকাশ্যে আসছেন না। হামলা-মামলার জালে বন্দী আওয়ামী লীগ।
চরম হতাশায় দলীয় নেতা-কর্মীরা।

(আরএম/এসপি/জুলাই ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test