E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নীলফামারী-২

বিএনপির প্রার্থী বাছাই নিয়ে জমে উঠেছে সমীকরণ

২০২৫ জুলাই ১৪ ১৭:৫২:৪৮
বিএনপির প্রার্থী বাছাই নিয়ে জমে উঠেছে সমীকরণ

ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : নীলফামারী-২ (সদর) আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ের মাঠে দিন দিন বাড়ছে উত্তাপ। সরাসরি রাজপথের রাজনীতি থেকে তৃণমূল পর্যায়ের গলি-মহল্লা—সবখানেই বিএনপি সমর্থকরা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। একদিকে পোস্টার, ব্যানার, গণসংযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা—সবখানেই প্রার্থীদের নাম ঘুরছে। ফলে জেলা রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা আ খ ম আলমগীর সরকার জেলার রাজনীতিতে প্রবল প্রভাব রাখছেন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম—সবখানেই তার সরব উপস্থিতি রয়েছে।

স্থানীয় পর্যায়ের অনেকে বলছেন, আলমগীর সরকারের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বগুণ তাকে মনোনয়ন দৌড়ে শক্ত অবস্থানে রেখেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের আন্দোলন, মিছিল, সভা-সমাবেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, যা তাকে কর্মীসমর্থকদের কাছে আলাদা গুরুত্ব এনে দিয়েছে।

জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ রুবেল নীলফামারীর যুবসমাজে বেশ জনপ্রিয়। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তিনি মাঠের আন্দোলন, মিছিল, মিটিং-এ সরাসরি অংশগ্রহণ করে এসেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে যুবসমাজকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় কার্যক্রম সক্রিয় রাখা এবং প্রয়োজনে রাজপথে প্রথম সারিতে থাকার কারণে রুবেলের প্রতি তরুণ ভোটারদের এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে।

তরুণ নেতৃত্বের নতুন মুখ হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন আর সবুজ চত্বরে রাজনীতি করা রেদওয়ানুল হক (বাবু) বিএনপির রাজনীতিতে এক পরিচিত মুখ। স্যার এ. এফ. রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। দলীয় আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করে রাজপথের নানা আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায়, ইউনিয়নে এবং শহরের ওয়ার্ড পর্যায়ে তার সমর্থকরা গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, আলোচনা সভা আয়োজনের মাধ্যমে বাবুর নাম প্রচার করছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং তরুণ-শিক্ষিত নেতৃত্বের ইমেজ তাকে মনোনয়ন দৌড়ে আলাদা অবস্থানে রাখছে।

নীলফামারীর রাজনীতির মাঠে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম অ্যাডভোকেট কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে এসে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বর্তমানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ছাত্রজীবন থেকে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে সরাসরি যুক্ত থাকার কারণে নেতাকর্মীদের কাছে তিনি একজন অভিজ্ঞ ও সাহসী নেতা হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া এই নেতা এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ইতিমধ্যেই তার সমর্থকরা শহর থেকে গ্রাম, হাট-বাজার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টার, ব্যানার, ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এ্যাডভোকেট কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল বলেছেন, “আমি দলীয় আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে রাজপথের আন্দোলন করেছি, আগামীতেও করবো। নীলফামারীর উন্নয়নে আমার স্বপ্ন আছে, প্রতিজ্ঞা আছে।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনকে সক্রিয় রাখা, তৃণমূল পর্যায়ে সম্পর্ক মজবুত রাখা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়—এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলা বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকনির্দেশনা, মাঠের গণসংযোগ ও সংগঠনভিত্তিক অবস্থান মিলিয়ে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি হবে, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আ খ ম আলমগীর সরকারের সাংগঠনিক শক্তি, এম সাইফুল্লাহ রুবেলের যুব নেতৃত্ব, রেদওয়ানুল হক (বাবু)-এর ছাত্র রাজনীতির পরিচিতি এবং কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল-এর রাজপথের অভিজ্ঞতা—এই চারটি ধারা মিলিয়ে নীলফামারী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। কে শেষ পর্যন্ত দলীয় নেতৃত্বের আস্থা অর্জন করবেন—তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

এদিকে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নীলফামারীর উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন—এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে যে প্রার্থী তৃণমূলে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারবেন, তিনিই ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। তাই প্রার্থী নির্বাচনের সাথে সাথে স্থানীয় উন্নয়নের রূপরেখা কেমন হবে, সেদিকেও নজর রাখছে সাধারণ মানুষ।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নীলফামারী-২ আসনের বিএনপির এই প্রার্থী বাছাই লড়াই দলের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি তৃণমূল রাজনীতিকে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করার এক অনন্য সুযোগ। এখন দেখার বিষয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত কার কাঁধে নীলফামারী সদর আসনের দায়িত্ব তুলে দেন—এবং সেই নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনে কতটা জনসমর্থন নিয়ে ভোটের মাঠে নামতে সক্ষম হন।

(ওকে/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test