E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘১৬টা বছর বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল’

২০২৫ ডিসেম্বর ১০ ১৩:৫৮:২১
‘১৬টা বছর বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল’

স্টাফ রিপোর্টার : গত ১৬ বছরের রাজনৈতিক বাস্তবতা, বিএনপির ওপর নিপীড়নের দাবি, নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি এই অবস্থান তুলে ধরেন।

স্ট্যাটাসে তারেক রহমান লেখেন, “১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল। কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনোদিন ঘরে ফিরে আসেনি।”

তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের বিষয় উল্লেখ করে লেখেন, “এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা- সব জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই। কিন্তু অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ- সবাই সেই ভয়ংকর পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে, নূন্যতম মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকার এর মতো মৌলিক সব বিষয়গুলো ছিল হুমকির মুখে।”

নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারেক রহমান লেখেন, “এই বছরগুলোতে আমাকেও কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে আমার কথা বলার অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। দেশের কোনো পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন আমার কোনো বক্তব্য প্রকাশ না করা হয়, এমন নির্দেশনা জারি ছিল। তবুও এই চাপিয়ে দেওয়া নীরবতার মধ্যেও আমি অধিকার, গণতন্ত্র আর মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছি, কারণ সত্যের স্পিরিটকে আদেশ দিয়ে থামানো যায় না।”

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ধৈর্য ও প্রতিরোধের প্রতীক উল্লেখ করে তারেক রহমান লিখেছেন, “এই পুরো অন্ধকার সময়টায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের ধৈর্য্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, তাকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা- এসবই পুরো দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি তার গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কখনো সরে যাননি। তার বিশ্বাস একটাই- অধিকার সবার; ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না।”

নিজের পরিবারের ওপর ঘটা নির্যাতনকে স্মরণ করে তিনি লিখেছেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবেও সেই দুঃসহ সময়ের সাক্ষী। আমার মা, যিনি দেশনেত্রী, নিজ হাতে সহ্য করেছেন তার ছেলেকে জেলে নেওয়া, নির্যাতন করার মানসিক যন্ত্রণা। তার আরেক ছেলেকে আমরা চিরতরে হারিয়েছি। বাংলাদেশের হাজারো পরিবারের মতো আমাদের পরিবারও ছিল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু ইতিহাসের একটা সত্য আছে- কষ্ট মানুষকে সবসময় তিক্ত করে না। কখনো কখনো কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী, আমার মা- এটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন- যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে। দেশকে বদলাতে হলে, ঘৃণার পথ নয়- ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যত গড়ে।”

বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে উল্লেখ করে তারেক রহমান লিখেছেন, “আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু- একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার জন্য মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, বিরোধী মত যেখানে হুমকি না হয়ে বরং গণতন্ত্রের অংশ হবে। যেখানে ভিন্ন মতের কারণে কাউকে নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হয়ে যেতে হবে না। বিএনপি আজ প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।”

মানবাধিকার দিবসের প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও লেখেন, “১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়- মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। আমরা আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি- আর অসংখ্য শহীদের গল্প মনে রাখি, যেন ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন আর দায়মুক্তি আর কখনো ফিরে না আসে।”

বিএনপি মারাত্মক ক্ষতি সহ্য করেছে, কিন্তু ভেঙে যায়নি উল্লেখ করে সবশেষে তিনি লেখেন, বিএনপি মারাত্মক ক্ষতি সহ্য করেছে, কিন্তু ভেঙে যায়নি। বরং সত্য, ন্যায়, জবাবদিহি, পুনর্মিলন, আর আইনের শাসনে বিশ্বাস রেখে আরও দৃঢ় হয়েছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই- যেখানে প্রতিটি মানুষের কণ্ঠ, অধিকার ও জীবন মূল্যবান; যেখানে মানবাধিকার আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি।"

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১০ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test