E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

সংসদ সদস্যপদ হারাতে পারেন জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দীন!

২০১৬ মে ১৮ ১৫:২১:১৪
সংসদ সদস্যপদ হারাতে পারেন জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দীন!

নিউজ ডেস্ক : নির্বাচনী হলফনামায় জালিয়াতি আর নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদপত্র দাখিলের দায়ে ফেঁসে যাচ্ছেন সিলেট- ৫ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি যুক্তরাজ্য প্রবাসী সমালোচিত সেলিম উদ্দীন। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া আয় বহিঃভূর্ত সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের আসনে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে মনোনয়ন না পেলেও সিলেট-৫ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় প্রথমবারের মতো এমপি হন সেলিম উদ্দীন। প্রবাসী এই রাজনীতিবিদ রওশন এরশাদের কাছের মানুষ ও পারিবারিক বন্ধু হিসেবেই পরিচিত জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে।

সেলিম উদ্দীন এমপির নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় দেখা গেছে, সেখানে তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতার স্থলে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ গ্রীন উইচ থেকে ব্যাচেলার অব সায়েন্স ডিগ্রি ফাষ্ট ক্লাস অনার্স (১ম বিভাগ) সহ উর্ত্তীণের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এ শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে ২৩ শে জুন ১৯৮৭ সালে ইস্যু করা একটি সনদপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল করেছেন তিনি। এ সনদটিকে জাল অভিহিত করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সেলিম উদ্দীন এমপির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবী করেন সার্টিফিকেটটি জাল নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জেল থেকে কারামুক্তির পর ১৯৯৮ সালে যখন লন্ডনে আসেন তখন বেগম রওশন এরশাদের ভাই মোরশেদের সাথে পরিচয় হয় জাতীয় পার্টির যুক্তরাজ্য শাখার বর্তমান সহ-সভাপতি ও সেলিম উদ্দীনের সম্পর্কে চাচা এডভোকেট এবাদ হোসেনের। এই এবাদ হোসেনের মাধ্যমেই রওশন এরশাদের সাথে পরিচিত হন সেলিম উদ্দীন। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্তরাজ্যে সক্রিয় হন সেলিম উদ্দীন। কিন্তু রাজনীতিতে আনকোরা সেলিম উদ্দীন হাইকমান্ডের কানেকশনে উড়ে এসে যুক্তরাজ্য জাতীয় যুব সংহতির দায়িত্ব নেবার চেষ্টা করেন।

এসময় দলে নবাগত সেলিম উদ্দীনের উদ্ধত আচরণ মেনে না নিতে পেরে অনেক সিনিয়র নেতার সাথে লন্ডনে সেলিম উদ্দীনের বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। একে একে পার্টির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা তৎকালীন সভাপতি মরহুম শামসউদ্দীন, সে সময়কার সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সভাপতি মুজিবুর রহমান সহ অনেক নেতার সাথেই বিরোধে জড়ান তিনি।

সেলিম উদ্দীন রওশন এরশাদের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভালের সুযোগে লন্ডনে হঠাৎ করেই বিশাল অর্থ-বিত্তের মালিক বনে যান বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে রওশন এরশাদের ময়মনসিংহের একজন ঘনিষ্টজন জানান, রওশন এরশাদ তার গুলশানের বাড়ি বিক্রির সমুদয় টাকা ব্যাবসায় বিনিয়োগের জন্য বিশ্বাস করে তুলে দিয়েছিলেন সেলিম উদ্দীনের হাতে। সে টাকা লন্ডনের শেয়ার ষ্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে লাভ নয়, বরং পুরো টাকাই লোকসানের গল্প রওশন এরশাদকে শোনান সেলিম।

শুধু এখানেই শেষ নয়, গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেবার সময় জাপা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেবার মতো বেয়াদবী আর উদ্ধত আচরনের ঘটনা ঘটিয়ে পার্টির ভেতরে-বাইরে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সেলিম। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত জাপা নেতাকর্মীরা সেলিম উদ্দীনকে মারতে উদ্যত হলে এরশাদ নিজেই আগলে শেষ রক্ষা করেন সেলিম উদ্দীনের। পার্লামেন্টে জাতীয় পার্টির চার নম্বর হুইপের দায়িত্বে থাকলেও ৬ জন পুলিশ নিয়ে সার্বক্ষনিক চলাফেরা করেন সেলিম উদ্দীন। যদিও তা প্রটোকলের বিধি-বহিভূর্ত আচরণ।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক তদন্তে সেলিম উদ্দীনের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়ায় বাতিল হতে পারে তার সংসদ সদস্যপদ।

জানা গেছে,২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের তথ্য হলফনামা আকারে নিজেদের আয়-ব্যয়, দেনা-সম্পদ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আয়-ব্যয়, দেনা-পাওনা, সম্পদের উৎস এবং তাদের আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চ আদালতের আদেশে এসব হিসাব প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উভয়েরই দায়িত্ব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়টি তদন্ত করা। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনেরই আলাদা এখতিয়ার আছে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখার। আরপিও অনুযায়ী যারা হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এমনকি নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পরও হলফনামায় দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণ হলে তাদের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ আছে আইনে।

এছাড়া আরপিওর ১২ অনুচ্ছেদের ১২ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে যারা সরকারের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত, তারা সংসদ সদস্য হতেও পারবেন না, থাকতেও পারবেন না। আদালত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের হলফনামায় সম্পদের হিসাব প্রদান বাধ্যতামূলক করেছেন ২০০৫ সালে। আবদুল মতিন এবং আরো দুজন আইনজীবীর করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

(এইচআই/এএস/মে ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৫ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test