E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

সব দ্বিধা কাটিয়ে টেস্ট নেতৃত্বে ফিরলেন শান্ত

২০২৫ নভেম্বর ০৩ ১৩:২৭:৫১
সব দ্বিধা কাটিয়ে টেস্ট নেতৃত্বে ফিরলেন শান্ত

স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আবারও দায়িত্ব নিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু কীভাবে তিনি মত পরিবর্তন করলেন, এই প্রশ্নটি কিছুদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন যখন শান্তকে সিদ্ধান্ত বদলাতে বলেন, তখন তিনি স্পষ্টভাবেই অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। দুজনের মধ্যে প্রায় চল্লিশ মিনিটের দীর্ঘ আলাপ হয় সেদিন।

শান্তের দ্বিধার মূল কারণ ছিল জনমতের প্রতিক্রিয়া। তিনি আশঙ্কা করছিলেন, আবার নেতৃত্ব নিলে সেটা ‘সুযোগসন্ধানী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখা হতে পারে। শান্ত জানেন, তার সরল ও নির্ভীক ব্যক্তিত্ব অনেক সময় গণমাধ্যমের পছন্দসই হয় না।

তবু পরিসংখ্যান বলছে, শান্তই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে ১৪ টেস্টে জয়ের হার ২৮.৫৭ শতাংশ (৪ জয়, ১ ড্র, ৯ হার)। তুলনায় সাকিব আল হাসানের জয়ের হার ২১.০৫ এবং মুশফিকুর রহিমের ২০.৫৮ শতাংশ। ফলে নেতৃত্ব ছাড়ার আগেই তিনি স্থায়ী ছাপ রেখে গিয়েছিলেন।

গত ২৮ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ শেষে হঠাৎই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়েন শান্ত। এরপর বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তা চলতে থাকে।

অবশেষে গত ২৮ অক্টোবর ওয়েস্টিন হোটেলে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম আকস্মিকভাবে তিন পরিচালক ফারুক আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক ও খালেদ মাসুদের (জুমে যুক্ত) সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে ছিলেন নাজমুল আবেদিনও। আলোচনার মূল বিষয় ছিল আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে (১১ নভেম্বর থেকে সিলেটে শুরু) নতুন টেস্ট অধিনায়ক নির্ধারণ।

সেখানে নাজমুল জানান, তিনি শান্তকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সময়ও ফুরিয়ে আসছে। তখন ফারুক আহমেদ অনুরোধ করেন, তাকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হোক, শেষবারের মতো চেষ্টা করবেন শান্তকে বোঝাতে।

বিসিবির একাধিক সূত্র জানায়, ফারুক আহমেদের ফোন কলই শেষ পর্যন্ত সবকিছু বদলে দেয়।

এক কর্মকর্তা ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে বলেন, “ফারুক ভাই তাকে বড় ছবিটা দেখিয়েছেন। শান্ত প্রথমে অনিচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু ফারুক ভাই যখন বলেন, ‘অতীত ভুলে সামনের দিকে তাকাও, আমি নিজেও কঠিন সময় পার করেছি, কিন্তু এখন ক্রিকেটের জন্যই কাজ করছি’, তখন শান্ত আর না বলতে পারেননি।”

ফারুক আহমেদের নিজের প্রত্যাবর্তনও শান্তকে প্রভাবিত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত নয়জন পরিচালকের মধ্যে আটজন তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানালেও তিনি সাম্প্রতিক বিসিবি নির্বাচনে ফিরে এসে এখন বোর্ডের সহসভাপতি।

অন্যদিকে, শান্ত যখন টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়েন, তখন সতীর্থদের তরফে কোনো আপত্তি আসেনি। বরং ওয়ানডে অধিনায়কত্ব হারানোই তাকে গভীরভাবে আঘাত করেছিল। শ্রীলঙ্কা সিরিজের ঠিক আগে মেহেদি হাসান মিরাজকে হঠাৎ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই একটি সিদ্ধান্ত বোর্ডের ভেতরে ও বাইরে বহু প্রশ্ন তোলে।

তখন বিসিবিতে ছিলেন না ফারুক আহমেদ। কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের দায় এককভাবে সভাপতি আমিনুল ইসলামের ওপর চাপানোর চেষ্টা করলেও তিনি তা নাকচ করেন।

আমিনুল বলেন, ‘আমি এককভাবে কাউকে সরানোর ক্ষমতা রাখি না। বোর্ডের যৌথ সিদ্ধান্তেই সেটি হয়েছিল। আমি তখন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম। তবু স্বীকার করছি, বিষয়টি আরও পেশাদারভাবে সামলানো যেত।’

এই অভিজ্ঞতা থেকেই আমিনুল এখন বিসিবির অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি বাড়াতে গঠন করেছেন একটি ‘শ্যাডো কমিটি’। প্রকাশ্যে না এলেও এই কমিটি কার্যক্রম শুরু করেছে, এবং ভবিষ্যতে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

সবশেষে, শান্তর আবার নেতৃত্বে ফেরা কেবল ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়; বরং বিসিবির ভেতরে সম্পর্ক, আস্থা ও নেতৃত্বের নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠারও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ০৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test