E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিশেষ মহলকে কাজ দিতে প্রাথমিক শিক্ষা’র টেন্ডারে অযৌক্তিক শর্ত

২০১৯ নভেম্বর ২৫ ১৬:১৬:০১
বিশেষ মহলকে কাজ দিতে প্রাথমিক শিক্ষা’র টেন্ডারে অযৌক্তিক শর্ত

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ল্যাপটপ, স্পিকার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের টেন্ডার ডক্যুমেন্টে কিছু বিশেষ শর্ত আরোপ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে আইটি খাতের স্থানীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের ধারনা, বিশেষ কোনো মহলকে কাজ পাইয়ে দিতে আগে থেকেই সব প্রস্তুতি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের টেন্ডার সিডিউল প্রণয়ন করা হয়েছে। যা কিনা উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর-২ এ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মাল্টিপারপাজ হল রুমে অনুষ্ঠিত ‘প্রি-টেন্ডার মিটিং’ এ এসব কথা জানান স্থানীয় শিল্পোদ্যাক্তারা। এসময় ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনকারি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস), ডাটা সফট ও ওয়ালটনের প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন। অন্যদিকে বিদেশি পণ্য আমদানিকারক এজেন্টদের মধ্যে ফ্লোরা টেলিকম, ফ্লোরা লিমিটেড, গ্লোবাল বাংলাদেশ, স্মার্ট টেকনোলজিস, থাকরালসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সভায় টেশিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফখরুল হায়দার চৌধূরী জানান, টেন্ডারে প্রতিটি লটে পূর্ব অভিজ্ঞতার সনদ হিসেবে যে বিশাল পরিমাণ টাকার শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা পূরণ করার সামর্থ্য নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি ছাড়া অন্য কারো নেই। এর ফলে স্থানীয় আইটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য টেন্ডার অংশগ্রহণে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের কিছু সাহসী উদ্যোক্তা আইটি শিল্প খাতে বিশাল বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসায় এ খাতের বিকাশ শুরু হয়েছে। তাই, দেশীয় ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এতো বিশাল অঙ্কের পূর্ব অভিজ্ঞতার সনদ দেয়া অসম্ভব। এরই প্রেক্ষিতে, বিদ্যমান টাকার অঙ্ক কমিয়ে যৌক্তিক পরিমান অর্থ নির্ধারণের অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেশীয় শিল্প বিকাশের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। সেজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন। অথচ সরকারি ক্রয় নীতিতে সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বরং বিশেষ ধরণের শর্ত জুড়ে দিয়ে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের পথে বড় প্রতিন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। ফলে, সম্ভাবনাময় এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি উৎসাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, ‘প্রাইমারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম-৪’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ল্যাপটপ, স্পিকার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর কিনতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর গত ৮ নভেম্বর তিনটি পৃথক দরপত্র আহবান করেছে। প্রতিটি টেন্ডারেই ৫টি লটে ২৬ হাজার ইউনিট করে পণ্য কেনা হবে।

উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ওই সব টেন্ডারের কারিগরি বিনির্দেশে প্রত্যেক লটে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিগত ৫ বছরে সর্বোচ্চ ২টি চুক্তির মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের (প্রায় ৩০ কোটি টাকা) পূর্ব অভিজ্ঞতার সনদ থাকার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোম্পানি সব লটে অংশগ্রহণ করতে চাইলে ল্যাপটপের জন্য প্রায় ১৫০ কোটি, স্পিকারের জন্য প্রায় ১৮ কোটি এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের জন্য প্রায় ১৩৪ কোটি টাকার পূর্ব অভিজ্ঞতার সনদ থাকতে হবে। এছাড়াও টেন্ডার ডক্যুমেন্টে অরিজিনাল উইন্ডোজের সঙ্গে এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার, বাংলা ফন্ট হিসেবে বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের পরিবর্তে অভ্র দেয়ার শর্ত দেয়া হয়েছে।

প্রি-টেন্ডার সভায় বিদ্যমান শর্ত’কে অবাস্তব, অযৌক্তিক ও দেশীয় শিল্প বিকাশের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সূত্রমতে, টেন্ডার ডক্যুমেন্টের বিদ্যমান শর্ত বাস্তবতার নিরিখে সংশোধনের জন্য সভায় তারা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। সেসময় তাদের উত্থাপিত যৌক্তিক দাবি বা প্রস্তাবনার বিপক্ষে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় অসাধু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজটি বিদেশি পণ্য আমদানিকারক এজেন্টরা বাগিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় উৎপাদকরা।

তাদের মতে, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান না থাকার সুযোগে আমদানিকৃত আইটি পণ্য সরবাহের মাধ্যমে প্রকল্পের বিশাল অঙ্কের টাকা বিদেশে চলে যাবে। অন্যদিকে এ খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিশাল বিনিয়োগই শুধু ঝুঁকির মুখে পড়বে না; হাই-টেক পার্কে বিদেশি বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত হবে।

এরইমধ্যে কারিগরি বিনির্দেশে (টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন) প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার জন্য ‘প্রাইমারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম-৪’ এর প্রকল্প পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছে টেশিস। ওই চিঠিতে, কারিগরি বিনির্দেশে পূর্ব অভিজ্ঞতার সনদ হিসেবে যে বিশাল পরিমান টাকার শর্ত দেয়া হয়েছে, তা কমিয়ে বাস্তব ও যৌক্তিক পরিমান অর্থ নির্ধারনের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি, অরিজিনাল উইন্ডোজ নিজেই এন্টি ভাইরাস হিসেবে কাজ করে বিধায় টেন্ডার ডক্যুমেন্টে বিদ্যমান শর্ত সংশোধন করে শুধুমাত্র অরিজিনাল উইন্ডোজ এবং বাংলা ফন্ট হিসেবে বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের কথা উল্লেখ করার অনুরোধ করেছে টেশিস।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকিউরমেন্ট পরিচালক ও ‘প্রাইমারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম-৪’ এর প্রকল্প পরিচালক মো. হাসান সরওয়ার জানান, টেন্ডার ডক্যুমেন্টের বিদ্যমান শর্ত সংশোধনের এখতিয়ার তাদের নেই। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে একমাত্র টেকনিক্যাল কমিটিই শর্ত সংশোধন বা শিথিল করতে পারবে। প্রি-টেন্ডার মিটিং এ দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের পক্ষ থেকে শর্ত সংশোধনের যেসকল দাবি ও প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, তা টেকনিক্যাল কমিটিতে পাঠাবো। আশা করি- দেশীয় শিল্প সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।

(পিআর/এসপি/নভেম্বর ২৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test