E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না’

২০২৫ মে ০৯ ১৩:৪৮:৪৯
‘কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না’

স্টাফ রিপোর্টার : বিভিন্ন খাতে করছাড় বা অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আর থাকছে না। আগামী অর্থবছর থেকে কর ছাড়ের ফয়সালা হবে জাতীয় সংসদে।

গত বুধবার (৭ মে) ‘কর ব্যয় নীতিমালা এবং এর ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রকাশ করেছে এনবিআর। যেখানে এমন বিধি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নীতিমালা ও কাঠামোর আইনগত রূপ দিতে কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো অর্থবিলের সঙ্গে অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে এনবিআর।

নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে শুধু জাতীয় সংসদের মাধ্যমেই করছাড় বা অব্যাহতি দেওয়া যাবে, সংসদ না থাকলে তখন রাষ্ট্রপতির হাতে এ ক্ষমতা থাকবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

কাঠামোতে বলা হয়েছে, বর্তমান আয়কর আইন, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন এবং কাস্টমস আইনের মাধ্যমে এনবিআরকে দেওয়া কর অব্যাহতির ‘সব ক্ষমতা রহিত করা হবে’। বার্ষিক জাতীয় বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর আইনসংশ্লিষ্ট যেকোনো ‘কর ব্যয় অনুমোদনের চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবে জাতীয় সংসদ’। আর সংসদ না থাকলে কর ব্যয়সংক্রান্ত বিধান জারির ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত থাকবে।

অন্যদিকে ‘বৃহত্তর জনস্বার্থে (নিত্যপণ্য ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ)’ অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা জরুরি প্রয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে সাময়িক কর ব্যয় (অব্যাহতি) অনুমোদন করতে পারবেন। এভাবে অনুমোদিত কোনো কর ব্যয় যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে তার মেয়াদ কোনোক্রমেই জারির তারিখ থেকে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের শেষ দিনের অতিরিক্ত হবে না। কোনো কর ব্যয়কে যে অর্থবছরে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সে অর্থবছরের পরও ওই কর ব্যয় কার্যকর রাখতে হলে তা জাতীয় সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে।

বর্তমানে প্রজ্ঞাপন বা আদেশের মাধ্যমে অনুমোদিত যেসব কর ব্যয়ের কোনো মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্ধারিত নেই, সেসব কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট সব প্রজ্ঞাপন বা আদেশ অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বারা ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে বলে কর ব্যয় নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সেসব কর ব্যয় অনুমোদন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কাঠামোতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিবছর অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা জাতীয় সংসদে একটি বার্ষিক কর ব্যয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। প্রতিবেদনে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, কর ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণ এবং বিদ্যমান কর ব্যয়গুলোর মধ্যে প্রতি বছর কমপক্ষে এক-পঞ্চমাংশের ফলাফল মূল্যায়ন, যাতে প্রতিটি কর ব্যয়কে প্রতি পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে একবার মূল্যায়ন করা হয় এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়।

ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে এনবিআরের নীতি নির্ধারক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘সুবিধা নিয়ে’ কর অব্যাহতি দেওয়ার সমালোচনা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা।

আইএমএফও চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় এনবিআর কী পরিমাণ কর ব্যয় বা অব্যাহতি ও করছাড় দিয়ে থাকে তা বিশ্লেষণ করতে বলেছে। সেটির নিরিখে একটি কাঠামো তৈরির শর্ত দেয়।

এরপর এনবিআর এর আগের কয়েক অর্থবছরের কর ব্যয় বিশ্লেষণ করেছে। এবার এসে কর‌ ব্যয়ের নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কাঠামো প্রকাশ করলো, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরের প্রস্তাব করেছে।

কর ব্যয় নীতিমালা এবং এর ব্যবস্থাপনা কাঠামোয় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা সত্তার নির্দিষ্ট আয়ের উৎসের বিপরীতে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আইনের মাধ্যমে করছাড় দেওয়া হলে সেই ব্যক্তি বা সত্তা পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ওই নির্দিষ্ট আয়ের উৎসের বিপরীতে করছাড় প্রাপ্য হবেন না। এছাড়া ওই ব্যক্তি বা সত্তা যদি কোনো ধরনের একীভূতকরণ, বিভক্তিকরণ বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তন করেন, তাহলে তিনি বিদ্যমান করছাড় প্রাপ্য হবেন না। আন্তর্জাতিক কনভেনশন, দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, করসংশ্লিষ্ট কোনো চুক্তি, দ্বৈত কর পরিহার সংক্রান্ত কোনো চুক্তির আওতায় অনুমোদিত করছাড়গুলো এবং কর আইনগুলো এ নীতিমালার ওপর প্রাধান্য পাবে।

এ নীতিমালার আওতায় কর ব্যয় বলতে বিদ্যমান কর আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধি বিধান, যেমন এসআরও বা আদেশের মাধ্যমে প্রণীত বিভিন্ন আইনানুগ কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস ডিউটি, আয়কর ও আবগারি কর ব্যবস্থায় দেওয়া সব করছাড়কে বোঝাবে। তবে আয়কর আইন, ২০২৩-এর আওতায় উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহ অগ্রিম আয়কর বিধায় ওই উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের হারের হ্রাস বা বৃদ্ধি কর ব্যয়ের আওতাভুক্ত হবে না।

আইনগত ভিত্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কর ব্যয় নীতিমালা এবং এর ব্যবস্থাপনা কাঠামোর আইনানুগ বাস্তবায়নের জন্য সব কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো অর্থবিলের সঙ্গে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হবে। জাতীয় সংসদ কর ব্যয়গুলো অনুমোদনের পর যতদূর সম্ভব সংশ্লিষ্ট কর আইনগুলোয় তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অনুচ্ছেদ ৪.১ (গ)-এর ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষেত্রে কেবল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনোরূপ কর ব্যয় অনুমোদন করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রেও জাতীয় সংসদে অনুমোদিত কর ব্যয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধানগুলোর জন্য পৃথকভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা যাবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদের কাছে বার্ষিক কর ব্যয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। কর ব্যয়ের কাঠামো নির্ধারণ, প্রাক্কলন ও পরিবীক্ষণের জন্য প্রতিটি কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট কাঙ্ক্ষিত সীমা সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হতে হবে, যাতে এ বেঞ্চমার্কের বিপরীতে পরিমাপকৃত বিচ্যুতিগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

কর ব্যয় নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর নতুন করে কোনো কর সুবিধা সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেওয়া হলে তার মেয়াদ ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ব্যতীত পাঁচ বছরের অধিক হবে না। তবে জনস্বার্থে জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া যাবে।

সাধারণভাবে কোনো কর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধানে উল্লিখিত মেয়াদকাল বৃদ্ধিকে নিরুৎসাহিত করা হবে। তবে নির্দিষ্ট মেয়াদকালের পরেও কোনো কর সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে কর সুবিধার কার্যকর ফলাফল এবং কর ব্যয়ের পরিমাণ পর্যালোচনার ভিত্তিতে সময় বৃদ্ধির আইনানুগ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

এদিকে, বর্তমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ করার পরিকল্পনার রয়েছে সরকারের। ‘রাষ্ট্রীয় নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ এর খসড়ায় বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

(ওএস/এএস/মে ০৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test