E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিমা আইন সংশোধনের আগে আইডিআরএ’র সংস্কার প্রয়োজন

২০২৫ নভেম্বর ২৩ ১৪:২৪:৪৯
বিমা আইন সংশোধনের আগে আইডিআরএ’র সংস্কার প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার : বিমা আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে যে ধারা ও উপধারা সংযোজন করা হয়েছে- সেগুলোকে পরিপালন করে বিমা শিল্প নিয়ন্ত্রণে দরকার দক্ষ ও চৌকস কর্তৃপক্ষ। এ কারণে সবার আগে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সংস্কার দরকার বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর–রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা। বিমা খাতের উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে বিমা আইন–২০১০ সংশোধনী ও বিমা খাত সংস্কারের বিষয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিমা বিষয়ক বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্ম ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। আলোচনায় অংশ নেন বিআইপিডির মহাসচিব কাজী মো. মোরতুজা আলী ও অর্থকাগজ পত্রিকার সম্পাদক প্রণব মজুমদার। মতবিনিময় সভার আয়োজক ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সম্পাদক ও প্রকাশক মোস্তাফিজুর রহমান টুংকু এতে সভাপতিত্ব করেন।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিমা খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি আইডিআরএ। তারা বিমা আইন ২০১০ এর সংশোধনী ছাড়া নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। লাইফ বিমা খাতের যেসব কোম্পানি তহবিল তছরুপ হয়েছে তা উদ্ধার, গ্রাহকদের বকেয়া দাবি পরিশোধ, তহবিল তছরুপে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নন-লাইফ বিমা খাতেও অবৈধ কমিশন বন্ধ ও দক্ষ জনবল তৈরিতেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।

বক্তারা বলেন, বিমা আইন ২০১০ প্রণীত হয় ২০১০ সালে। এর মধ্যেই কি কারণে সংশোধনীর প্রয়োজন হলো- সেটিও স্পষ্ট নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হয় ২০১০ সালে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনো চলছে প্রেষণে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে। যাদের বেশিরভাগেরই বিমা বিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বিমা আইন-২০১০ এর যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে কি না- আইন সংশোধনের আগে সে বিষয়টি আরও ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন।

মূল প্রবন্ধে বিমা আইন সংশোধনীর পর্যালোচনায় সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, বিমা আইন-২০১০ -এ ১৬০টি ধারা আছে এবং প্রতিটি ধারায় কম-বেশি একাধিক উপধারা আছে। আইডিআরএ কর্তৃক আনা সংশোধনী প্রস্তাবে মূল ১৬০টি ধারার মধ্যে ৯৯টি মূল ধারা অপরিবর্তিত রেখেছে। কিন্তু সেগুলোর উপধারাগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকি ৬১টি ধারার উপধারাসহ তাদের পরির্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনের সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ১৬০টি ধারার মধ্যে কয়েকটি বিলুপ্ত বা বাতিলের প্রস্তাব করেছে। অধিকন্তু ৬৪ নতুন ধারা, উপধারাসহ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সংশোধনী প্রস্তাব ও নতুন ধারা সংযোজনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা সময়সাপেক্ষ। প্রম্ভাবিত সংশোধন ও নতুন ধারা, উপধারা সংযোগের যুক্তি আলোচনা করেছে। কোম্পানি আইন ও ব্যাংকিং আইনের এবং অনান্য আইনের রেফারেন্স দিয়েছে।

এসব সংশোধনীর বিষয়ে তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, কর্তৃপক্ষ কি নতুন প্রণিত আইনগুলো পরিপালন করে বিমা শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা আছে? কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জনবল কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। প্রথম দিকে কিছু অ্যাডহক ভিত্তিতে ফ্রেশ গ্রাজুয়েট কর্মচারীদের দিয়ে কর্তৃপক্ষ চলতো, কিন্তু এখনো স্থায়ী হয়নি।

সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা আরও বলেন, পরবর্তীতে সচিবালয় থেকে লিয়েন করে উপসচিব, যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের লিয়েনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের দায়িত্ব পালন করাচ্ছে, যে কোনো সময় তারা বদলি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএসইসির মতো করে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হয়নি। যদিও এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষের বয়স ১৫ বছর হয়েছে।

আইডিআরএ’র এই সদস্য বলেন, বিমা আইনের আনা সংশোধনী প্রস্তাবে যে ধারা ও উপধারার সংযোজন করা হয়েছে- সেগুলোকে পরিপালন করে বিমা শিল্প নিয়ন্ত্রণে যে দক্ষ ও চৌকস কর্তৃপক্ষ হওয়া দরকার, সে জন্য আইডিআরএ’র সংস্কার সবার আগে দরকার। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শুধু যে বিমা শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ বা কন্ট্রোল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে তা কিন্তু নয়। যেহেতু বিমা খাত অনুন্নত এবং অবহেলিত, জনগণ বিমা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং বিমার জ্ঞান নেই- তাই এই শিল্পের বিকাশে নিয়ন্ত্রণের পাশাপশি উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনে বিমা উন্নয়নে কোনো ধরনের প্রস্তাব করা হয়নি।

তিনি বলেন, যে দেশের বিমা শিল্প যত উন্নত সে দেশের অর্থনীতি তত সমৃদ্ধ। সেহেতু বিমা শিল্পকে উন্নত করতে হবে। বিমার সুফল প্রতিটি নাগরিক যাতে পেতে পারে সে জন্য বিমাকে সর্বজনীন করতে হবে এবং এটাকে রিটেইল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এই কর্মকাণ্ডে বিমাকারীর যে ভূমিকা আছে, একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষেরও ভূমিকা থাকতে হবে। আইন প্রণিত হতে হবে জনবান্ধব।

সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, প্রস্তাবিত আইনে পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থের কথা উল্লেখ করলেও প্রকৃতপক্ষে কর্তৃপক্ষকে আরও ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্ষমতার যদি অপব্যবহার করা হয় তাহলে বিমাশিল্প আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এই শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অসাধু ব্যক্তিরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করে জনগণের অর্থ আরও লুটপাট করবে। এতে এক সময় মানুষ আর বিমা পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে না।

বিমা আইন ২০১০-এ সংশোধনীতে যেসব ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে তার কারণ তুলে ধরে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, বিমা আইন-২০১০ বিমাশিল্প নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয়। কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবিত আইনে আরও ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ব্যাংকিং আইন-১৯৯১ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে যে ক্ষমতা ব্যবহার করে, বিমাশিল্প নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ একইরূপ ক্ষমতা ধারণ করতে চায়। কর্তৃপক্ষ নন-লাইফ বিমা কোম্পানির চেয়ে লাইফ বিমা কোম্পানিকে বেশি বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যদিও পলিসিগ্রহীতার স্বার্থ সংরক্ষণেরর কথা বিবেচনা করে পরিবর্তন চাচ্ছে। কিন্তু বিমা গ্রহীতার দাবি পরিশেধে ৯০ দিনের বিধান অপরিবর্তিত রেখেছে।

তিনি বলেন, বিমা আইন অমান্যকারীদের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা জরিমানার প্রস্তাব করেছে। বিমা আইন-২০১০ এর মূল ধারার বিপরীতে যেসব বিধি-প্রবিধান করা হয়েছে বা করতে হবে সেগুলোকে বাদ দিয়েছে। বিমা আইন-২০১০ এর তফসিল-১ বাদ দিয়েছে। তার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের সময় সময় নির্দেশনা দেবে তার প্রস্তাব করেছে। বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালকদের নিয়োগ অনুমোদন ও তাদের সর্বোচ্চ সময়কাল ৬ বছর প্রস্তাব করেছে। বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কনস্টিটিউশন পরির্তন করেছে। উদ্যোক্তা ৭ জন, শেয়ারহোল্ডার ৭ জন ও নিরপেক্ষ পরিচালক ৭ জনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা আরও বলেন, কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারকে ‘উল্লেখযোগ্য শেয়ারহোল্ডার’ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবারের সংজ্ঞায় জামাতা এবং পুত্রবধূ সংযোজন করেছে। সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম অর্থ বিমাকারীর চেয়ারম্যান, পরিচালক, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সেক্রেটারিকে বোঝানো হয়েছে এবং তাদের নিয়োগে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। যেসব আইনের ধারা এরই মধ্যে বিধি বা প্রবিধিতে আছে সেগুলোকে মূল আইনে সংযোজনের প্রস্তাব করেছে। উল্লেখযোগ্য শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার হস্তান্তরে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে বলে প্রস্তাব করেছে। এছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে প্রস্তাব করেছে।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৩ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test