রাষ্ট্রশক্তির রক্তচক্ষু ও বিপন্ন সাংবাদিকতা
শেখর রায়
‘সংবাদ মাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ কথাটি শুনে আসছি সাংবাদিকতায় হাতে খড়ির সময়কাল থেকে। এই স্তম্ভটির অস্তিত্ব সাংবাদিকের স্বাধীনতা ব্যাতিত অর্থহীন। সেই স্বাধীনতা প্রকৃত আছে বা থাকে কিনা সে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। রাজ্যের মার্ক্সবাদী সরকারের আমলে এক স্থানীয় পত্রিকায় বন্যাত্রানে দুর্নীতি নিয়ে খবর করায় এক সপ্তাহ বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছিল। ৯০র দশকে শ্রমজীবী হাসপাতালে সিপিএম-পুলিশের মিলিত আক্রমনের বিরুদ্ধে একটি দৈনিক ইংরাজি কাগজে প্রবন্ধ লেখার জন্যে পুলিশি হুমকির সামনাসামনি হতে হয়েছিল।
ফ্রন্টিয়ার ইংরাজি সাপ্তাহিকে সাংবাদিকের কাজ কি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে করতে হয়েছে সে আতঙ্ক আজো এক দুঃসহ স্মৃতি। এ ছাড়াও অন্য কাগজে কাজ করার সময় কমবেশি প্রায় এক অবস্থার শিকার হতে হয়েছে। আবার এর বিপরিত চরিত্রের সাংবাদিককুল বর্তমান যারা যখন যেমন তখন তেমন সহবাস করে ঝুটঝামেলাবিহিন নামে সাংবাদিকের জীবন কাটিয়ে দেয়। কিন্তু সৎ ও সাহসী সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা চিরকাল বিপন্ন থাকে।
কোন সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যম কখনো শ্রেণী নিরপেক্ষ হতে পারেনা। হয় সে জনগনের অধিকারের পক্ষে কথা বলা লোক অথবা সংবাদ মাধ্যম ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রশক্তি ও পুঁজি মালিকের স্বার্থ চরিতার্থ করা ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে কোন নিরপেক্ষ সাংবাদিক ও তার সংবাদ মাধ্যম হয় না। এই ভয়ঙ্কর সত্য উপলব্ধি করেছিলাম সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়াত বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত ক্ষয়িষ্ণু ‘সত্যযুগ’ পত্রিকায় যাতায়াত করার সুত্রে। তবে কি বাম ডান রাজনীতির পত্রিকাগুলি আদর্শ পত্রিকা ছিল- কোনদিন না। ওগুলো দলীয় মুখপত্র এবং দলদাস চরিত্রের। জনগণের কোন ভরসা থাকেনা।
মনে পড়ে গৌর কিশোর ঘোষের বেকার জীবনের কিছু কথা। আনন্দ বাজার ও আজকাল থেকে সতীর্থদের নিয়ে বিদায় নেবার পর তার কর্ম জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন একাধিক সান্ধ্য আড্ডায়। গৌরানন্দ কবিভনে নামে লিখতেন আনন্দবাজারে। ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে কলাম লিখে জেল খেটেছিলেন। তার সতীর্থ বরুন সেনগুপ্ত সহ অগুন্তি সাংবাদিক সারা ভারতে কংগ্রেসি গুণ্ডা ও পুলিশদের হাতে লাঞ্ছনা ও জেলবাসের অভিজ্ঞতা আছে। পরে জনতা পার্টির শাসনে মুরারজি দেশাই ও বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ও শেষে অটল বিহারী বাজপাইয়ের সময় ভারতীয় সাংবাদিকতা ও স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের সুবর্ণ যুগ ছিল। মুশকিল হোল যে সাংবাদিকতার পরিচয় পত্র দিয়ে থাকে রাজ্য সরকার। ফলে নানা রঙ বেরঙ্গের দলের রাজ্য সরকার ও তার পুলিশ স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিক পেশার এক প্রতিবন্ধক। সংবাদ মাধ্যমের নামের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে কেন্দ্র সরকার তেমন যদি সাংবাদিকের সর্বভারতীয় পরিচয় পত্র থাকত তবে তার পেশার সহায়ক হত।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য কর্মরত সাংবাদিকের চাকুরীর নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। দুএক বছর আগে কলকাতার পত্রীকা গ্রুপ তার ৭০০ সাংবাদিক ও প্রকাশনার কর্মীদের রাতারাতি কিছু টাকা পয়সা হাতে দিয়ে চিরবিদায় করে। তেমন ভারতের অন্য প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যমের বহু কর্মী আজ কর্মহীন। ৮০র দশকে অটোমেশন চালু হওয়ার পর সংবাদ প্রতিষ্ঠানের বহু সাধারন কর্মীকে ছাটাই করা হয়েছিল। কিন্তু সাংবাদিকদের গায়ে হাত পড়েনি। এবার চল্লিশ পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব বহু কর্মরত প্রখ্যাত সাংবাদিক আজ কর্মহীন। আর আজকাল স্থায়ী সাংবাদিক বলে কিছু নেই, সব অস্থায়ী চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ। চাকরীর নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। ফলে সংবাদ মাধ্যমে সাংবাদিকের স্বাধীনতা আজকাল গল্পের মতো শোনায়। এই দুরাবস্তার কারন ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যাবহার। আজ যা ঘটে সে খবর টিভির পর্দায় আজকেই দেখা যায়, সংবাদপত্রে সে খবর ছাপা হয়ে পাঠকের হাতে আসে একদিন পর। ফলে বাসি খবর লেখার জন্য এত দক্ষ সাংবাদিক পুষে রাখার দরকার হয়না। তারপর আছে সংবাদ এজেন্সির ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিঙের প্রচারিত খবর যা শুধু দেখো আর কাগজের জন্য কলাম ভরো। আর কিছু আমন্ত্রিত লেখক থাকলেই ফিচার লেখার কাজ নিশ্চিত। সাংবাদিকের মেধা যোগ্যতা দিয়ে আর সাংবাদিকতা হয়না। এখন প্রযুক্তির দাস হয়ে সাংবাদিকতা।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও শুধু সাংবাদিকতার আবেগকে পাথেয় করে কিছু মহান প্রান এই পেশার মহানত্বকে উচ্চে তুলে ধরে রাখতে গিয়ে নিজের প্রান বিসর্জন দিয়েছেন। টেলিভিশন সাংবাদিক মধ্যপ্রদেশের সন্দীপ শর্মাকে বালি মাফিয়াদের খবর সম্প্রচার করার জন্য ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। প্রায় একই কায়দায় সাংবাদিক নবীন নিশ্চল ও বিজয় সিংহকে বিহারে হত্যা করা হয়। ব্যাঙ্গালুরুর একটি ম্যাগাজিন এডিটর গৌরি লঙ্কেশকে আততায়ীর গুলিতে প্রান হারাতে হয়। শুধু ২০১৭ ও ২০১৮র মধ্যে ভারতে ১১জন কর্মরত সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। বহু ক্ষেত্রে পুলিশ আততায়ীর কোন হদিশ পায়নি, গ্রেপ্তার ও বিচার সুদুরপরাহত। তার আগের বছর বিহারে সংবাদপত্র হিন্দুস্থানের সিউয়ান জেলার প্রধান সাংবাদিক রাজদেও রঞ্জন, ঝাড়খণ্ডে তাজা টিভির সাংবাদিক অখিলেশ প্রতাপ পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়। একই বছরে দিল্লীর পাতিয়ালা হাউস কোর্টে উকিলবাবুরা দলবদ্ধভবে এক সাংবাদিককে নিগ্রহ করে। ২০১৮র প্রথম দিকে হিন্দুস্থান টাইমসের এডিটর ববি ঘোষকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। কারন তার মালিককে কেন্দ্রীয় শাসক গোস্ঠী তলব করে তার কাগজের এডিটরের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এনডিটিভির এডিটর প্রনয় রায়কে অর্থ জালিয়াতী কেস দিয়ে হয়রান করা চলছে।
মাত্র কদিন আগে এই মাসে শ্রীনগরে মাস্রাত জারা নামে এক মহিলা ফটো সাংবাদিককে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করার জন্য রাষ্ট্র বিরোধী মামলা দিয়ে হয়রান করা হয়। এছাড়াও দ্য হিন্দু, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস নামের সর্ব ভারতীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের কাশ্মীরে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এ রাজ্যে কর্মরত সাংবাদিকদের টেলিফোনে আড়িপাতা, জেলা সাংবাদিকদের মাঝে মধ্যে ডেকে পাঠিয়ে হুমকি ধামকি নিত্য ব্যাপার। বেশী বাড়লে অন্যভাবে চাপ সৃষ্টি করা চলছেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক্ক এক টিভি নিউজ চ্যানেল এডিটরের বাড়ীর ইলেকট্রিক লাইন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। এখানে নীরবে শাসক দলের অনুসারী হলে ঠিক আছে, না হলেই নানা রকমের পেশাদারী ঝামেলায় সম্মুখীন হতে হবে- এ কথা কর্মরত সাংবাদিকদের ভালই জানা। অসমর্থিত সংবাদ সুত্রে প্রকাশ ভারতে এই বিজেপি জামানায় ৩৮ জন কর্মরত সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। তবে এর অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে যদিও অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। ফলে সাংবাদিকের স্বাধীনতা সর্বত্র কষ্টকল্পিত এবং যদিও নড়বড়ে চতুর্থ স্তম্ভ হয়ে থাকলেও গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থায় তার অস্তিত্বকে আজো কেউ অস্বীকার করতে পারেনি।
লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক, কোলকাতা।
পাঠকের মতামত:
- ঈদের আগমুহুর্তে জমজমাট ওয়ালটন ফ্রিজের বিক্রি
- বাগেরহাটে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে
- লক্ষ্মীপুরে ভূমিসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে জনসচেতনতা মূলক সভা অনুষ্ঠিত
- ধামরাইয়ে অটোচালক হত্যাকান্ডের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৪
- নড়াইলে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
- শৈলকুপায় অবৈধ চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস
- গোপালগঞ্জে বাসের চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
- চড় খেয়ে সুর পাল্টালেন কঙ্গনা!
- পঞ্চগড় ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের তৃতীয় ম্যাচে বগুড়ার জয়
- নিষিদ্ধ জাল জব্দ, গ্রাম পুলিশের ছেলেকে মারধর
- পুলিশ পিটিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার
- ফাঁকা থাকলেও টিকিট পাওয়া যায় না অভিযোগ সত্য নয়: বিমানমন্ত্রী
- ‘প্রস্তাবিত সাইবার আইন মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার’
- ‘কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি সেবা প্রদান করা হবে’
- লোকালয়ে আসা তিনটি হরিণ ফিরে গেল সুন্দরবনে
- ফরিদপুরে পুলিশের দক্ষতা উন্নয়ন কোর্সের সমাপনী ও সনদপত্র বিতরণ
- ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ারম্যানকে মারধর-ভাঙচুর, প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
- সুবর্ণচরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মিথ্যা মামলা ও হামলার অভিযোগ
- লক্ষ্মীপুরে ভূমিসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে জনসচেতনতামূলক সভা
- ভূমি সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে মহম্মদপুরে জনসচেতনতামূলক সভা
- মিন্টুকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে কালের কণ্ঠের সংবাদকর্মীকে হুমকি
- জুয়েলারি শিল্পের কারিগরি প্রশিক্ষণে অর্থায়ন করবে বিশ্ব ব্যাংক
- সাবেক ভ্যাট কমিশনার ওয়াহিদা রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- আগৈলঝাড়ায় সরকারের খাদ্য সহায়তা বিতরণ উদ্বোধন
- দিনাজপুরে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২
- পুরনো ও নব্য রাজাকারদের ক্ষমা নেই
- প্রণব মুখার্জীর স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জীর সুস্থতা কামনায় নড়াইলের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থনা
- আনিসুর রহমান আলিফ’র গল্প
- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানসহ ৫ দেশ
- তাইওয়ানে ২৫৫ দিন পর করোনা রোগী শনাক্ত
- পঞ্চগড়ে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
- ‘রবি অথবা সোমবার থেকে বুস্টার ডোজ শুরু’
- চাপে পড়ে আপডেট স্থগিত করল হোয়াটসঅ্যাপ
- নওগাঁয় লাইট বিহীন ট্রাক্টরের ধাক্কায় মোটরবাইক চালক নিহত
- নড়াইলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর মৃত্যু
- ‘ফাইনাল হারলেও মেসিই ইতিহাসের সেরা থাকবে’
- ‘লোহাগড়ার মুক্তিযুদ্ধ’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব
- উদ্যোক্তা সম্মাননা পেলেন ৩০ সফল নারী
- নড়াইলে মাদকবিরোধী সেমিনার অনুষ্ঠিত
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিলছে টানা ১৭ দিনের ছুটি
- গোপালগঞ্জে বিনা'র উচ্চ ফলনশীল আউশ ও আমন ধানের জনপ্রিয় জাত নিয়ে কৃষক প্রশিক্ষণ
- কালো টাকা সাদা: আওয়ামী লীগ-বিএনপির তরজা
- কালিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে খান শামিম রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !