E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সবাইকে দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা 

২০২২ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৫:২১:২৩
সবাইকে দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা 

শিতাংশু গুহ


দুর্গা পূজা এসেই গেলো। সবাইকে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা। গতবছর (২০২১) দুর্গাপূজায় কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ ও বেশ ক’টি জায়গায় যে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছিলো তা ভেবে হিন্দুরা কিছুটা উদ্বিগ্ন, এবারো কি তাই হবে? একুশের অক্টবরে একজন ইকবাল দেবীদুর্গার পদতলে একটি ‘কোরান’ রেখে নিজধর্মের অবমাননা করেছিলো, এতে ‘ধর্ম অবমাননার’ অজুহাতে হিন্দুর বাড়িঘর, সম্পত্তি পুড়েছিলো, ইকবালের কিছু হয়নি। ইকবালদের কিছু হয়না, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আটকা পরে ‘ঝুমন দাস’, এবং নিরপরাধ হিন্দুরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিয়েছেন, এবার পূজায় ঝামেলা হবেনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন ‘পূজার সংখ্যা’ কমাতে? এই মন্ত্রীর আমলে বেশ ক’টি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে, তিনি কিচ্ছু করতে ব্যর্থ হয়েছেন, অথচ তিনিই পরামর্শ দিচ্ছেন পূজার সংখ্যা কমাতে! এই মন্ত্রীই ক’দিন আগে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে একজন হিন্দুও ভারতে যায়নি’। মিতালী মুখার্জী বোম্বে থেকে ঢাকায় এসে বিনা পারমিটে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, এই গায়িকা কিন্তু বেশিদিন হয়নি, বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে গেছেন। অন্জু ঘোষ আশির দশকে ঢাকায় নামীদামী নায়িকা ছিলেন, তিনিও কলকাতা থেকে মাঝেমধ্যে ঢাকা আসেন।

দেবী দূর্গা আসেন, সাথে অসুরও আসে। ক’দিন পর দেবীদুর্গা চলে যাবেন, অসুরগুলো রেখে যাবেন, এই অসুররা মুর্ক্তি ভাঙ্গে, এর বিচার হয়না। বাংলাদেশে গত একান্ন বছরে মূর্তিভাঙ্গা বা হিন্দুর ওপর অত্যাচারের কারণে একজনের বিচার হয়নি। হবার সম্ভবনা তেমন নেই, কারণ প্রশাসন অনেকাংশে সাম্প্রদায়িক। ক’দিন আগে লিখেছিলাম, পূজার খরচ কমিয়ে মন্দিরে সিসি ক্যামেরা লাগান, এতে অপরাধী ধরা পড়বে। একজন লিখলেন, ধরলে কি হবে, পুলিশ ‘পাগল’ বলে ছেড়ে দেবে। রংপুরের অরবিন্দ রায় জানালেন, সদ্য একটি নাবালিকাকে অপহরণ করা হয়েছে। ওসিকে জানালে তিনি বললেন, এটি প্রেমের কেস। বলা হলো মেয়েটি নাবালিকা, আইন কি বলে? এইতো অবস্থা!

একজন প্রদীপ চন্দ্র আজ (২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২) জানালেন, বান্দরবনে ১৬৮টি পরিবারকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছেন, বান্দরবন পার্বত্য জেলাধীন রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় স্থানীয় সেনা, ও উপজেলা প্রশাসন, এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মিলে স্থানীয় মারমা অধিবাসীদের শ্মশান জোরপূর্বক দখল করে তাতে ১৭টি ‘নও-মুসলিম’ ত্রিপুরা পরিবারের জন্যে বাড়ী নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ঘটনাটি প্রশাসনের উদ্যোগে ধর্মান্তরে সহায়তা-করণ নয়কি? রামু’র ঘটনায় একজন পুলিশ অফিসার বলেছিলেন, ‘গায়ে উর্দি না থাকলে তিনিও বৌদ্ধ মন্দির আক্রমণে অংশ নিতেন। এসবই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’র দৃষ্টান্ত!

এসব থেকে মুক্তি’র একটিই রাস্তা, রুখে দাঁড়ানো। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বারবার বলেছেন, ‘ওঠ, যুদ্ধ কর’। সারভাইভাল অফ দি ফিটেষ্ট, এটিই সত্য। শিশু যে মাটিতে আছাড় খায় সেই মাটি ধরেই উঠে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুরা ভূমিপুত্র; দেশের মাটি ধরেই তাঁদের উঠে দাঁড়াতে হবে। লড়াই করেই বাঁচতে হয়। সংখ্যালঘুর জন্যে লড়াইটি প্রতিকূল, তবু লড়াই ছাড়া রাস্তা নাই। আর হীনমন্যতা নয়, উঠ, জাগো, বল, ‘চির উন্নত মম শির’। এদেশ তোমার। এ মাটি তোমার চৌদ্ধ পুরুষের। বেঁচে থাকার জন্যে জন্যে সংগ্রাম একটি সর্বজনীন সত্য, এটি ভুলে গেলে চলবে কেন? বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বুঝতে হবে, অন্যের ভরসায় নয়, নিজের যোগ্যতায় বাঁচতে হবে, ভারত বা আওয়ামী লীগের ভরসায় নয়।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test