মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়ামুক্ত তালিকা প্রণয়ন করা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব

আবীর আহাদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে, বীর মুক্তিবাহিনীর শৌর্য ত্যাগ ও বীরত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার রূপকার হিশেবে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিশেবে পরিগণিত হয়েছেন। দেশের কোটি কোটি মানুষ একটা স্বাধীনতা দেশের নাগরিকের মর্যাদা পেয়েছে।
বিগত পাঁচ হাজার বছরের মধ্যে এই প্রথম পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ স্বাধীন ভূখণ্ডে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছে। অতঃপর বাংলাদেশ একটি সংবিধান পেয়েছে, পেয়েছে একটি জাতীয় পতাকা ও একটি জাতীয় সঙ্গীত। চির পরাধীন বাঙালি জাতি পেয়েছে তাদের একটি জাতিসত্তা, জাতিরাষ্ট্র ও স্বাধীন বাঙালি সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনার অধিকার। মুক্তিযোদ্ধাদের সৃষ্ট স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই বাঙালি আজ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, সামরিক প্রধান, সচিব, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী প্রভৃতি হতে পারছেন। আর এ-সবই সম্ভব হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের ভিত্তিতে। বাংলাদেশ পরিচালিত হতে থাকবে তাই সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা ও আদর্শে। সুতরাং বাঙালি জাতি ও তার সরকার কোনোমতেই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন ও অবমাননা করার কোনোই অধিকার রাখে না।
কিন্তু আমরা দু:খের সাথে লক্ষ্য করেছি, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করেনি! সংবিধানের প্রস্তাবনাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : "আমরা বাংলাদেশের জনগণ উনিশশো একাত্তর খ্রীস্টাব্দের মার্চ মাসের ছাব্বিশ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি" সেখানে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের কথা নেই! অর্থাত্ 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি অনুপস্থিত। অথচ আমরা মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত এক রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছি বলেই আমরা 'মুক্তিযোদ্ধা' হয়েছি; বিজয় লাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি। এবার আসুন প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে। সেখানে বলা হয়েছে : "যেসকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল" বলে উল্লেখ রয়েছে সেখানেও মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বীরযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা নেই! এমতাবস্থায় সংবিধানের প্রস্তাবনা মোতাবেক প্রতিভাত হয় যে, বাংলাদেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি এবং মুক্তিযোদ্ধা বলতেও কেউ নেই!
অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ ও বোদ্ধারা মনে করেন, সংবিধানের প্রস্তাবনায় বর্ণিত 'মুক্তিগ্রাম'ই 'মুক্তিযুদ্ধে'র নামান্তর। তাহলে তো বাংলাভাষার অভিধানে 'মুক্তিসংগ্রাম' ও 'মুক্তিযুদ্ধ' বলে দু'টি শব্দ থাকতো না! সংগ্রাম ও যুদ্ধ দু'টি ভিন্ন শব্দ বলেই তো অভিধানে তা ভিন্ন নামে স্থান করে নিয়েছে, যার ব্যাখ্যা শব্দদ্বয়ের মধ্যেই নিহিত। ইংরেজি ভাষায়ও এ-প্রসঙ্গ দু'টির ভিন্ন নাম রয়েছে, একটি হলো Liberation Struggle (মুক্তিসংগ্রাম), আর একটি হলো Liberation War বা War of Liberation (মুক্তিযুদ্ধ )।
আমরা একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছি বলেই তো আমরা অহরহ বলে থাকি 'মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার', 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য' ইত্যাদি। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো বলেই তো গঠিত হয়েছে মুক্তিযুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর প্রভৃতি। অন্যদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ঘটা করে 'মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান'হ নানান অভিধায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষিত করা হয়। অথচ সংবিধানের মূলস্তম্ভ 'প্রস্তাবনা'র কোথাও মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা শব্দের নামগন্ধ নেই। সাংবিধানিক আইনি ভিত্তি নেই। ফলে জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরব্জ্জ্বল অধ্যায় ও শ্রেষ্ঠ সন্তান হিশেবে 'মুক্তিযুদ্ধ' ও 'মুক্তিযোদ্ধা'র সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই! এই অস্পষ্টতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চলতে পারে না।
সাংবিধানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃত নয় বলেই অহরহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ঘটছে এবং অ-মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকাররাও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে চলেছে! মুক্তিযুদ্ধের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকার ফলে একটি কুচক্রীমহল আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, গণ্ডগোলের বছর ইত্যাদি অপবিশেষণে অভিহিত করার সুযোগ পাচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পদদলিত হচ্ছে এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদাহানি ঘটছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বসহ তাদের জন্য যৎসামান্য ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় বিরাটসংখ্যক ভুয়ারা ভাগ বসিয়ে চলেছে।
বঙ্গবন্ধু সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে যেখানে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দেড় লাখের বেশি নয়, সেখানে আজ মুক্তিযোদ্ধার সরকারি সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দু'লাখ ত্রিশ হাজারের ওপরে, যার মধ্যে সত্তর/আশি হাজারই ভুয়া। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই এই ভুয়াদের সিংহভাগ গেজেটভুক্ত হয়েছে। কী পরিতাপের বিষয়, এখন অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাব যখনতখন যেকেউ বীর মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে! এ প্রক্রিয়ায় আরো প্রায় দেড় লাখের মতো মুক্তিযোদ্ধা-দাবিদার অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, যার ৯৯% ভাগই ভুয়া।
জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য ও গৌরবকে চিরস্মরণীয় করে মহাকালের গতিপথে সত্য সুন্দর ও পবিত্রতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই, গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের সচেতন নাগরিক হিশেবে আমরা 'একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ'-এর ব্যানারে জাতীয় স্বার্থে সংবিধানের যথাস্থানে 'মুক্তিযুদ্ধ' ও 'মুক্তিযোদ্ধা' শব্দদ্বয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানসহ বঙ্গবন্ধু সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে একটি উচ্চপর্যায়ের সামরিক বা বিচারবিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই তদন্ত কমিশন গঠন করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা প্রণয়নের দাবি তুলেছি-যা এখন ব্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
আমরা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুমহান নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল; মুক্তিযোদ্ধারা আওয়ামী লীগেরই সৃষ্টি। সুতরাং আওয়ামী লীগকেই ঐতিহাসিক কারণে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে, করতে হবে ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা এবং এ-প্রক্রিয়ায় ইতিহাসের পাতায় আরেকবার তারা স্মরণীয় হয়ে থাকার সুযোগটি গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
পাঠকের মতামত:
- ‘৫ আগস্ট ঘিরে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই’
- ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিতে পারে’
- শ্রীনগরে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্য সেবা
- হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা
- ‘গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে’
- ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৮৬ জন
- ১০২ এসিল্যান্ড প্রত্যাহার
- জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের
- ‘তিন মাসে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হয়েছে, এক বছরেও না হওয়ার কারণ দেখছিনা’
- পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শাহীন গ্রেপ্তার
- জামালপুরে দুই টিকিট কালোবাজারি আটক
- গোপালগঞ্জে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
- সোনাতলায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
- ফুলপুরে পরিষ্কার পরিছন্নতার বিশেষ অভিযান
- স্বাধীনতা ও জাতিসত্তা রক্ষার লড়াইয়ে চাই জাতীয় ঐক্য
- নিউ ইয়র্কে বন্দুক হামলার সময় কর্মরত ছিলেন না নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল
- সেরা দূরপাল্লার এয়ারলাইনের স্বীকৃতি পেলো এমিরেটস
- ডিসকভারির সাথে পার্টনারশিপে উদ্বোধন হলো অপো রেনো ১৪ সিরিজ ৫জি স্মার্টফোন
- কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু
- কালা জাহাঙ্গীরের চরিত্রে অভিনয় করবেন না শাকিব
- ৪২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরছেন টেইলর
- ‘বিচার নিয়ে আমাদের আন্তরিকতায় সন্দেহ রাখবেন না’
- ‘তাবলিগের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে কমিটি হচ্ছে’
- ঝিনাইদহের জাকির হোসেনের ম্যাজিক তেল! পোড়া ক্ষতে কাজ করে জাদুর মতো
- শীত আসতেই মুখ-হাত-পায়ে চামড়া উঠছে, কী করবেন?
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- মহুয়া বনে
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে