শেখ হাসিনা সেদিন সীমান্ত খুলে না দিলে কী হতো!

রফিকুল ইসলাম
২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইদিনের তার চোখে মুখে ছিলো এক অন্যরকম মায়া। ভাষাগত দুরত্বের পরেও মানুষকে কীভাবে কাছে টেনে নিতে হয় সেইদিন তা দেখিয়েছিলেন মানবিক প্রধানমন্ত্রী ও মমতাময়ী শেখ হাসিনা। গত ছয় বছর ধরে তার সরকার যেভাবে লক্ষ লক্ষ নারী শিশু রোহিঙ্গাকে আগলে রেখেছেন, বারবার একটা প্রশ্ন সামনে আসে- কী হতো সেদিন, যদি বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া না হতো।
রোহিঙ্গা নারীর বয়ানে শোনা যায়- চারপাশে ধোয়া। গুলি। একের পর এক গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে যেভাবে পেরেছি, পালিয়ে এসেছি। আমরা নিঃস্ব।
এই মানুষগুলো তখন এমন আস্থা খুঁজছিলেন, যারা তাদের আবারও তাড়িয়ে দিবে না। রোহিঙ্গাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমদিন কী বলেছিলেন শেখ হাসিনা? উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা তখনও পুরোপুরি হয়নি। তিনি বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি৷ ঘরবাড়ি হারিয়ে যেসব রোহিঙ্গা এখানে এসেছেন, তারা সাময়িক আশ্রয় পাবেন৷ আপনারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে৷”
একজন রিফিউজির দুঃখ-কষ্ট তিনি বোঝেন। কারণ, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি এবং তার ছোটবোন শেখ রেহানা রিফিউজি হিসেবে ছয় বছর বিদেশে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পৃথিবীর অন্যতম অত্যাচারিত এবং নিপীড়িত একটি জাতিসত্তার নাম। রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন কোনো নতুন বিষয় নয়। বিগত চার দশকের বেশি সময় বিষয়টি সাময়িক মনে করা হলেও এখন তা স্থায়ী সমস্যা হিসেবে বিরাট আকার ধারণ করেছে। সেটা বিশ্বনেতৃত্বের অজানা নয়।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে তথাকথিত আরসা নাটকের মাধ্যমে রোহিঙ্গানিধন শুরু হলে পরবর্তী কয়েক মাসে দফায় দফায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ তখন সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গা জাহাজকে ফের সাগরে ঠেলে দিতে পারেনি। অনেকে বলতে চেষ্টা করেছেন, এতো মানুষকে আশ্রয় দিয়ে বোকামি করেছে বাংলাদেশ। বলতে চেষ্টা করেছে এতে করে সার্বভৌমত্ব খর্ব হতে পারে। জঙ্গি উত্থানের শঙ্কার কথাও বলেন কেউ কেউ। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছি সেইদিন যদি সীমান্ত খুলে দেওয়ার নির্দেশ শেখ হাসিনা না বলতেন তবে কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতো। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। এছাড়া গত ৫০ বছরে আরও তিন দফায় প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে ঢুকেছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে এখন সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। প্রতিবারই সহিংসতা এড়াতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকলেও এসব সহিংসতা ও নিপীড়নের অভিযোগ সবসময়ই অস্বীকার করে গেছে মিয়ানমার সরকার।
শেখ হাসিনা সেদিন এতো মানুষের জায়গা করে দিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু ভাবেননি পরবর্তীতে কী হবে। সেসময়ে করণীয় কী সেটাই ছিলো মূখ্য। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করে বলেছিলেন, এ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া ও খাওয়ানো কোনো কঠিন কাজ নয়। নেদারল্যান্ডসের নামকরা ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন সাময়িকী তাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছিল ‘শেখ হাসিনা: মাদার অব হিউম্যানিটি’। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার সিন্ধান্ত নিয়ে লাখ লাখ নির্যাতিত মানুষের জীবন রক্ষা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনসহ স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে পাঁচ দফা এবং ৭৪তম অধিবেশনে চার দফা প্রস্তাবও রেখেছিলেন।
ক্যাম্পের আশ্রয় ব্যবস্থাপনা দেখতে এ দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা মিয়ানমারকে ওই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ ও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় দিচ্ছি আমরা। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য এখানে সাময়িকভাবে থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা আছি আর্তমানবতার সেবায়।’
সেই রাতে তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা সরকার প্রধান তার কর্তব্য মনে করেছিলেন। কিন্তু এই বিশ্ব কি তার দায়িত্ব পালন করেছে ঠিকঠাক? এরপর পার হয়ে গেছে ছয় বছর। রোহিঙ্গাদের ভালো থাকা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যতো মাথা ব্যাথা, বিশ্বমোড়লদের সেই আন্তরিকতা দৃশ্যমান নয়। ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ধনী দেশ নয়। কিন্তু যদি আমরা ১৬ কোটি জনগণকে খাওয়াতে পারি, তবে আরও ৭ লাখ মানুষকেও খাওয়াতে পারব। আসলেই তিনি তার কথা রেখেছেন। গত ছয় বছর থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গার ভরণপোষণের দায়িত্ব এভাবেই পালন করে যাচ্ছেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর বিশেষ দূত ও হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ও সহৃদয় নেতৃত্বদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। দেশে বিদেশে সকল মানবিক সরকার ও বিশিষ্টজন শেখ হাসিনার এ উদ্যোগকে এক কথায় সমর্থন যুগিয়েছে। মানবতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় সংবাদ সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস থেকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে জাতিসংঘের সাবেক দুই মহাসচিব কফি আনান ও বুট্রোস ঘালি এবং ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মার্তি আহতিসারি এই সম্মাননা পেয়েছেন।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) ১ মার্চ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা কমিয়ে মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার করেছে। পরবর্তীতে ১ জুন থেকে তা ১০ ডলার থেকে কমিয়ে ৮ ডলার করেছে যা হতাশাজনক। রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সংকট বাড়বে এবং ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ত্রানকর্মীরা। এদিকে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এখন চীনের উদ্যোগে মিয়ানমারের নেয়া পাইলট প্রকল্প, পশ্চিমা দেশ ও দাতা সংস্থার সহায়তা হ্রাস, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আত্তিকরন, রোহিঙ্গা নারী ও স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ, কিছু রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে অনীহা সব মিলিয়ে নানামুখী ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া চলছে। পরিস্থিতি যাই হোক, বাস্তবতা হলো, রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে এবং দাতাগুষ্টিকে এই সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মানবিক হতে হবে। দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে বিশ্ব মানবতাকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মানবিকতা দেখিয়েছেন সেটাকে সম্মান দেখানোর পাশাপাশি এটি বিবেচনায় নিতে হবে যে এই সমস্যা থেকে বের করে আনা বাংলাদেশের একার দায়িত্ব না।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।
পাঠকের মতামত:
- দুই দফা বেড়ে কমল স্বর্ণের দাম
- সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের ৪ জনকে দেয়া হবে পাশাপাশি কবর
- খালের পানিতে গোসলে নেমে লাশ হয়ে ফিরলেন আবদুর রহমান
- লংগদু নানিয়ারচর সড়ক নির্মাণে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত
- কাপ্তাইয়ে ইটবোঝাই ট্রাক উল্টে ৩ জন যাত্রী গুরুতর আহত
- কক্সবাজারে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়
- সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়ল
- ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে’
- ‘জোড়াতালি দিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সম্ভব নয়’
- ববি ভিসির অপসারণ আন্দোলনে শিক্ষকরা
- জাল টাকা ও ছাপানোর সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক
- বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ববি কর্মকর্তার মৃত্যু
- সালথায় পুলিশের বিশেষ অভিযান, ঢাল-কাতরাসহ আটক ৪
- কানাইপুরে ইন্টারনেট কর্মীকে কোপানো রাজিবের গ্রেফতারে প্রতিবেশীদের স্বস্তি
- বোয়ালমারীতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
- গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আরএমও’র বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
- ‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে পদত্যাগ করবো’
- ওয়ালটনের এআই, আইওটিসহ অত্যাধুনিক ফিচার সমৃদ্ধ নতুন মডেলের স্মার্ট ফ্রিজ উন্মোচন
- বাগেরহাটে বাণিজ্য মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন বিক্ষোভ
- সাতক্ষীরায় সাতনদী পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুর রহমান জেল হাজতে
- চরভদ্রাসনে গণহত্যা দিবস পালিত
- গোপালগঞ্জে গাছের সাথে পিকআপের ধাক্কা, নিহত ৩
- ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধ ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি কামনায় যশোরে মানববন্ধন
- রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, কাজের অগ্রগতি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
- পাকিস্তানে ফের হামলার আশঙ্কা, মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশ
- মাতৃ ও শিশু মৃত্যু রোধে প্রশিক্ষিত ধাত্রীর দরকার
- ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ১২
- ফরিদপুরে সেনা বাহিনীর হাতে এক ভুয়া মেজর আটক
- টুঙ্গিপাড়া কলেজের ভবন সংস্কার কাজে দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে দুদক
- নাটোরে শিশু জুঁই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জেলা জুড়ে প্রতিবাদের ঝড়
- এসএসসি পরীক্ষায় বসেছে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী
- ‘মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্ত সব দলের সঙ্গে বসে নেওয়া উচিত ছিল’
- ‘মুজিব’ সিনেমায় তিশার অভিনয় নিয়ে যা বললেন ফারুকী
- ব্রি হাইব্রিড ধানে খাদ্য নিরাপত্তার হাতছানি
- মা পদক পাচ্ছেন ডলি জহুর
- দিনাজপুরে সাবেক এমপির বাড়ি থেকে ইয়াবাসহ ১০ জন আটক
- বাড়িয়াহাটে ৬ মিষ্টি বিক্রেতার কাছ থেকে দের লাখ টাকা খাজনা আদায়
- তারা মিয়া ফকির হত্যার ঘটনায় তিনজন গ্রেফতার
- ‘বাংলাদেশ এখন আইএমএফের ওপর নির্ভরশীল নয়’
- ‘সবাই সচেতন হলেই শিশুদের জন্ম সুরক্ষিত হবে’
- রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
- চালের মোকামে ভরপুর জোগান, তবু বেড়েছে দাম
- ‘লুট করা টাকায় নাশকতার পরিকল্পনা করছে আ.লীগ’
- গাছপালাঘেরা পরিবেশে জন্ম নেওয়া শিশু স্বাস্থ্যবান হয়
- একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম ভরিতে বাড়লো ৫৩৪২ টাকা