E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কর্মকর্তাদের পদত্যাগ শুভ বার্তা নয় 

২০২৪ এপ্রিল ৩০ ১৫:৪০:৪৩
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কর্মকর্তাদের পদত্যাগ শুভ বার্তা নয় 

চৌধুরী আবদুল হান্নান


সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার পদত্যাগ বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অধিকতর ভালো চাকরির প্রত্যাশায় কোনো প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চাকরি থেকে পদত্যাগ করা অস্বাভাবিক ঘটনা নয় কিন্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের রাজকীয় মর্যাদার এবং সম্মানজনক চাকরি থেকে পদত্যাগ স্বাভাবিক বলা যায় না।

চাকরির ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় অবস্থান এবং নিশ্চিত ভবিষ্যৎ বাদ দিয়ে যারা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন, তাদের নিশ্চয়ই আলাদা হিসাব নিকাশ রয়েছে। তবে যারা ব্যাংক খাতের বর্তমান দুরবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ না পড়ে পারে না।

দেশের ব্যাংক খাতে চলমান অস্থিরতা, মাত্রাতিরিক্ত মন্দ ঋণ, ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য, ডলার ও তারল্য সংকট এবং দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান দিশেহারা অবস্থার কারণে আতঙ্কিত হয়ে কর্মকর্তারা চাকরি ছাড়ছেন বলে মনে করেন অনেকে।

কর্মকর্তাদের এমন পদত্যাগ তাদের জনবল ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো সংকট সৃষ্টি না করলেও সংস্থাটির সুদূরপ্রসারী অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।

প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীরা এখানে যোগদান করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কোনো দিন বিতর্ক বা প্রশ্ন উঠেনি।

১৯৭৭ সালে সোনালী ব্যাংকে আমার নিয়োগ পত্রটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলে ডাকযোগে পেয়েছিলাম, কোন তদবির, যোগাযোগের প্রয়োজন হয়নি; প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে হয়েছিল।

এক সময় বিসিএস, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো চাকরি বাদ দিয়ে অনেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিতে আসতেন।এখানে কর্মকর্তাদের নানাভাবে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা ছিল, সব ক্ষেত্রে মেধাবীদের প্রাধান্য ছিল।

আলোচনায় আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একটি নিজস্বতা ছিল, স্বাধীনভাবে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন; কিন্ত এখন সমালোচনা রয়েছে, পরিদর্শনসহ বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে হতাশা রয়েছে। চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত কখনও নৈতিকতা নির্ভর হয় না, আর যারা মেধাবী, স্বাধীনচেতা তারা তো ব্যাংক বিধি বহির্ভূত কর্মকান্ড সমর্থন করতে পারেন না।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম, দুর্নীতি রোধে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিমকে ইতিবাচক রিপোর্ট দিতে মাসোয়ারা দেওয়ার বিষয়টিও পত্রিকার খবর হয়েছে।

ভিতরে এমন ঘুণ পোকার বসবাস আর বাইরের অনাকাঙ্খিত চাপ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটির মেরুদন্ড দুর্বল করে দিয়েছে, যে নিজের পায়ে শক্তভাবে দাঁড়াতেই পারে না, সে কীভাবে অন্যকে পথ দেখাবে ?

যারা বিবেক বিসর্জন দিয়ে লোভনীয় পদ আঁকড়ে রাখতে প্রভাবশালীদের অনৈতিক আদেশ নির্দেশ অবলীলায় মেনে নিয়ে ন্যায়-নীতি বিসর্জন দেন, তারা মেরুদন্ডহীন, পরগাছার মতো, তাদের শিক্ষা মূল্যহীন। স্রোতে কেবল খড়কুটোই ভেসে যায়।

সোনালী ব্যাংকে দীর্ঘদিনের কর্ম অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, কর্তৃপক্ষের ব্যাংক-বিধি বহির্ভূত নির্দেশের বিপরীতে অবস্থান নিলে, সাময়িক সমস্যা হতে পারে, কিন্ত বেলাশেষে তারই বিজয় হয়।

দক্ষ, সৎ, স্বাধীনচেতা কর্মকর্তাদের আর কোনঠাসা করা নয়, তাদের সুরক্ষা দিতে হবে, তাতে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আমরা চাই, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমহিমায় ঘুরে দাঁড়াক। ঝিমিয়ে পড়া হাতি চাই না, তেজী ব্যাঘ্র চাই।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test