শিশুদের ছড়াকার আবদুল হামিদ মাহবুব

মুজাহিদ আহমদ
ছড়াকার আবদুল হামিদ মাহবুবের ছড়ার সাথে আমরা অনেক আগে থেকেই পরিচিত। খুব নরম নরম শব্দ দিয়ে নির্মাণ করেন ছড়ার শরীর। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর নরম শব্দের মোলায়েম ছড়াগুলো ছাপা হয়-আমরা পড়ি, অনেক কিছু শিখি, অনেক মজা পাই। আমরা যারা পড়তে ভালোবাসি, পত্র-পত্রিকা, বই-ম্যাগাজিন খুঁজি, নেড়েচেড়ে দেখি তাদের চোখে তো এই নাম ও চেহারা অনেক পুরনো। চেহারাটা ঠিক দাদুর মতো। অনেক অনেক মায়াবী তাঁর চেহারা। ধরে নিতে পারি ছড়ার মতোই চেহারাÑওপরের ছবির দিকে তাকালেই তা পরিস্কার! তাই-না। মিলিয়ে দেখোÑআমি ঠিক বলেছি কি-না? একদম কাশফুলরঙা চুল আর দাঁড়িতে কত্তো সুন্দর তিনি।
দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও দৈনিকের পাতায় আবদুল হামিদ মাহবুববের শিশুতোষ লেখা সমানে ছাপা হয় এবং হচ্ছে। তার একটি ছড়ার বই পর পর তিনটি সংস্করণ হয়েছিলো। বইয়ের নাম ‘শিশুর ছড়া’। এখন আর এই বই কোনো বইয়ের দোকানেই পাওয়া যায় না! কিন্তু বইখানা তো আমাদের আনন্দের জন্য পড়া প্রয়োজন। এটার নতুন সংস্করণ হওয়া দরকার। তোমরা কি বলো? নিশ্চয়-হ্যাঁ বলেছো। লেখকের কাছে আমাদের দাবী ‘শিশুর ছড়া’র নতুন ভাবে ছাপানোর।
এই লেখায় আমি আবদুল হামিদ মাহবুবের ‘শিশুর ছড়া’ বইয়ের ছোটো ছোটো ছড়া তোমাদের সাথে নিয়ে আমিও পড়বো ঠিক করেছি। বইয়ের সব ক’টি ছড়া লিখেছেনÑআমরা যারা সবেমাত্র কথা বলতে শিখেছি, দু’একটা অক্ষর জোড়া দিয়ে শব্দ তৈরি করতে পারি তাদের জন্য। মা-বাবা, বড় ভাই-বোন একটু আহলাদ করতে করতে আমাদের কানের কাছে নরম করে ছড়াগুলো উচ্চারণ করলেই- আমরা মুখে তুলে নিতে পারি এসব ছড়াÑময়না পাখি / আল্লাহ কয় / আল্লাহ সবার / সঙ্গে রয়। অনেক মজার না এই ছড়াটা? যাদের মুখে সদ্য কথা ফুটেছে, একটা শব্দ মুখ থেকে বের হলে নিজেই খুশিতে গোলাপ ফুল হয়ে যাই- তাদের জন্য দারুণ খবর এটি। তারপর দেখো আরেকটি ছড়াÑহলুদ হলুদ / গাদা ফুল / দাদুর মাথায় / সাদা চুল। ছড়াটি যেনো লেখকের চেহারা ও ছবির সাথে হুবহু মিলে গেলো। আমি তো অনেক মজা পেয়েছি, নিশ্চয়ই তোমরাও মজা পেয়েছো। চলো, আমরা একটা ছড়া লেখি লেখককে নিয়ে- ছড়াকারের / সাদা চুল / চিনতে তাই / করিনি ভুল। কী-আমরা পারিনি? নিশ্চয়ই পেরেছি। হাহাহা আমরাও কিন্তু ছড়াকার! ছড়া লিখতে পারি।
ইপু মনি / ঘুম দেয় / পরী এসে / চুম দেয়। এই ছড়াটিও ঘুমপাড়ির একটি ছড়া। বহুল পঠিত এই ছড়াটি বিভিন্ন স্কুলের নার্সারি, প্লে-গ্রুপের শিক্ষাথীদের মুখেও অনেকবার শুনেছি। তারা দল বেঁধে কোরাস করতে করতে পড়ছিলো। তারপর আরো কিছু ছড়া, যেগুলো সবসময়ই মুখে মুখে রাখার মতো-- ১. টুন টুন / ঝুন ঝুন / আয় আয় / গান শুন। ২. গায়ের মানুষ / সবাই চায় / পালকি চড়ে / বউ যায়। ৩. হাসের ছানা / মোরগ ছানা / খায় যে খুঁটে / চালের দানা। ৪. খুকুর মায়ে / ফুল তোলে / খুকু নাচে / চুল খোলে।
ছড়াগুলো বর্ণে-বাক্যে ছোটো ছোটো হলেও উদ্দেশ্য অনেক বড় ও মহৎ এবং এই জায়গায় আমাদের আলোচ্য ছড়াকার পুরোদমে সফল। কারণ এতোক্ষণ ধরে যে ছড়াগুলো পড়লাম, তোমাদের কী মনে হয়েছে? ছড়াগুলো পড়ে আমরা কি আনন্দ পাইনি? ছড়াগুলো সিলেট অঞ্চলের পলিমাটি মাখানো শব্দে যে তৈরি হয়েছে তার গন্ধ পাইনি আমরা? নিশ্চয়ই পেয়েছি। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো- একবার পড়লেই ছড়াগুলো মনের মধ্যে গেঁথে যায়। আমরা এ বিষয়টিও একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারি- টুন টুন..., হলুদ হলুদ ... বাকী অংশ না দেখে আমারা মিলাতে পারছি।আমাদের ঘুম পাড়ানির সময় মা যখন দোল দিতে দিতে মিষ্টি সুরে গুন-গুন করে এসব ছড়া শোনান তখন একদম সু-স্বাদু চকলেটের মতো মজা পাই। নিশ্চয়ই আমার সাথে তোমরাও একমত হবে। কী বলো? তাহলে আর কয়েকটা রসালো ছড়া পড়ে ছড়ার বিষয়টি সমাপ্তি দিই- ১. মামা দিলো / আমারে / লাল টুক্টুক্ / জামারে। ২. কিচির মিচির / ডাকাকাকি / ঘরে থাকে / চড়–ই পাখি। ৩. আমার সোনা / মায়ের কাছে / খেলনা গাড়ি / অনেক আছে। ৪. এতুল বেতুল / তেঁতুল টক / বাঁশের মাথায় / সাদা বক। ৫. খোকার দেখি / ফোকলা দাঁত / ফোকায় খাবে / দুধ ভাত। ৬. রাতের বেলা / চাঁদ উঠে / বাগান ভরে / ফুল ফুটে। আজকে ছড়ার বিষয়ে কথা এই পর্যন্তই। আরো ছড়া নিয়ে কথা হবে অন্য কোথাও।
এতোক্ষণ তো ছড়া নিয়ে কথা হলো। এবার ছড়াকার সম্পর্কে কিছু জানা দরকার- বাংলাদেশের ছড়া সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ছড়াকারের নাম উল্লেখ করলে প্রথম সারিতে যে কয়জনের নাম আসে তাঁদের মধ্যে ছড়াকার আবদুল হামিদ মাহবুব একজন। তিনি ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে মৌলভীবাজার জেলার ঢেউপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ আবদুল হাদী আর মাতা হুসনে আরা চৌধুরী কমল। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ছড়া দিয়েই তাঁর লেখালেখির শুরু। ছড়া লেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতায়ও বেশ মনোযোগী ছিলেন দীর্ঘ সময়। তাঁর অনেকগুলো ছড়ার বই বেরিয়েছে।
কচি কিশোর গ্রন্থ সুহৃদ থেকে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম ছড়াগ্রন্থ- মৌলভীবাজারে বন্যা’ ৮৪ প্রকাশিত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমেÑ ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে রুনা প্রকাশনী থেকে ‘হেই জনতা’, ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে আগামী প্রকাশনী থেকে ‘ডিমের ভিতর হাতি’ ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে আগামী প্রকাশনী থেকে ‘হাসি কেবল হাসি’, ২০০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ছড়া সংঘ থেকে ‘আমার ঘুড়ি’, ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে চোখ প্রকাশন থেকে ‘শিশুর ছড়া’, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে পালক থেকে ‘ছোট ছোট ছড়া’, ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক মনুবার্তা থেকে ‘বলি পটাপট’, ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে পালক থেকে ‘প্রিয় এক দেশ’, ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে পালক থেকে ‘শহরের কড়চা’, ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিভা প্রকাশ থেকে ‘শশী ঘোষ খায় ঘুষ’, ২০১০ খ্রিস্টাব্দে কোরাস থেকে ‘সাংবাদিকের হাল’, ২০১২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিভা প্রকাশ থেকে ‘নরম গরম ভাষণ’, ‘সকল দোষ নন্দ ঘোষ’, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে পালক থেকে ‘কাঁটাতারে লাশ’, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে শুভ্র প্রকাশ থেকে ‘পচাগলা রাজনীতি’, ‘রাজনীতিতে ফরমালিন’, কোরাস থেকে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ছাগল তো বেড়ে গেছে’, ‘বুম ভোলানাথ বুম’, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ‘দিনগুলো হোক ঝলমল’, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সাউন্ড বাংলা থেকে ‘ভালোবেসে জ্বালা হয়’ ২০১৭ শুভ্র প্রকাশ থেকে ‘এইদেশ একদিন জনতার হবে’ ২০১৯ সাউন্ড বাংলা থেকে ‘রক্তমাখা কাকার জামা’, ২০২০ খ্রিস্টাব্দে এবং মানুষ থেকে ‘অন্যরকম ছড়াগুলো’, ২০২০ খ্রিস্টাব্দে সপ্তডিঙ্গা থেকে ‘শেখ মুজিবের নামে’, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে কোরাস থেকে ‘শেখ মুজিবের মুখ’, ২০২২ খ্রিস্টাব্দে সপ্তডিঙ্গা থেকে ‘হরেক ফুল ফুটুক’ আর এই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে ‘খুকি খোকার ছড়া’ প্রকাশিত হয়েছে।
ছড়াকার আবদুল হামিদ মাহবুবের ছড়া, ছাড়ার বই এবং ছড়াকারের অনেক আশয়-বিষয় সম্পর্কে জানা হলো। তিনি আমাদের অনেক ভালোবেসে ছড়া লিখেন। আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। জানাই আমাদের আনন্দও... হুররেরেরেরেরে।
লেখক : প্রাবন্ধিক।
পাঠকের মতামত:
- ‘৫ আগস্ট ঘিরে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই’
- ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিতে পারে’
- শ্রীনগরে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্য সেবা
- হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা
- ‘গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে’
- ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৮৬ জন
- ১০২ এসিল্যান্ড প্রত্যাহার
- জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের
- ‘তিন মাসে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হয়েছে, এক বছরেও না হওয়ার কারণ দেখছিনা’
- পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শাহীন গ্রেপ্তার
- জামালপুরে দুই টিকিট কালোবাজারি আটক
- গোপালগঞ্জে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
- সোনাতলায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
- ফুলপুরে পরিষ্কার পরিছন্নতার বিশেষ অভিযান
- স্বাধীনতা ও জাতিসত্তা রক্ষার লড়াইয়ে চাই জাতীয় ঐক্য
- নিউ ইয়র্কে বন্দুক হামলার সময় কর্মরত ছিলেন না নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল
- সেরা দূরপাল্লার এয়ারলাইনের স্বীকৃতি পেলো এমিরেটস
- ডিসকভারির সাথে পার্টনারশিপে উদ্বোধন হলো অপো রেনো ১৪ সিরিজ ৫জি স্মার্টফোন
- কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু
- কালা জাহাঙ্গীরের চরিত্রে অভিনয় করবেন না শাকিব
- ৪২ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরছেন টেইলর
- ‘বিচার নিয়ে আমাদের আন্তরিকতায় সন্দেহ রাখবেন না’
- ‘তাবলিগের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে কমিটি হচ্ছে’
- ঝিনাইদহের জাকির হোসেনের ম্যাজিক তেল! পোড়া ক্ষতে কাজ করে জাদুর মতো
- শীত আসতেই মুখ-হাত-পায়ে চামড়া উঠছে, কী করবেন?
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- মহুয়া বনে
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে