E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শুভ অক্ষয় তৃতীয়া

দানে ধ্যানে অনন্তকালের পূণ্যলাভ

২০২৫ এপ্রিল ৩০ ১৭:৪৫:১১
দানে ধ্যানে অনন্তকালের পূণ্যলাভ

মানিক লাল ঘোষ


প্রতি বছরের বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয় তিথি অক্ষয় তৃতীয়া হিসেবে পালিত হয়। অক্ষয় তৃতীয়ার অক্ষয় শব্দটির আক্ষরিক অর্থ (যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না) অথবা (যাঁর ক্ষয় বা বিকার নেই) তৃতীয়া অর্থ (চাঁদের তৃতীয় দশা) কিন্তু অক্ষয় তৃতীয়া ব্যাপারটি কি বিভিন্ন শাস্ত্রে রয়েছে এর ভিন্নতর ব্যখ্যা।

এটি বছরের একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ পবিত্র দিন৷ ধর্মশাস্ত্র অনুসারে এই দিনে কোনো শুভকর্ম বা ভালো কাজ সম্পন্ন করলে ফলস্বরূপ কল্পনাতীত অনেক বৃহৎ ফল পাওয়া যায়। এই দিনে কোন শুভকর্ম করলে তাঁর কোন ক্ষয় হয় না, (অর্থাৎ) শেষ হয় না সেই জন্য একে (অক্ষয় তৃতীয়া) বলা হয়৷ এই দিনে ভালো কাজ করার ফলে আমাদের লাভ হয়, অক্ষয় পূর্ণ আর খারাপ কাজ করার ফলে লাভ হয় অক্ষয় পাপ৷ তাই এ দিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিৎ৷ তাই এই মহাপবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পাদন করলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে বলে হিন্দু শাস্ত্রানুসারে অক্ষয় তৃতীয়া পরম মাহাত্ম্যপূর্ণ তিথি।

এই দিন খুব সাবধানে সব কাজ করা উচিত। মানুষ আঘাত বা কষ্ট পায় এমন কাজ থেকে সবার দূরে থাকা উচিত।

মহাপুরাণগুলোর মধ্যে অন্যতম 'মৎস্য পুরাণ'। মৎস্য পুরাণে অক্ষয় তৃতীয়ার ব্রতফল সম্পর্কে বলা হয়েছে, বৈশাখ মাসের শুক্লা-তৃতীয়া তিথিতে দান-হোম-জপ যাহা কিছু করা যায়, সে সকলেই অক্ষয় হইয়া যায়।অক্ষয় তৃতীয়ায় যারা উপবাস করে, তাঁরা অক্ষয় ফল লাভ করে।তবে কৃত্তিকানক্ষত্র যুক্ত তৃতীয়া অধিক মাহাত্ম্যপূর্ণ এবংঅভীষ্ট ফলদায়ক।

।।ঈশ্বর উবাচ।।
অথান্যামপি বক্ষ্যামি তৃতীয়াং সর্বকামদাম্।
যস্যাংদত্তং হুতং জপ্তং সর্বং ভবিত চাক্ষয়ম্।।
বৈশাখশুক্লপক্ষে তু তৃতীয়া যৈরুপোষিতা।
অক্ষয়ফলমাপ্নোতি সর্বস্য সুকৃতস্য চ।।
সা তথা কৃত্তিকোপেতা বিশেষনে সুপূজিতা।
তত্র দত্তং হুতং জপ্তং সর্বক্ষয়মুচ্যতে।।
অক্ষতৈস্তু নরাঃ স্নাত্বা বির্ষ্ণোর্দত্ত্বা তথাক্ষতান্।
বিপ্রেষু দত্ত্বা তানেব তথা শক্তূন্ সুসংস্কৃতান্।
যথান্নভুষ্মহাভাগঃ পলমক্ষয়মপ্নুতে।।
একামপ্যুক্তবৎ কৃত্বা তৃতীয়াং বিধিবন্নরঃ।
এতাসামপি সর্বাসাং তৃতীয়ানাং ফলং ভবেৎ।।
তৃতীয়ায়াং সমভ্যর্চ্য সোপবাসো জনার্দনম্।
রাজসূয়ফলং প্রাপ্য গতিমগ্রাঞ্চ বিন্দতি।।
(মৎস্যপুরাণ: ৬৫.১-৭)

"ঈশ্বর বললেন, অনন্তর অপর এক সর্বকামদায়িনী তৃতীয়া তিথির বিষয় বলছি। এ তিথিতে দান, হোম, জপ যা কিছু করা যায়, সে সকলই অক্ষয় হয়ে যায়। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীয় তৃতীয়া তিথিতে যে সকল ব্যক্তি উপবাস করে, তারা নিখিল সুকৃতি সঞ্চয়ের অক্ষয় ফল লাভ করে।

এ তৃতীয়া তিথি কৃত্তিকানক্ষত্রে অন্বিতা হলে সবিশেষ প্রশস্ত হয়। তাতে দান, হোম বা জপ যে কিছু করা যায়, তা সকলই অক্ষয় ফলজনক বলে শাস্ত্রে কীৰ্ত্তিত।

এ তিথিতে ব্রতকারিণী রমণীর সন্ততি ও সুকৃতি অক্ষয় হয়ে থাকে। নরগণ অক্ষত দ্বারা স্নান করে বিষ্ণুকে অক্ষত ও বিপ্রবর্গকে সুসংস্কৃত ছাতু প্রদান করে স্বয়ং যথানির্দিষ্ট অন্ন ভোজন করলে মহাসৌভাগ্যশালী হয়ে অক্ষয় ফল প্রাপ্ত হয়।

নর বিধিপূর্ব্বক উল্লিখিতরূপে এক- বার মাত্র অক্ষয়তৃতীয়াব্রত করলেও সমস্ত অক্ষয়তৃতীয়াব্রতের ফল লাভ করে। এ তৃতীয়ার উপবাস করে জনার্দনকে অর্চনা করলে মনুষ্য রাজসূয় যজ্ঞের ফল লাভ করে দেহান্তে উত্তম গতি পাপ্ত হয়।"

এদিন যেসকল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল-

১/ এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম আবির্ভুত হন পৃথিবীতে।

২/ এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।

৩/ এদিনই গণপতি গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।

৪/ এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।

৫/ এদিনই সত্যযুগের সূচনা হয়।

৬/ এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।

৭/ এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুঃখ মোচন করেন।

৮/ এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং সখী কৃষ্ণাকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ। শরনাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।

৯/ এদিমে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।

১০/ কেদার-বদরী-গঙ্গোত্রী-যমুনত্রীর যে মন্দির শীতকাল ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।

১১/ এদিনই সত্যযুগের শেষ হয়ে প্রতি কল্পে ত্রেতা যুগ শুরু হয়।

অনেক তাৎপর্য বহনকারী এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এইদিনে সবার সতর্কতার সাথে প্রতিটি কাজে হাত দেয়া উচিত। তাই জাগতিক কল্যাণ ও পাপমোচন আসুন এই বিশেষ দিন থেকে আমরা সবাই চিন্তা - চেতনায় কল্যাণমুখী হই, ভাগবত পাঠ শ্রবন,, গুরুসেবা, ধ্যান, দান ও ঈশ্বর চিন্তায় বেশী করে মনোযোগী হই আর এমন শুভকাজ সম্পন্ন করি যা আমাদের অমর করে রাখবে মানুষের মুখে মুখে সুখে দুঃখে। সবাইকে শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার শুভেচ্ছা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহ সম্পাদক।

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test