E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা অশুভ শক্তির পাঁয়তারা

২০২৫ মে ২৮ ১৭:২৮:১৯
স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা অশুভ শক্তির পাঁয়তারা

চৌধুরী আবদুল হান্নান


১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের একটানা ১৫ বছরের দুঃশাসনের ফলে দলটি আজ জনধিকৃত, নির্বাসিত। লড়াই করেছিল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশের আপামর জন সাধারণ কিন্ত আওয়ামী লীগ দাবি করে এসেছে, স্বাধীনতা অর্জন তাদের একক কৃতিত্ব। দলটির এমন অহংকার তাদের পতনের মূল কারণ। তারা তো ডুবলোই, রাষ্ট্রটাকেও প্রায় অকার্যকর করে গেল। বিগত পতিত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সীমাহীন দুর্নীতি আর প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে তারা দ্রুত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। অল্প সময়ের যুদ্ধে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি কিন্ত এর বিনিময়ে ক্ষয়ক্ষতি আর আত্মত‍্যাগ ছিল সীমাহীন।

বহু ত‍্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার প্রতি এত অবজ্ঞা, অপমান কেন? এ সরকার বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানে না, কী দরকার পড়েছিল এ কথা বলার? কী লাভ হয়েছে তাতে? অপরাধ করেছে একটি রাজনৈতিক দল, স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষের কী অপরাধ? ‘৭১-এ জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনকে অস্বীকার করে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি গ্রহণযোগ‍্য হতে পারে না।

মুক্তযুদ্ধের সময় দুই-একটি রাজনৈতিক দল স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেছেন, এখন তাদেরই কন্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাচ্ছি।

কিছু তরুণ নেতাদের মুখে স্বাধীনতা বিরোধী কথা উচ্চারিত হওয়ায় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থে হলেও এ জাতীয় বক্তব‍্যের জন‍্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে, অন‍্যথায় জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের সমর্থন হারাবেন তারা।

হঠাৎ বিজয়ের অতি আনন্দ আর আবেগে কত কথাই না মুখ থেকে বের হতে পারে এবং তাতে কেউ কষ্ট পেলে দুঃখ প্রকাশ করা মহত‍্বের লক্ষণ, আর প্রকৃত বিজয়ীরা মহৎ হয়ে থাকেন।

যারা স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে ব‍্যবসা করেছন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ইস‍্যু করার মাধ‍্যমে বিপুল অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন, এ বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করতে পারতেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের সহযোগীদের মুখোশ উম্মোচন করে দিলে তারা দ্রুত জনগণের আরও কাছে পৌছাতে পারতেন।

যারা জালিয়াতি, প্রতারণা ও অসত‍্য তথ‍্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারি চাকুরি করেছেন, ভাতা নিয়েছেন সেই গ্রহণকৃত অর্থ আদায় করাসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব‍্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ‍্যোগ দেখা যায়নি।

একটি রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়া থেকে উদ্ধারের দরজা খুলে দিয়েছিল তরুণ শিক্ষার্থীরা, ছাত্র-জনতার প্রত‍্যাশার প্রতীক বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। বলা হয়েছিল, এ সরকার ব‍্যর্থ হলে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে যাবে। এখন ভাবতে হচ্ছে, আমাদের স্বপ্ন কতটুকু টিকে আছে?

এখতিয়ার বহির্ভূত কাজে হাত দেওয়া, বাড়তি ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, কখনও কখনও মাত্রা জ্ঞানের অভাব প্রসূত কর্মকান্ডসহ নানা কারণে সরকার ইতোমধ‍্যে তীব্র সমালোচনার মুখে। এতদিনে তাদের কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে কিনা তা দৃশ‍্যমান নয়।

স্মরণ রাখা জরুরি—যারা নিজেরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব‍্যর্থ হয়, তাদের অন‍্যের নির্দেশনা মেনে নিতে বাধ‍্য হয়।

স্বাধীনতাকে, বঙ্গবন্ধুকে যারা ব‍্যবসার পূঁজি বানিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা নেওয়া চলছে এবং তাতে কারও আপত্তি নেই কিন্ত একই সাথে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান কেন? কন‍্যার অপরাধে পরলোকগত পিতাকে অপরাধী বিবেচনা করা সুস্থ মনের প্রকাশ নয়। আর স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে এখন কী লাভ হবে? আমরা কি পিছনে ফিরতে পারবো?

মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত স্হাপনা ও ভাস্কর্য ধ্বংসের তান্ডব কেউ মেনে নেবে না আর মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে আপসও হবে না। জাতির পিতার স্মৃতি, অবদান যারা মুছে দিতে চান তারা সফল হবেন না। বরং যুগে যুগে আলো ছড়াবে তাঁর রেখে যাওয়া অবিনাশি কীর্তি।

ব্রিটিশরা এদেশে এসে অবাক হয়ে প্রত‍্যক্ষ করেছিল, ভারতবর্ষের মানুষের অদ্ভুত চরিত্র, কলহপ্রিয় এবং একজন আরেক জনের পিছনে লেগেই থাকে। চতুর ব্রিটিশ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ২ শতাব্দি ভারতবর্ষ শাসন-শোষণের সুযোগ নিতে সক্ষম হয়েছিল এবং এমন ভাবে দেশ ভাগ করে দিলো যাতে কলহ জিইয়ে থাকে। ব্রিটিশ বুদ্ধি!

পৃথিবীর বুকে আমরা এখন মর্যাদাশীল স্বাধীন জাতি। বিদেশিরা এখন নেই, আমাদের শাসন আমাদেরই হাতে, দেশ আমরাই গড়বো।

হিংসা আর প্রতিশোধের নোংরা রাজনীতি পরিহার করে সকলে মিলেমিশে বসবাস করার মানসিকতা কি আমরা তৈরি করতে পারি না ?

এমন একটা ভাবনা নিয়ে আমাদের তরুণরা আর একবার জেগে উঠবে এবং প্রকৃত বিজয় অর্জন করে জাতিকে ঐক‍্যের পথ প্রদর্শন করবে, এটাই আমাদের প্রত‍্যাশা।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব‍্যাংক।

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test