E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পঁচনের ভাগাড়ে এবং..!

২০২৫ জুন ১৮ ১৭:৩১:৫১
পঁচনের ভাগাড়ে এবং..!

রহিম আব্দুর রহিম


পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য এখন পর্যন্ত কোন বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারি নি। তবে শ্রষ্টার নানাবিধ আবিষ্কার কাহিনী সৃষ্ট পৃথিবীর আনাচে-কানাচে, আকাশে বাতাসে কিংবা নানা ধর্মের নানান জনের মুখে মুখে কখনও রসালু, আবার কখনও ধারালোভাবে উচ্চারিত হয়ে আসছে। ইসলাম ধর্মালম্বীদের যেমন আজাজিলের শয়তান হবার কাহিনী কন্ঠস্থ। এই আজাজিল জ্বীন জাতি, আল্লাহতালার খুবই পছন্দের সৃষ্টি, এরপরও শ্রষ্টা শখের বশে পৃথিবীতে মানব জাতি সৃষ্টি করেন। যে সৃষ্টিকে শ্রেষ্ঠ আখ্যায়িত করে আল্লাহ-তালা জ্বীন আজাজিলকে নির্দেশ দেন, নতুন সৃষ্টি মানবকে সেজদা দিতে। আজাজিল তাতে নারাজ। মাটির তৈয়ারি মানবকে নূরের তৈয়ারি আজাজিল সেজদা করতে পারে না। 

স্রষ্টার শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানবকে সেজদা না করায় আজাজিলকে শয়তান করে পৃথিবীতে পাঠান। এবার শয়তান আল্লাহকে বলেন, হে খোদা সারা জীবন আমি তোমার ইবাদত করেছি, তোমার কথা শোনেছি, কোন আদেশ, নির্দেশ অমান্য করেনি। একটি আদেশ পালন করিনি বলে তুমি আমাকে শয়তান করে পৃথিবীতে পাঠালে। আমি তোমাকে একদিন প্রমাণ করে দেবো, তোমার শখের শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানবজাতি আমার চেয়েও খারাপ। শুরু হলো মানবকূলের সাথে শয়তানের স্নায়ুযুদ্ধ। শয়তান একদিন সকালবেলা, তিল পরিমান মিঠাই (গুড়/ মিষ্টি) একব্যক্তির দরজার পাশে লাগিয়ে দিয়ে শয়তান খোদার নিকট হাজির। খোদা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার শয়তানি রেখে আমার কাছে কেনো? এবার শয়তান বললো, আজ তোমাকে প্রমাণ করে দেবো আমি খারাপ, নাকি তোমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ খারাপ। আমি তোমার সাথেই অবস্থান করবো, কোথাও যাবো না। খোদা তাকে তার কাছে অবস্থান করার সুযোগ দিলেন।

অন্যদিকে দরজায় লাগানো মিঠাই (গুড়)খেতে পিঁপড়রা সারিবদ্ধ হয়ে আসা যাওয়া শুরু করলো, পিঁপড়ে খেতে আসছে টিকটিক, টিকটিক শিকারে আসতে শুরু করে ইঁদুর, ইঁদুর ধরতে যেই না বিড়াল লাফ দেয় অমনি বাড়ির মালিকের দুধভর্তি মাটির পাত্র পড়ে ভেঙ্গে চুরমার। দরিদ্র মানুষ, এই দুধ বিক্রি করে তাঁর সরকার চলে। চিন্তিত স্ত্রী শোকে কাতর। মালিক এসে জানতে পারে বিড়াল তাদের সর্বনাশ করেছে, দুধের পাত্র ভেঙ্গে যাওয়ায় দুধ বিক্রি করার সুযোগ নেই।ক্ষুব্ধ মালিক স্ত্রীর উপর চড়াও, হাতের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত, ঘটনাস্থলে স্ত্রীর মৃত্যু। শয়তান এবার খুশিতে আটখানা, খোদাকে বলতে শুরু করলো, সব খারাপ কাজ তো আমিই করি, আমি তো তোমার এখানেই- এবার তো তোমার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষই তো মানুষ খুন করলো। আল্লাহ এবার শয়তানকে বললেন, আমার মানুষ কখনও মানুষ খুন করতে পারে না। তুই শয়তান দরজায় মিঠাই লাগানোর ফলেই এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই গল্পের সাথে আজকের প্রসঙ্গ মেলানোর দায়িত্ব পাঠকের। মূল প্রসঙ্গে যাবার পূর্বে আরও একটি কাহিনী উপস্থাপন করছি।

ইসলাম ধর্মে ফেরেস্তা জীবরাইল (আঃ) এবং সনাতন ধর্মের নারদ মণি দেবতার কাহিনী সবারই জানা আছে। জিবরাইল (আঃ) এমন এক ফেরেস্তা, যিনি পৃথিবীর সকল প্রাণ-প্রাণির দুঃখ, কষ্ঠ,সুখ-শান্তি, অভাব অটন, চাওয়া পাওয়ার কথা আল্লাহর নিকট পৌঁছে দেন। আবার আল্লাহর দেওয়া রহমত, বরকত পৃথিবীর প্রাণিকূলের নিকট প্রেরণ করার দায়িত্বটুকু পালন করেন জীবরাইল (আঃ) অর্থাৎ এই ফেরেস্তা মিডিয়া হিসেবে কাজ করে। যাকে আমরা সংবাদদাতা হিসেবে জানি। হিন্দু ধর্মালম্বীরা যাকে নারুদ মনি দেবতা হিসেবে পূজা অর্চনা দিয়ে থাকে। যে যাই বলুক না কেনো, কোন দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার চালানোর জন্য স স ক্ষেত্রে যেমন একজন সুদক্ষ পরিচালকের প্রয়োজন রয়েছে, তেমন পরিচালক এর সাথে তার অধীনস্ত সদস্যদের চাওয়া-পাওয়া, শোক-দুঃখ জানানোর জন্য মিডিয়ার প্রয়োজন অনিবার্য। আর এই ধরণের গবেষণার মাধ্যমে পৃথিবীতে অবতারণ হয়েছে মিডিয়ার।

প্রাচীনকালে হাটে বাজারে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে লোকজন একত্রিত করে মানুষের মাঝে সংবাদ প্রচার করা হতো। রাজার কাছে রাজার সংবাদ, রাজদরবারের দূত দ্বারা প্রেরণ করা হতো। মজার বিষয়, এই সংবাদ বাহক যুদ্ধাবস্থায় উভয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বাঁধার সম্মুখীন হতেন। একই কায়দায় সংবাদ মিডিয়ার সাথে জড়িতরা কালে কালে যুগে যুগে সর্বাবস্থায় অবাধ আসা -যাওয়া করতে পারতো।৫ আগস্ট ২০২৪ এ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশের আনাচে কানাচে সাংবাদিকদের একটি বৃহৎ অংশ ফ্যাসিস্ট সরকারের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ দেশ ত্যাগ করেছে। কোন কোন জায়গায় প্রেসক্লাব দখলে নিয়েছে ফ্যাসিস্ট বিরোধী অন্য একটি গ্রুপ। প্রশ্ন থেকে যায়, সাংবাদিকরা কি আসলেই ফ্যাসিস্টের দালাল, নাকি কোন শয়তান চক্রের শয়তানীর কারণে প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, দক্ষ দেশপ্রেমী এবং মানবদরদী অসংখ্য সাংবাদিক আজ ফ্যাসিস্টদের দালাল ট্যাগ গায়ে মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

সম্প্রতি দেশের উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের দখলমুক্ত করে অন্যদল প্রবেশ করে। এই নিয়ে উত্তেজনা, রাস্তায় বেরিকেড। ১৪৪ ধারা, প্রেসক্লাবে সীললগালা। আমরা কতটা নিচে নেমেছি!
যা বলতে চেয়েছি, সাংবাদিকদের লেখনিকর্ম বা ভাষ্য সংবাদপত্র, ইথার কিংবা বেতারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র যন্ত্রের কাছে প্রজাকূলের আবেদন নিবেদন পৌঁছানোর পবিত্র দায়িত্ব পালন করা। সৃষ্টির অপূর্ব এই পৃথিবীর চতুর্থস্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম। অথচ এই মাধ্যমটি আজ বিতর্কিত,কলঙ্কিত। এরজন্য আসলে কে বা কারা দায়ী? এমন প্রশ্নের উত্তর আসে একশ্রেণির সুবিধাবাদী দুষ্ট চক্র মিডিয়ায় প্রবেশ করার ফলে আজ সংবাদমাধ্যম, সংবাদদাতা বা সাংবাদিকরা বিতর্কিত হচ্ছে। সাংবাদিক কোন কালেই সকলের বন্ধু হতে পারি নি, পারবেও না। তবে যারা দুষ্টু, নষ্ট এরা সাংবাদিকতার নামে সমাজ রাষ্ট্রের কলঙ্ক লেপনে করতে দ্বিধা করে না, করবেও না। সংবাদ মাধ্যম নিরপেক্ষ হতে পারে না। এই মাধ্যমটি সত্য, সুন্দর, ন্যায় ভিত্তিক ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র গঠনের পক্ষের পথ অবলম্বন করে। তবে মিডিয়ার সকল কর্মী, কর্মচারি, কর্মকর্তা, পাঠকরা নিজ নিজ আদর্শ লালন এবং পালন করেন। এই আদর্শ লালন-পালনের অর্থ এই নয় যে, তারা পক্ষপাত দুষ্টু। এই আদর্শ লালনের অবাধ স্বাধীনতাই গণতান্ত্রিক অধিকার।

তবে কেনো সাংবাদিকদের বারবার ট্যাগ লাগানো হচ্ছে, এই দলের, সেই দলের দালাল।মনে রাখতে হবে ঐ ব্যক্তিই সত্যিকার সাংবাদিক যিনি তার আদর্শের ব্যক্তি, মানুষ বা দলের ভাল কাজের একবার প্রশংসা করলে মন্দ কাজের শতবার সমালোচনা করে। অন্ধভাবে কাউকে সমর্থন করে দল-কানা, দল-দাস হয় না। জ্ঞান, শিক্ষা, বিদ্যা, তথ্য, সত্য, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, চেতনা ও পারদর্শিতা বহির্ভূত কোন কিছুকেই সমর্থন করে না আদর্শিক কোন সাংবাদিক। মনে রাখতে হবে, আজ যাকে দুষ্টু বলে ট্যাগ লাগিয়ে আমি শিষ্ট হতে চাচ্ছি, একদিন এমন তো হতে পারে এই দুষ্টুই একদিন আরও ভয়ংকর রূপে হাজির হতে পারে আপনার এবং আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চলার পথে। যে মস্তিষ্কে ভবিষ্যৎ ভাবনা অনুপস্থিত সে মস্তিষ্ক পঁচনের ভাগাড়ে।

লেখক : নাট্যকার ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test