অতিরিক্ত জনসংখ্যা নিয়ে ভাবছে পুরো বিশ্ব

ওয়াজেদুর রহমান কনক
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস আধুনিক বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক দিবস হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি এই দিনটির প্রস্তাবনা গ্রহণ করে, যার মূল প্রেক্ষাপট ছিল ১৯৮৭ সালের ১১ জুলাই—যেদিন বিশ্বের জনসংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে ৫০০ কোটি অতিক্রম করেছিল। তখন থেকেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহল।
বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৮১০ কোটি ছুঁই ছুঁই করছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে যে বিশ্ব জনসংখ্যা ৮০০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ১৯৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ২৫০ কোটি, যা মাত্র ৭০ বছরের মধ্যে তিনগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষ পৃথিবীতে যুক্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যদি বর্তমান প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব জনসংখ্যা ৯৭০ কোটির বেশি হতে পারে।
এই বিপুল সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিতে হচ্ছে খাদ্য, পানি, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোকে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে এবং ২০০ কোটির বেশি মানুষ নিরাপদ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির পর্যাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রতি বছর ৫ বছরের নিচে বয়সী প্রায় ৫০ লাখ শিশু প্রতিরোধযোগ্য কারণে মারা যায়, যার একটি বড় অংশ জনসংখ্যা বিস্ফোরণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর দেশের জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক সাড়ে সাত কোটি, যা ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৭ কোটি ছাড়িয়েছে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১২০০ জনের বেশি মানুষ বাস করছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনও প্রায় ২০ শতাংশ দম্পতি আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আওতায় আসে না। শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার চাপের কারণে বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, যা নগর পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কর্মসংস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেই বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ বাস করছে। এই অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়ন, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতিকে আরও কার্যকর করতে হবে। উন্নততর স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, শিশু বিয়ে ও কিশোরী গর্ভধারণ রোধ—সবই একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস তাই কেবল একটি আনুষ্ঠানিক দিবস নয়, এটি মানবিক দায়িত্ববোধ ও পরিকল্পিত উন্নয়নের বার্তা বহন করে। এই দিনে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মসূচি, সেমিনার, বিতর্ক, আলোচনা সভা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মূল লক্ষ্য—প্রতিটি মানুষের সুস্থ, সুরক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
এভাবে জনসংখ্যা দিবস মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে প্রতিটি নতুন মুখের সঙ্গে নতুন সম্ভাবনা যেমন জড়িয়ে আছে, তেমনি রয়েছে দায়িত্বও—সংসাধনের, সংরক্ষণের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বিশ্ব এখন বহুমুখী সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ৬১০ কোটি, যা মাত্র দুই দশকে বেড়ে ৮০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৪.৩ জন মানুষ পৃথিবীতে যুক্ত হচ্ছে, আর প্রতি বছর গড়ে ৮ থেকে ৯ কোটি নতুন মুখ পৃথিবীর চাহিদার ভার বহন করছে। এই প্রবল চাপের প্রধান শিকার হচ্ছে পৃথিবীর সীমিত সম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হচ্ছে বা অপচয় হচ্ছে, অথচ এখনও প্রায় ৭০ কোটি মানুষ প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে শিশু অপুষ্টির হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি। পানি সরবরাহ সংকটও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে—জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কোন না কোনভাবে নিরাপদ পানির অভাবে পড়বে। বর্তমানে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানির পর্যাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত, আর ৪২০ কোটি মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের বাইরে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো বস্তি সম্প্রসারণ ও শহরায়ণ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৫ লাখ মানুষ নতুন করে কোনো না কোনো শহরে চলে যাচ্ছে। এখন বিশ্বের ৫৫ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করছে, যা ২০৫০ সালের মধ্যে ৬৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এভাবে শহরের বস্তি এলাকাগুলো দ্রুত অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে, যার ফলে কলেরা, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, হেপাটাইটিসের মতো রোগ ছড়াচ্ছে।
শিক্ষা খাতেও জনসংখ্যা চাপ বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। UNESCO-এর পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে এখনও প্রায় ২৫ কোটি শিশু বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের হার সবচেয়ে বেশি। শিক্ষা অবকাঠামো, শিক্ষক স্বল্পতা, শিক্ষার মানের সংকট—সবই এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত।
পরিবেশের ওপরও এর বিরূপ প্রভাব স্পষ্ট। প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি হেক্টর বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে নতুন বসতি, কৃষিজমি বা শিল্পকারখানা তৈরির জন্য। International Energy Agency (IEA)-এর তথ্যমতে, বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা প্রতি বছর গড়ে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে, যার প্রধান কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এর ফলে কার্বন নির্গমন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ প্রতি বছর প্রায় ৩৬ বিলিয়ন টন ছাড়িয়ে গেছে।
বেকারত্বের হারও সরাসরি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত। International Labour Organization (ILO)-এর তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি মানুষ বেকার। প্রতি বছর নতুন শ্রমশক্তি হিসেবে প্রায় ৪ কোটি মানুষ যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য খাতে বিপুল চাপে রয়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো। প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ নবজাতক জন্মের ২৮ দিনের মধ্যেই মারা যায়, যার একটি বড় অংশ অপরিকল্পিত গর্ভধারণ ও সঠিক স্বাস্থ্যসেবা না থাকার ফল। প্রসূতি মৃত্যুর হারও এখনও অনেক দেশে উচ্চ, বিশেষত সাব-সাহারান আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায়।
সবচেয়ে গভীর আশঙ্কার জায়গা হলো—যত বেশি জনসংখ্যা, তত বেশি শক্তি, খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও বাসস্থানের চাহিদা। অথচ পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৯৩ বিলিয়ন টন প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন করা হচ্ছে, যা ১৯৭০ সালের তুলনায় তিনগুণ বেশি। এভাবে অরণ্য উজাড়, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণ দিনকে দিন চরমে পৌঁছাচ্ছে।
এই বিপুল পরিসংখ্যান একটাই বার্তা দেয়—যদি এখনই পরিকল্পিত পরিবার, নারীশিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর না দেওয়া হয়, তবে মানবজাতি অদূর ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি তাই আর কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি এখন টিকে থাকার এক জরুরি সমীকরণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের গুরুত্ব গভীর ও বহুমাত্রিক। স্বাধীনতার পর মাত্র কয়েক দশকে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মানুষের সংখ্যা ছিল আনুমানিক সাড়ে সাত কোটি, যা এখন ১৭ কোটি ছাড়িয়েছে। জনসংখ্যার এই দ্রুত বৃদ্ধি দেশের সীমিত ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অবকাঠামোর ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১২০০ জনের বেশি মানুষ বাস করছে, যা বিশ্বে বিরল। এই বিপুল মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। একদিকে কৃষিজমির পরিমাণ ক্রমশ কমছে, অন্যদিকে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের চাপে নতুন সমস্যার জন্ম হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল মহানগরীগুলোর একটি। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসে জীবিকার সন্ধানে। এর ফলে শহরের বস্তি ও অনানুষ্ঠানিক বসতি সম্প্রসারণ অবধারিত হয়ে উঠেছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও দারিদ্র্যের শিকড় আরও গভীর করছে।
স্বাস্থ্যখাতে জনসংখ্যার চাপ সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হচ্ছে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্যে। দেশে এখনও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ঘটে, যা মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক মৃত্যুর একটি বড় কারণ। কিশোরী মেয়েদের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার এখনও আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। ফলে কিশোরী মাতৃত্বের হারও বেশি, যা পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনও প্রায় ২০ শতাংশ নারী আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারছে না। অনেকে সচেতনতার অভাবে, অনেকে সামাজিক ও ধর্মীয় ধারণাজনিত কারণে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করছে না। ফলে বড় পরিবারের সংখ্যা বেশি থাকছে, যা দারিদ্র্যচক্র থেকে বের হতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শিক্ষা ও কর্মসংস্থান খাতও জনসংখ্যার চাপের তীব্রতা টের পাচ্ছে। প্রতি বছর লাখ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। দেশে বছরে প্রায় ২২ থেকে ২৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। ফলে বেকারত্ব ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজের হার ক্রমে বেড়েই চলেছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের ওপরও চাপ বাড়ছে। বনভূমি উজাড়, জলাশয় ভরাট, নদীর তীরে অবৈধ দখল, পাহাড় ধ্বংস—সবই মানুষের আবাস ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তারের চাপে ঘটছে। এর ফলে জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
এ প্রেক্ষাপটে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস বাংলাদেশে শুধু একটি আনুষ্ঠানিক দিবস নয়, এটি একটি বার্তা বহন করে—পরিকল্পিত পরিবার, নারীর ক্ষমতায়ন, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা, নিরাপদ মাতৃত্ব এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার গুরুত্ব বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। এই দিবসটি পরিবার পরিকল্পনা, নারীস্বাস্থ্য ও উন্নয়ন নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশকে জনসংখ্যার চাপে সম্ভাবনাকে শক্তিতে রূপান্তর করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, টেকসই স্বাস্থ্যখাত ও শিক্ষা খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আরও মনোযোগী হতে হবে। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস সেই সমষ্টিগত দায়িত্ববোধ ও করণীয়কে নতুন করে মনে করিয়ে দেয়, যেন এই জনসংখ্যা অভিশাপ না হয়ে সম্ভাবনায় রূপ নেয়।
বাংলাদেশের প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়ে ভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের মধ্যে সামান্য পার্থক্য থাকলেও সামগ্রিক চিত্রটি স্পষ্ট—দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও জনবহুল দেশগুলোর একটি হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) যে সর্বশেষ জনগণনা করেছে, তাতে দেশের মোট জনসংখ্যা দেখানো হয় প্রায় ১৬ কোটি ৯৮ লাখের বেশি। এই গণনার পর থেকেই বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হার বিবেচনায় ধরা হচ্ছে প্রতি বছর প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। ফলে ২০২৫ সালে সরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫০ লাখ থেকে ১৭ কোটি ৬০ লাখের মধ্যে দাঁড়িয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
জাতিসংঘ, Worldometer, World Population Review, Macrotrends ও World Bank-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনগুলোতেও একইরকম পূর্বাভাস পাওয়া যায়। Worldometer-এর হিসেবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৫৬ লাখের কাছাকাছি। Macrotrends পূর্বাভাস দিয়েছে প্রায় ১৭ কোটি ৬৪ লাখ। অন্যদিকে World Bank ২০২৩ সালের হিসাবে দেখিয়েছে প্রায় ১৭ কোটি ১৪ লাখ, আর ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সেই সংখ্যা ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করছে। এসব তথ্য থেকে বোঝা যায়, সরকারি গণনা কিছুটা কম হলেও আন্তর্জাতিক হিসাবমতে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা আরও কিছুটা বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই চিত্র নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এ বৃদ্ধির ফলে খাদ্য, আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে। সীমিত ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের দেশে এত বিপুল মানুষের ভার বহন করা ক্রমেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে—যা বৈশ্বিক মানদণ্ডে অত্যন্ত উচ্চ।
জনসংখ্যা বিষয়ে নীতি-নির্ধারকরা মূলত BBS-এর সরকারি তথ্যকেই ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে দেশের ভেতরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ব্যবস্থায় এখনও গড়পড়তা ত্রুটি থাকার কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো Worldometer, UN DESA বা World Bank-এর আপডেটেড ডাটার ওপরও নির্ভর করে থাকে। ফলে বাংলাদেশের প্রকৃত জনসংখ্যা বলতে সরকারি হিসেবে ১৭ কোটি, আর বাস্তবে ১৭ কোটি ৫০–৬০ লাখই এখন কার্যত গ্রহণযোগ্য ধরা হচ্ছে।
এ সংখ্যাটি কেবল সংখ্যা নয়, এটি দেশের অর্থনীতি, নগরায়ণ, কর্মসংস্থান, পরিবার পরিকল্পনা, জলবায়ু অভিযোজন, খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক। জনসংখ্যার নির্ভুল হিসাবের সঙ্গে জড়িত থাকে প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট নির্ধারণ, জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন। তাই এ সংখ্যা কত, কোথায় কত মানুষ বসবাস করছে—তা জানা শুধু পরিসংখ্যান নয়, টিকে থাকার, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার এক অপরিহার্য শর্তও।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।
পাঠকের মতামত:
- ঝিনাইদহের জাকির হোসেনের ম্যাজিক তেল! পোড়া ক্ষতে কাজ করে জাদুর মতো
- সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনের দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন
- ঝিনাইদহে দোসরা আগস্ট পর্দা উঠছে রেডিয়েন্ট প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের
- ১০টির বেশি সিম থাকলে ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেবে বিটিআরসি
- স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সভা
- গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল
- বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদের বাসা থেকে সোয়া ২ কোটি টাকার চেক উদ্ধার
- ইসরায়েল পদক্ষেপ না নিলে সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য
- রাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প, দেশে দেশে সুনামি সতর্কতা
- গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় মামলা
- ফরিদপুরে রাতের অন্ধকারে একটি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ভাঙচুর
- ‘শুল্ক কমানোর সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ’
- বৃহস্পতিবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
- ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জরুরি সংস্কার চায় বিএনপি’
- ‘জুলাই সনদের খসড়া বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক’
- ‘সরকার অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে’
- লংগদুতে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত
- সাতক্ষীরা সদরের ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু
- সাতক্ষীরায় শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি সভা অনুষ্ঠিত
- ফরিদপুরে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার, ইয়াবা উদ্ধার
- সিলেটে ডঃ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের সভা অনুষ্ঠিত হয়
- কুড়িগ্রামে জুলাই সংগঠক জোবায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
- এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের কঠিন প্রতিপক্ষ
- নতুন ভোটার হচ্ছেন ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার
- আগস্টের শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা
- শীত আসতেই মুখ-হাত-পায়ে চামড়া উঠছে, কী করবেন?
- বেলকুচিতে জনমত জরিপে এগিয়ে বদিউজ্জামানের মোটরসাইকেল
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- মহুয়া বনে
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ