স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা: বাংলাদেশের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
.jpg)
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো তার জনসংখ্যা। তবে এই জনসংখ্যা যদি অপরিকল্পিতভাবে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়, তবে তা সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশে একাধিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়টিও গভীরভাবে জড়িত। জনসংখ্যার চাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারে এবং নাগরিকদের মৌলিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই তিনটি বিষয়—জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা—একটি ত্রিমাত্রিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই প্রবন্ধে জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার সম্পর্ক, বিদ্যমান সমস্যা, সরকারি উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় বিশ্লেষণ করা হবে।
জনসংখ্যার চিত্র: একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা
বাংলাদেশ বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। ২০২৫ সালের হিসেব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১,২০০ জনেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জন্মহার কিছুটা কমেছে, তবুও জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যার বৃদ্ধি আমাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যসেবা সংকট এবং কর্মসংস্থানের অভাব—সবকিছু মিলে এই জনসংখ্যা এখন আশীর্বাদের চেয়ে অভিশাপ হয়ে উঠছে। বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চল ও শহরের বস্তিগুলোতে জনসংখ্যা ঘনত্বের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়েছে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র: অর্জন ও দুর্বলতা
স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ অনেক অর্জন করলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমলেও তা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি আজও কঠিন। শহর কেন্দ্রীক চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে পল্লী অঞ্চলের মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করলেও তা জনসংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট নয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব প্রকট। করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন—ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসার ইত্যাদির হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। অন্যদিকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কলেরা, টাইফয়েডের মতো সংক্রামক রোগ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
সুরক্ষা ব্যবস্থার সংকট: জনস্বাস্থ্য ও মানবিক নিরাপত্তা
জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সুরক্ষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বিশুদ্ধ পানি, পুষ্টিকর খাবার, স্যানিটেশন, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ পরিবেশের অভাব জনসাধারণের জীবনমানকে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে ফেলছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘটনা জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বস্তিবাসী, গৃহহীন এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীসহ সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষজন স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
নারী ও শিশুরা নির্যাতন, মানবপাচার ও যৌন সহিংসতার মতো নিরাপত্তা ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী প্রকল্প থাকলেও কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ।
জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার পারস্পরিক সম্পর্ক
এই তিনটি বিষয় পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জনসংখ্যা যত বাড়বে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ ততই বাড়বে, যা মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। আবার স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে জনসংখ্যার মানসম্মত বিকাশ সম্ভব নয়।
অসুস্থ, অপুষ্ট, অশিক্ষিত ও অসচেতন একটি জনসংখ্যা জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় জোরদার করা সময়ের দাবি।
সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনা
বাংলাদেশ সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে:
পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম
সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ফ্যামিলি প্ল্যানিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
গর্ভনিরোধক সরঞ্জাম সহজলভ্য করা হয়েছে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ (UHC)
২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সক্রিয় করা হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি
বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা
টেলিমেডিসিন, ই-হেলথ কার্ড ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজ করা হচ্ছে।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ
তবে এখনো অনেক বাধা রয়েছে, যেমন:
অসচেতনতা: এখনও বহু মানুষ পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব বোঝে না।
শিক্ষার অভাব: স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নয়।
দুর্নীতি ও অপচয়: স্বাস্থ্যখাতের বাজেটের যথাযথ ব্যবহার হয় না।
অপর্যাপ্ত জনবল: গ্রামীণ এলাকায় ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি রয়েছে।
প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা: ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় এখনও বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
ভবিষ্যৎ করণীয়
১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়ানো
গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
২. স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি
বাজেটের একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনায় বরাদ্দ দিতে হবে।
৩. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিস্তার
ইউনিয়ন পর্যায়ে আরও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন ও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন।
৪. নারী ও শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে।
শিশুবিবাহ ও যৌন সহিংসতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় আগাম সতর্কতা ও সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই,জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা—এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ছাড়া বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা যদি জনসংখ্যাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করি এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমাদের জনগণই হবে উন্নয়নের শক্তি। সরকারের পাশাপাশি সকল নাগরিকের সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জনসংখ্যা হবে সম্পদ, বোঝা নয়—এই লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক : চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পাঠকের মতামত:
- ফরিদপুরে রাতের অন্ধকারে একটি সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ভাঙচুর
- ‘শুল্ক কমানোর সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ’
- বৃহস্পতিবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা
- ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জরুরি সংস্কার চায় বিএনপি’
- ‘জুলাই সনদের খসড়া বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক’
- ‘সরকার অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে’
- লংগদুতে সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত
- সাতক্ষীরা সদরের ডিবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু
- সাতক্ষীরায় শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি সভা অনুষ্ঠিত
- ফরিদপুরে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার, ইয়াবা উদ্ধার
- সিলেটে ডঃ আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের সভা অনুষ্ঠিত হয়
- কুড়িগ্রামে জুলাই সংগঠক জোবায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
- এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের কঠিন প্রতিপক্ষ
- নতুন ভোটার হচ্ছেন ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার
- আগস্টের শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা
- শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট, র্যাংকিংয়ে টানা উন্নতি
- বোয়ালমারীতে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- পাংশায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
- সালথায় ৬০টি চায়না দুয়ারী জাল জব্দ, এক জেলের জরিমানা
- শ্রীমঙ্গলে জমি দখলকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ
- ‘ভাসানী না হলে শেখ মুজিব তৈরি হতো না’
- ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা, সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
- সুবিধা বঞ্চিত প্রকৃত ভুক্তভোগীরা, ধরা ছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠনগুলি
- আদমদীঘি উপজেলা পরিদর্শনে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার
- ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবির গুলিতে ৩ জন নিহতের ঘটনায় সাড়ে ৬ বছর পর মামলা
- শীত আসতেই মুখ-হাত-পায়ে চামড়া উঠছে, কী করবেন?
- বেলকুচিতে জনমত জরিপে এগিয়ে বদিউজ্জামানের মোটরসাইকেল
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- মা
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- মহুয়া বনে
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা