E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গোপালগঞ্জের মানুষ কি মানুষ না?

২০২৫ জুলাই ১৭ ১৭:২৭:২৫
গোপালগঞ্জের মানুষ কি মানুষ না?

শিতাংশু গুহ


কন্ফুসিয়াস বলেছিলেন, ‘প্রতিশোধ নিতে চাইলে দু’টি কবর খুঁড়ে রেখো’। ড. ইউনুস কবর খুঁজছেন শেখ হাসিনা’র জন্যে, তাঁর নিজের-টাও খুঁড়ে রাখা উচিত। সকালবেলা (১৬ই জুলাই ২০২৫) গোপালগঞ্জের হত্যাযজ্ঞ দেখে তাৎক্ষণিক লিখেছিলাম, সেনাবাহিনী ৫ই আগষ্ট ২০২৪- উন্মত্ত ছাত্র-জনতার ওপর গুলী চালায়নি, কিন্তু গোপালগঞ্জে নিরীহ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করেছে। এনসিপি, বিশেষত: সারজিস আলম ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ দিলো ১৬ই মার্চ, ১৫ই মার্চ সেনাবাহিনীর ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে পৌনে দুই মিনিটের একটু বেশি একটি ভিডিও প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে তাঁরা ‘জুলাই আন্দোলনের’ পক্ষে? নইলে ‘আমি কে. তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার’-এমন শ্লোগান গ্লোরিফাই করার কোন কারণ থাকতে পারেনা। 

গোপালগঞ্জ কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল উত্তেজনা ছড়ানোর জন্যে। এজন্যে এনসিপি যমুনা ঘেরাও করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছে। গোপালগঞ্জ অভিযান নির্বাচন বানচালের জন্যে। এখনকার সকল কর্মসূচি নির্বাচন ঠেকানোর জন্যে। গোপালগঞ্জের মানুষ এমনিতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা’র অন্ধ সমর্থক, এই দুর্গ ভাঙ্গাও মব সন্ত্রাসীদের অন্য একটি লক্ষ্য। কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনী সেইসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করে যাচ্ছে। গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী হিন্দু ও আওয়ামী লীগারদের বাড়ী বাড়ী আক্রমন করেছে, নির্বিচারে অত্যাচার করেছে। ১৯৭১-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা টার্গেট করে হিন্দু ও আওয়ামী লীগ মেরেছিলো, এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাজাকার এনসিপি একই কায়দায় মাঠে নেমেছে।

ড. ইউনূসের আমলে সবদিক থেকেই বাংলাদেশে ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ফলাফলও তো একই হওয়া কথা, তাই না? এর একটু নমুনা দেখা গেল নাহিদ-সারজিসের সেনা ট্যাঙ্কে পলায়ন। এ থেকে ফাইনাল পলায়নের দৃশ্য কিছুটা আন্দাজ করা যায়? অবশ্য যদি সেই সুযোগ থাকে। পুলিশ পাহারা না থাকলে এঁরা জনরোষে ভস্ম হয়ে যাবে। গোপালগঞ্জ ঘটনার জন্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সারজিস, হাসনাত, নাহিদ গং দায়ী। এদের সহায়তা করার জন্যে ড. ইউনুস ও জামাত দায়ী। এটি ড. ইউনূসের আর একটি ‘মেটিক্যুলাস’ প্ল্যান। গোপালগঞ্জে ঠিক কতজন মারা গেছে বলা কঠিন, সেটা ৪ থেকে ২৫, বা আরো বেশি হতে পারে, এবং প্রায় সবাই নিহত হয়েছে গুলিতে। আহতের সংখ্যা অগণিত।

পুলিশ-মিলিটারীর নৃশংস ব্যবহারে মনে হলো যে, ‘গোপালগঞ্জের মানুষ, মানুষ না’? নিহত রমজানকে ক’জনা পুলিশ-মিলিটারি ধরে নিয়ে গেলো, এরপর তিনি গুলিতে নিহত হলেন কিভাবে? নিহত দীপ্ত সাহার মুখের ওপর সামরিক বাহিনীর বুটের ছবিটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। একটি মৃতদেহ তাচ্ছিল্যভাবে ট্রাকে ওঠানোর দৃশ্যটি নির্মম। পুলিশ-মিলিটারি একটু বেশি উৎসাহ নিয়ে গোপালগঞ্জে হিন্দু পিটাতে পেরেছে। মিলিটারি রমজানের গলায় পা-চেপে ধরা ছবিটি অমানবিক। মিলিটারির অমানবিক আচরণে প্রশ্ন উঠবে, এই সেনারা কি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে স্থান পাওয়ার যোগ্য? এ প্রশ্নও উঠছে, এই সেনাবাহিনীর কি আদৌ দরকার আছে? সেনাবাহিনীর চরিত্র পাকিস্তানী বাহিনীর মতোই?

ভবিষ্যতে ১৬ই জুলাই ‘গোপালগঞ্জ গণহত্যা দিবস’ হিসাবে পালিত হবে, ইতিমধ্যে এ দাবি উঠেছে। হয়তো গোপালগঞ্জ থেকেই এবার প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হলো। গোপালগঞ্জ ঘটনার পুরো তথ্য এখনো স্পষ্ট নয়, যতই দিন যাবে, এ ঘটনা সরকরের সাজানো তা ততই স্পষ্ট হবে। জামাত-এনসিপি, সরকার এবং ব্যক্তি ইউনুস এ দায় থেকে রেহাই পাবেন না? ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এ নিয়ে হত্যা মামলা হবে, তিনি হবেন হুকুমের আসামী, অন্য টোকাইরা হবে প্রত্যক্ষ আসামী। আবার কন্ফুসিয়াসের কথা দিয়েই শেষ করি, শেখ হাসিনা’র ওপর ৪শ’ হত্যা মামলা হয়েছে, আপনাদের ওপরও হবে?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test