E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রংপুরের ঘটনা ফের প্রমান করলো বাংলাদেশে হিন্দুরা মুসলমানের সাথে থাকতে পারবে না!

২০২৫ জুলাই ২৯ ১৭:৪২:৪০
রংপুরের ঘটনা ফের প্রমান করলো বাংলাদেশে হিন্দুরা মুসলমানের সাথে থাকতে পারবে না!

শিতাংশু গুহ


আবার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে তৌহিদী জনতা রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ১৮টি হিন্দুবাড়ী ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পুরুষ-মহিলা নির্বিচারে সবাইকে বেদম প্রহার করেছে। মানুষ আতঙ্কে একাত্তরের মত গ্রামছাড়া হচ্ছে। এটি ঘটেছে প্রকাশ্য দিবালোকে, পুলিশের সামনে। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে, যদিও উত্তেজনা কমেনি। প্রথম আলোর ভাষ্যমতে বাইরে থেকে লোক এসে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মানুষ জড় করে হিন্দুবাড়ীতে আক্রমন চালায়। প্রতিটি ঘটনার সাথে লুটপাট থাকে। থাকে মন্দির ভাঙ্গা, মহিলাদের সম্মানহানি। একাত্তরে ১০০% হিন্দুবাড়ী লুট হয়েছিলো। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা সবার আমলে লুটপাট হয়েছে। জাতি গণভবন লুটপাট দেখেছে। কোন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান-উপজাতি, আদিবাসী কিন্তু লুটপাটে অংশ নেয়না। হিন্দুরা জঙ্গী হয়না। 

রিট পলিটেনিক ২৩-২৪ সেশনের কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের ৩য় বর্ষের ছাত্র রঞ্জন রায়-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নবী মুহাম্মদের বিরুদ্ধে ‘কটূক্তি’ করেছেন। পুলিশ ছেলেটিকে গ্রেফতার করে, বলা হচ্ছে, তা না হলে ওকে পিটিয়ে মেরে ফেলতো। রঞ্জনের বিরুদ্ধে কলেজের মেইন গেটে রবিবার দুপুর ১টায় প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকা হয়, তবু প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু আগের রাতেই তারা রঞ্জনকে গ্রেফতার করে? রঞ্জনের ফেইসবুক দুই সপ্তাহ আগে খোলা হয়েছে। তিনি আদৌ সেটি খুলেছেন কিনা, বা অন্যকেউ খুলেছেন কেজানে? বিবিসি বলেছে, যেহেতু এটি ভেরিফাইড পেইজ নয়, তাই রঞ্জন নবীকে অপমান করেছেন কিনা তা প্রমান সাপেক্ষ। বিবিসি আরো বলেছে, ধর্ম অবমাননার যত ঘটনা ঘটেছে এর প্রায় পুরোটাই প্রমান করা যায়নি।

এবারের রংপুরের ঘটনার পর সরকার ও আইন -শৃঙ্খলা বাহিনী চুপ। সচরাচর তারা চুপ থাকতে পছন্দ করেন, পরে বিবৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির দেশ? এটি শুধু এই সরকার নন, অতীতের সকল সরকার এটি করেছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে রাজনৈতিক যোগসাজস থাকে। সরকার ও প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন মদত থাকে, সবাই চায় হিন্দু খেদাতে। বাংলাদেশের মুসলমান হিন্দুদের সহ্য করতে পারেনা। তারা চায়না হিন্দুরা থাকুক। বাংলাদেশের হিন্দুরাও আর মুসলমানের সাথে থাকতে চায়না। এভাবে কতকাল থাকা যায়? বেশিরভাগ মুসলমান স্বীকারই করেন যে হিন্দুরা অত্যাচারিত? আপনারা ভাবছেন আমি ঢালাওভাবে মুসলমানের কথা বলছি কেন? কারণ গত ৫৪ বছরে হিন্দুরা বঞ্চনা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কিচ্ছু পায়নি (তবে অতিশয় ক্ষুদ্রাতি-ক্ষুদ্র ক্ষমতাহীন একটি গ্রূপ এর বাইরে)।

ধর্মের অবমাননা নামক ‘ইসলামী মৌলবাদী অত্যাচার’ শুরু হয়েছে ২০১২-তে রামু থেকে। যেই উত্তম বড়ুয়া ধর্ম অবমাননা করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁকে আজো পাওয়া যায়নি। তৌহিদী জনতা উত্তম বড়ুয়ার নামে নিজের ধর্মকে অবমাননা করে। ফলশ্রতিতে গ্রামের পর বৌদ্ধগ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। কুমিল্লায় ইকবাল দেবীদুর্গার পায়ে কোরান রেখে ধর্মের অবমাননা করেছিল, ১৯টি জেলার হিন্দুদের ওপর নেমে এসেছিলো তান্ডব। নাসিরনগরে জাহাঙ্গীর ধর্মের অবমাননা করেছিলো পুরো শহরের হিন্দু বাড়ীগুলো আগুনে পুড়িয়ে ছাই হয়েছিল। এর কোনটা’র কিন্তু বিচার হয়নি, শেখ হাসিনা বিচার করেননি। ২০০১-র পর হিন্দুদের ওপর যে নারকীয় অত্যাচার হয়, খালেদা জিয়া এর বিচার করেননি। এমন কি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেও এর বিচার করেননি। সবাই বলেছেন বাংলাদেশে চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান!

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test