E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

তিস্তা সেচ প্রকল্প: কৃষি, অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি

২০২৫ আগস্ট ১২ ১৭:৫৫:০৩
তিস্তা সেচ প্রকল্প: কৃষি, অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি

ওয়াজেদুর রহমান কনক


বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে সেচ ব্যবস্থা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দেশের মোট কৃষি জমির প্রায় ২৫ শতাংশ সেচযোগ্য হলেও বাস্তবে সেচ সুবিধা পাওয়া যায় মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে, যা দেশের খাদ্য উৎপাদন ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ২০-৩০ শতাংশ বেশি, যেখানে গত পাঁচ বছরে তিস্তা অঞ্চলে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। কৃষকদের গড় আয়ও প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মাসিক ১৫ হাজার টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। তিস্তা সেচ প্রকল্প স্থানীয় শ্রমবাজারে প্রায় ৫০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ প্রায় ৩৫ শতাংশ। এই প্রকল্প দেশের কৃষি উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করলেও, সুবিধা বণ্টন ও পরিবেশগত টেকসইতায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

বাংলাদেশের কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের জীবিকা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। খাদ্য নিরাপত্তা ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। তিস্তা সেচ প্রকল্প দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে সেচ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন ও আয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তবে প্রকল্পটির কার্যকারিতা, সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে একটি বিস্তৃত ও তথ্যভিত্তিক বাস্তবতা নিরুপণ আবশ্যক।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এই এলাকায় ধান উৎপাদন গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের অন্যান্য সেচবিহীন অঞ্চলের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। প্রকল্পের ফলে সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত কৃষকরা বছরে একবারের পরিবর্তে দুই-তিনবার ফসল তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মাধ্যমে কৃষকদের গড় বার্ষিক আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে গড় মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার টাকার ওপরে, যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ১২ হাজার টাকার নিচে।

তিস্তা সেচ প্রকল্প শুধু কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেনি, স্থানীয় অর্থনীতিতেও সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। প্রকল্পটি কৃষি কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে ৫০ হাজারেরও বেশি সরাসরি ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ প্রায় ৩৫ শতাংশ, যা নারী অর্থনৈতিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক সিগন্যাল। স্থানীয় বাজারে কৃষিপণ্যের সরবরাহ বেড়ে ১৫ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়ে কৃষি পণ্যের বাজার মূল্য স্থিতিশীল হয়েছে।

তবে প্রকল্পে সুবিধার বণ্টন সবসময় সমান নয়। বড় জমির মালিকগণ তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধাভোগী। গবেষণায় দেখা গেছে, বড় কৃষকের প্রায় ৭৫ শতাংশ সেচ সুবিধা পেয়েছেন, যেখানে ক্ষুদ্র কৃষকের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ। এ কারণে সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। প্রান্তিক ও নারী কৃষকদের অংশগ্রহণ কম হওয়ায় তাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সেচ সুবিধার ন্যায়সংগত বণ্টন ও প্রান্তিকদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করাই প্রকল্পের টেকসইতার প্রধান চ্যালেঞ্জ।

পরিবেশগত প্রভাবও প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। সেচ ব্যবস্থাপনায় জলক্ষয়ের হার বর্তমানে প্রায় ১২ শতাংশ, যা অপচয়ের দিক থেকে উদ্বেগজনক। মাটির পুষ্টি ও উর্বরতা রক্ষায় সঠিক সেচ পদ্ধতি গ্রহণ অপরিহার্য। বন্যা ও খরার নিয়ন্ত্রণে প্রকল্পের ভূমিকা ইতিবাচক, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেচের টেকসইতা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ জরুরি।

প্রশাসনিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে। বিগত পাঁচ বছরে দুর্নীতি অভিযোগ কমেছে ১৫ শতাংশ, যা প্রশাসনিক স্বচ্ছতার বৃদ্ধি নির্দেশ করে। স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ সফলতা অর্জন করেছে, তবে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা ও দক্ষতার প্রয়োজন। সরকারি পরিকল্পনা দলিল অনুসারে, প্রকল্পের আর্থিক ব্যবহার ও সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কঠোর তদারকি প্রয়োজন।

মিডিয়া ও জনমতের বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্থানীয় জনগণের অধিকাংশ প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব স্বীকার করছেন। সরকারি এবং স্বাধীন সমীক্ষায় প্রায় ৮২ শতাংশ কৃষক তিস্তা সেচ প্রকল্পকে তাদের জীবনে উন্নয়নের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে কিছু কৃষক সেচ ব্যবস্থাপনার দীর্ঘস্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও পানি সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও মতামত ছড়িয়ে পড়লেও, তথ্যভিত্তিক গণমাধ্যমে প্রকল্পের ইতিবাচক দিকগুলো ব্যাপক প্রচারিত হচ্ছে।

বর্তমান সময়ে জল সম্পদের সুষম ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সুরক্ষায় সেচ প্রকল্পগুলোর টেকসইতা নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদীর প্রবাহ ও জলস্তর অনিশ্চিত হয়ে পড়ায়, সেচ প্রকল্পের কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে। তাই ডিজিটাল প্রযুক্তি ও স্মার্ট সেচ ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করে অপচয় হ্রাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি করাই জরুরি। এছাড়া প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, আর্থিক নির্ভরযোগ্যতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সার্বিকভাবে, তিস্তা সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এটি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষকের আয়ের ধারাবাহিকতা ও স্থানীয় অর্থনীতি প্রসারে অবদান রাখছে। তবে প্রকল্পের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশগত টেকসইতা, সুবিধার ন্যায়সঙ্গত বণ্টন, নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা অপরিহার্য।

বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে সেচ ব্যবস্থা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দেশের মোট কৃষি জমির প্রায় ২৫ শতাংশ সেচযোগ্য হলেও বাস্তবে সেচ সুবিধা পাওয়া যায় মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে, যা দেশের খাদ্য উৎপাদন ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ২০-৩০ শতাংশ বেশি, যেখানে গত পাঁচ বছরে তিস্তা অঞ্চলে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। কৃষকদের গড় আয়ও প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মাসিক ১৫ হাজার টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। তিস্তা সেচ প্রকল্প স্থানীয় শ্রমবাজারে প্রায় ৫০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ প্রায় ৩৫ শতাংশ। এই প্রকল্প দেশের কৃষি উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করলেও, সুবিধা বণ্টন ও পরিবেশগত টেকসইতায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

তথ্যের উৎসের নির্ভুলতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিরূপণ গবেষণা ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি যে তথ্যগুলো প্রদান করেছি, তা মূলত বাংলাদেশের সরকারি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত প্রতিবেদন, একাডেমিক গবেষণা এবং বিশ্বস্ত মিডিয়া রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিবেদন ও পরিকল্পনা দলিল থেকে সেচ প্রকল্পের আয়তন, উৎপাদনশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য সাধারণত নিয়মিত আপডেট হয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই এগুলো অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য। তবে কখনো প্রশাসনিক বিলম্ব বা তথ্য সংগ্রহের সীমাবদ্ধতার কারণে তথ্যের সময়োপযোগিতা বা সম্পূর্ণতা প্রভাবিত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), আন্তর্জাতিক জল ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট (IWMI), বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এ ধরনের প্রকল্পের ওপর বিশদ গবেষণা ও পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে। এই সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনগুলো ব্যাপক ক্ষেত্রসমীক্ষা ও তথ্য বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত হওয়ায় এগুলোও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য। একাডেমিক গবেষণাপত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনাও তথ্য সংগ্রহের একটি শক্ত ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে তথ্যের মান যাচাই করার জন্য পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। তবে এসব গবেষণার ক্ষেত্রে কখনো কখনো সময় বা পরিসর সীমাবদ্ধতার কারণে তথ্য সর্বব্যাপী নাও হতে পারে।

স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়া রিপোর্ট প্রকল্পের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে সাহায্য করে, কিন্তু কখনো পক্ষপাত বা তথ্যের অতিরঞ্জনের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই মিডিয়া তথ্য যাচাই ও তুলনা করা জরুরি। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, এনজিও, কৃষক সমিতি থেকে সংগৃহীত ক্ষেত্রভিত্তিক তথ্য প্রকৃত অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যান দেয়, যদিও এই তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী।

পাঠকের মতামত:

১২ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test