E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বছর পূর্তি 

কেমন আছে শেখ হাসিনা-বিহীন বাংলাদেশ? 

২০২৫ আগস্ট ১২ ১৮:১৮:০৮
কেমন আছে শেখ হাসিনা-বিহীন বাংলাদেশ? 

শিতাংশু গুহ


শেখ হাসিনা নেই এক বছর, কেমন আছে বাংলাদেশ? একবাক্যে সবাই বলবে, ভাল না। ব্যতিক্রম আছে, জামাত-এনসিপি বলবে, ভালই তো? বিএনপি আমতা আমতা করবে, কারণ চোখ তার নির্বাচনের দিকে, যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে হবে! যাবে কি? বলা শক্ত। আওয়ামী লীগ দেশে নাই, নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, নির্বাচন কি হবে? হলেই বা কেমন হবে সেই নির্বাচন, নির্বাচন কি ড. ইউনূসের নেতৃত্বে হবে, নাকি অন্য কারো নেতৃত্বে? নির্বাচন করার জন্যে জাতীয় সরকার হবে কি? আসুন, আমরা একবছর আগের বাংলাদেশটা দেখার চেষ্টা করি!

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ইউনূসের উত্থান মানুষকে একরাশ ‘অলীক’ স্বপ্ন দেখিয়েছিলো। বেশকিছু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিলো। এক বছরের মাথায় স্বপ্ন টুটে গেছে, কঠোর ও নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে মানুষ দিশেহারা। প্রথমে বলা হয়েছিলো, ছাত্র-জনতার স্বত:স্ফূর্ত আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ড. ইউনুস নিজেই বলেছেন, একটি ‘মেটিক্যুলাস’ পরিকল্পনার মাধ্যমে শেখ হাসিনা’র পতন ঘটানো হয়েছে। পরিকল্পনায় জড়িত ছিলো জামাত, আমেরিকার ডিপষ্টেট, আইএসআই, কাতার, তুরস্ক ও চীন। বর্তমান ইউনুস সরকার চালাচ্ছে জামাত। স্মরণ আছে নিশ্চয়, সেনাপ্রধান ৫ই আগষ্ট শেখ হাসিনা চলে যাবার পর প্রথমে জামাতের আমীরকে ডেকেছেন, সেটি কোন ভুল ছিলোনা।

গ্লোবাল বেঙ্গলী হিন্দু কোয়ালিশন ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৪ দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্ভবত: প্রথম বলেছিলো, ইউনুস সরকার অবৈধ। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে, কিভাবে অবৈধ। তাদের উত্তর ছিলো, এই সরকার যে সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে শপথ নিয়েছে সেই সংবিধানে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’-এর কোন বিধান নেই, সুতরাং এই সরকার অবৈধ। বাংলাদেশ হাইকোর্ট ১৭ই ডিসেম্বর ২০২৪-এ ‘তত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুন্:প্রতিষ্ঠা করলেও অন্তর্বর্তী সরকার বৈধ হয়ে যায়না। দেশের বিচারিক আদালত অবশ্য এর খেসারত দিয়েছে, মব ভায়োলেন্স একসাথে ১২জন বিচারককে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সবই নিয়তি, যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে মেরেধরে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়, সেদেশে ‘অপমানে হতে হবে সবারই সমান’ তাইনা?

এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারেনা, হওয়া উচিত নয়? কারণ এই সরকার নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নয়, অথচ নির্বাচনটি হওয়া উচিত একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নির্দলীয় নয়। হিজবুর তাহরীর, ইসলামী আন্দোলন এই সরকারের অংশীদার। জামাত এই সরকার পরিচালনা করছে। ফেব্রুয়ারী ২০২৫-এ গঠিত এনসিপি বা কিংস পার্টি সরকারের দল। সুতরাং এই সরকার নির্দলীয় নয়। জিয়া-এরশাদ দু’জনই ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, তাদের অধীনে কোন সুষ্ঠূ নির্বাচন হয়নি, একইভাবে ইউনূসের অধীনেও কোন সুষ্ঠূ নির্বাচন হবেনা। কেননা তিনিও জিয়া-এরশাদের লাইন ধরেছেন। একই কারণে এই সরকার নিরপেক্ষ নয়!

একটি অন্তর্বর্তী বা তত্বাবধায়ক সরকার স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচন দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকে, এই সরকার নির্বাচন না-করতে বা যতটা সম্ভব পেছাতে অঙ্গীকারাবদ্ধ, এবং নির্বাচন পেছাতে নানান কৌশল নিচ্ছে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে, তথাকথিত ‘সংস্কার’। কিসের সংস্কার, কার সংস্কার? একটি অনির্বাচিত সরকারের কাজ নয় সংস্কার করা, নির্বাচিত সরকার প্রয়োজনে সেটি করবে। অন্তর্বর্তী বা তত্বাবধায়ক সরকারের লক্ষ্য থাকা উচিত সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ-সুষ্ঠূ নির্বাচন করা, এই সরকার যেকোন উপায়ে দেশের সর্ববৃহৎ দল ‘আওয়ামী লীগ’-কে নির্বাচনের বাইরে রাখতে সচেষ্ট। তাহলে সেটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হবে কিভাবে?

স্পষ্টত: দেশের মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে চলে গেছে। সরকার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। দেশে জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সরকারের একজন উপদেষ্টা বাংলাদেশে শরীয়াভিত্তিক ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করে একটি টুইট করেছিলেন, তিনি সশস্ত্র যুদ্ধের কথাও বলেছিলেন, পরে সেটি তিনি ডিলিট করে দেন? এই সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছেন। সরকারের উপদেষ্টা বলছেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলা-প্রশাসন ভেঙ্গে পড়েছে। দেশে বিচার নাই, মিডিয়া নাই, পুলিশ থেকেও নাই, প্রশাসন নাই, সরকার ‘মব ভায়োলেন্সের’ মাধ্যমে এর মতলব হাসিল করছে, এবং মব-ভায়োলেন্সকে বৈধতা দিচ্ছে। প্রতিটি মব ভায়োলেন্সের পেছনে কোন না কোন উপদেষ্টার ইন্ধন রয়েছে। এর দায়িত্ব ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে নিতে হবে বৈকি।

নির্বাচন প্রশ্নে বিষয়টি স্পষ্ট যে, দেশের মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠূ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, তবে সেটি হতে হবে একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী বা তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, ড. ইউনসু সরকারের অধীনে নয়। সুতরাং ড. ইউনূসের আন্ডারে কোন নির্বাচন নয়! শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ এক বছরে গহীন অন্ধকারে পতিত হয়েছে। চারিদিকে শুধু অনিয়ম, হত্যা, খুন, ধর্ষণ আর চাঁদাবাজি। এঁরা মেরেছে, চাদর জন্যে পাথর মেরে হত্যা করেছে, দিনেদুপুরে চাপাটি দিয়ে সাংবাদিক হত্যা করেছে। ড. ইউনুস নিজেই বলেছেন, দেশ যুদ্ধাবস্থায়। তিনি কার সাথে যুদ্ধ করবেন? তিনি বাংলাদেশকে ‘সিরিয়া’ বানাতে চান। তিনি থাকলে বাংলাদেশ ‘গাজা’য় পরিণত হবে? তিনি নাকি সেন্টমার্টিন, লালমনিরহাট দিয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর, ‘মানবিক করিডোর’ দিতে চান? দেশটা ইউনূসের বাপের!!

মানুষ শুনেছে শেখ হাসিনা ভারতের সাথে গোলামীর চুক্তি করেছেন। গত এক বছরে তাঁরা সেরকম একটি চুক্তিও হাজির করতে পারেননি। অথচ তিনি ‘গোপন’ বাণিজ্য চুক্তি করেছেন। তলে তলে তিনি দেশ কতটা বেঁচে দিয়েছেন, সেটি টের পাওয়া যাবে তিনি বিদায় হলে। শেখ হাসিনার আমলে নাকি ২৬হাজার ভারতীয় চাকুরী করতো, এখন পর্যন্ত একজনও খুঁজে দেখতে পারলো না? শেখ হাসিনা যদি খারাপ হয়, . ইউনুস তাহলে বদমাইশ। শেখ হাসিনা স্বৈরাচার, ইউনুস স্বৈরাচারের বাপ। শেখ হাসিনার আমলে ১৬ বছরে ২০বিলিয়ন ডলার লোপাট হয়েছে, ড. ইউনূসের এক বছরে ২০ বিলিয়ন খোয়া গেছে। পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে সকল সরকার রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করেছে। শেখ হাসিনা করেছেন, তিনি মরেছেন। ড. ইউনুস করছেন, তিনি মরবেন। পার্থক্য হচ্ছে, শেখ হাসিনা’র ফেরার সম্ভবনা উজ্জ্বল। ড. ইউনুস গেলে আর ফিরতে পারবেন না। হয়তো ড. ইউনূসের নাম মীরজাফরের সাথেই উচ্চারিত হবে।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১২ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test