E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বদরুদ্দীন উমর: জাতির ইতিহাসবিরোধী এক জ্ঞানপাপীর সমাপ্তি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৭:২৮:৫৯
বদরুদ্দীন উমর: জাতির ইতিহাসবিরোধী এক জ্ঞানপাপীর সমাপ্তি

আবীর আহাদ


বাংলাদেশের ইতিহাস রচিত হয়েছে রক্ত, অশ্রু ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে। সেই ইতিহাসের কেন্দ্রে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের অমর গাঁথা। অথচ বদরুদ্দীন উমর নামের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী জীবনের শুরু থেকে মৃত্যু অবধি এই ইতিহাসকেই কলঙ্কিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যু জাতিকে এক বিভ্রান্ত ও বিদ্বেষপরায়ণ কণ্ঠস্বর থেকে মুক্তি দিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের ষড়যন্ত্র, বঙ্গবন্ধুকে ভারতের দালাল, এমনকি বঙ্গবন্ধুকে “আত্মসমর্পণকারী” এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নাকি "৯০% ভাগ ভুয়া" হিসেবে চিত্রিত করা- এসবই বদরুদ্দীন উমরের কলমের কুৎসিত নির্যাস। তাঁর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তী রাজনীতি গ্রন্থের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের দোসররা যে যুক্তি দিত, উমর সারা জীবন সেই যুক্তিকেই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি কেবল মুক্তিযুদ্ধকে খাঁটো করেননি, জাতির আত্মত্যাগকেও অপমান করেছেন।

ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তিনি একই বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে কারাগারে থেকেছেন। আবার ৫২ সালে কারাগার থেকে আন্দোলনের রণকৌশল নির্ধারণ করেছিলেন, অথচ উমর তাঁর পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি বইয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা আড়াল করে ফেলেন। উল্টো তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাদের ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরেন। এটি ইতিহাস নয়, বরং হীনমন্যতা ও পরশ্রীকাতরতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বদরুদ্দীন উমরের পিতা বেঙ্গল মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবূল হাশিম বঙ্গবন্ধুকে অশেষ স্নেহ করতেন, সমীহ ও মূল্যায়ন করতেন- মূলত: এটাই ছিলো বদরুদ্দীনের গাত্রদাহ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে তাঁর কলমে কখনো শ্রদ্ধা বা ইতিবাচক শব্দ পাওয়া যায়নি। সর্বদাই বিদ্বেষ, হেয় প্রতিপন্ন করার ব্যর্থ চেষ্টা এবং রাজনৈতিক বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে। তাঁর লেখায় বঙ্গবন্ধুর নাম আসলেই সেখানে অপমান, বিকৃতি আর মিথ্যার ছড়াছড়ি দেখা যায়। এর মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শিবিরের মানসিক দাসত্বকেই স্থায়ী করেছেন।

বামপন্থার ছদ্মবেশে তিনি আসলে ছিলেন জাতীয়তাবিরোধী ষড়যন্ত্রের মুখপত্র। মূলত: সমাজতন্ত্র তথা মার্কসবাদকে কলুষিত করার ব্রত নিয়ে একজন মার্কসবাদীর ছদ্মাবরণে তিনি তাঁর যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। এজন্য তাঁকে "পেন্টাগনপন্থী কম্যিউনিস্ট" বলে আখ্যায়িত করা যায়। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ভূমিকা তিনি রাখেননি। বরং তাত্ত্বিক শব্দচাতুর্যের আড়ালে স্বাধীনতার চেতনাকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালান। যেমন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে "দুই কুকুরের লড়াই"বলেও তিনি অভিহিত করেছিলেন বলে জানা যায়!

সবচেয়ে বেদনাদায়ক হলো, তাঁর পিতা আবুল হাশিম ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুরাগী, প্রগতিশীল নেতা। কিন্তু পুত্র উমর সেই ঐতিহ্য বহন করলেন না। উল্টো পিতার স্নেহ ও শ্রদ্ধাভাজন শেখ মুজিবকে হেয় করেই জীবন কাটালেন! ইতিহাসবিদরা একে হীনমন্যতা ও বিকৃত মানসিকতার ফসল বলেই মনে করেন।

সত্যকে অস্বীকার করার নামই বদরুদ্দীন উমর। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র কাজ। তাই তাঁর মৃত্যুতে জাতির কোনো শোক নেই, বরং আছে মুক্তি ও স্বস্তি। ইতিহাস তাঁকে কখনো বামপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্মরণ করবে না; বরং স্মরণ করবে বিভ্রান্ত, বিকৃত, বিদ্বেষপরায়ণ এক জ্ঞানপাপী হিসেবে।

লেখক :মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test