E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

‘বেঙ্গল ফাইলস’ বাংলার একটি কালো অধ্যায়কে নুতন করে তুলে ধরেছে

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১৭:০৭:৩২
‘বেঙ্গল ফাইলস’ বাংলার একটি কালো অধ্যায়কে নুতন করে তুলে ধরেছে

শিতাংশু গুহ


‘বেঙ্গল ফাইলস’ দেখলাম। সাড়ে তিনঘন্টা একটানা ঠায় বসে দেখা, কোন সাড়াশব্দ নেই, কথা নেই, শুধু দেখা ও শোনা, উপলব্ধি করা। বুঝতে চেষ্টা করা কি ঘটেছিলো ‘ডাইরেক্ট একশ্যান ডে’- অথবা নোয়াখালীতে লক্ষীপূজার দিন? এ ছবি অন্তরাত্মাকে ঝাঁকিয়ে দেবে। আমি কাশ্মীর ফাইলস, কেরালা স্টোরী দেখেছি। সেগুলো ছিলো একটু দূরের চিত্র, ‘বেঙ্গল ফাইলস’ বাঙ্গালীর ঘরের ঘটনা। হলে বসে বসেই ভাবছিলাম, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের হিন্দুর জন্যে তো প্রতিদিনই ‘নোয়াখালী’, কলকাতার হিন্দু কি আবার ‘ডাইরেক্ট একশ্যান ডে’ দেখবে? মমতা ব্যানার্জী আরো কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে দেখবে বটে! বলে রাখা ভালো, আমি ‘সিনে-ক্রিটিক’ নই, আমি শুধু যা দেখেছি তা বলছি। ‘বেঙ্গল ফাইলস’-এ সবাই ভাল অভিনয় করেছেন। 

ম্যুভিটি দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিলো, বিবেক অগ্নিহোত্রী কি লজ্জা পাচ্ছিলেন আরো একটু নৃশংসতা দেখাতে? যেটুকু দেখিয়েছেন, তা হয়তো শিহরন জাগায়, বাস্তবতা কিন্তু এর চেয়ে ঢের বেশি নির্মম, কদর্য, কুৎসিত। বাংলাদেশের হিন্দুদের আমি প্রায়শ: বলি: ‘স্ট্যান্ড-আপ হিন্দুস’- ‘বেঙ্গল ফাইলস’ দেখিয়েছে পালিয়ে বাঁচা যায়না, গোপাল পাঠা ও কাশ্মীরি যুবক প্রতিরোধ গড়ে তুললো, প্রতিশোধ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো, হিন্দু বাঁচলো। সোহরাওয়ার্দী বলতে বাধ্য হলো: যা ভয় করেছিলাম তাই হয়েছে, হিন্দু জেগেছে, ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। হ্যাঁ, হিন্দু জাগলে, ঐক্যবদ্ধ হলে জ্বিহাদী শক্তি পরাভূত হতে বাধ্য। সোহরাওয়ার্দী হেরেছেন, তিনি ‘কলকাতার কসাই’ খেতাব পেয়েছেন।

মরতে মরতে হিন্দু জিতেছে, গোপাল পাঠা সেদিন হিন্দুদের জিতিয়ে দিয়েছে। সেদিন হিন্দু হারলে পুরো বাংলা পাকিস্তানে চলে যেতো। পশ্চিমবঙ্গের ‘আত্মঘাতী হিন্দু বাঙ্গালী’ সেটি এখনো বুঝতে চাইছে না, মানছে না? নোয়াখালীতে হিন্দু ছিলো মাত্র ২০%, প্রবল সংখ্যাধিক্যে জ্বিহাদীরা নৃশংসতা চালিয়ে বিজয়ী হয়, নোয়াখালী পাকিস্তানে চলে যায়। নোয়াখালীতে কত হিন্দু নিহত হয়েছিলো, কত রমণী ধর্ষিতা বা বাধ্যতামূলক ধর্মান্তরিত হয়েছিলো তা গুগুল ঘাটলে জানা যাবে, আমি ভাবছিলাম কলকাতায় এক সপ্তাহের কম সময়ে ৪০হাজার মানুষ মারা গেলো, তখন কলকাতার জনসংখ্যা কত ছিলো? আরো ভাবছিলাম, ১৯৪৬ থেকে ২০২৫, ওঁরা কি মানুষ হয়েছে?

না, হয়নি। পাকিস্তান, বাংলাদেশ তা বলছে না। মুর্শিদাবাদ, কাশ্মীর, আইএস, আল-কায়দা, জামাত, হরকাতুল জ্বিহাদ সেই সাক্ষী দেয়না। ওঁরা বদলায় না, সংখ্যালঘু হলে ওঁরা সুবোধ বালক, গণতন্ত্রের ধজ্বাধারী, সংখ্যা বাড়লে, ক্ষমতায় থাকলে ওদের আসল ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশ পায়। ‘বেঙ্গল ফাইলস’-র ডায়লগ, কাফেরের বাঁচার অধিকার নাই, কোন মিথ্যাচার নয়, বাস্তবতা। আপনি যতই ‘রাখি’ পড়ান না কেন, যতই বলুন না কেন, ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই’-ওঁরা তা বলেনা, মানেনা। ইসলাম মানলে বিধর্মী ভাই হতে পারেনা, এটাই সত্য। জিন্নাহ তো পরিষ্কার বলেছেন, হিন্দু-মুসলমান দু’টি ভিন্ন জাতি। ‘বেঙ্গল ফাইলস’ ফিল্ম নয়, এটি বাস্তবতা। এটি আপনার জন্যে তো বটেই, এটি ভবিষৎ প্রজন্মের জন্যে।

গান্ধী-জিন্নাহ’র কথাবার্তা শুনুন: গান্ধী বলেছেন, আরবের মুসলমান আর ভারতের মুসলমান এক নয়। ভারতের মুসলমান হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত, ধর্ম ভিন্ন হলেও সংস্কৃতি ভারতীয়। জিন্নাহ’র স্পষ্ট উত্তর, না, তোমাদের বহু ঈশ্বর, আমাদের এক আল্লাহ; তোমাদের বেদ-গীতা, আমাদের কোরান, তোমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি, আমাদের আরবি সংস্কৃতি। ওঁদের পক্ষে বাঙ্গালী বা ভারতীয় হওয়া সম্ভব নয়? ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দুরা যত তাড়াতাড়ি এটি মেনে নেবে ততই হিন্দু-মুসলমানের মঙ্গল। ‘বেঙ্গল ফাইলস’ বিনোদন নয় যে গিয়ে নাচগান দেখবেন, এটি আপনার অতীত নিষ্ঠূর বাস্তব চিত্র। এ ছবি দেখে শিখুন, জানুন, ভাবুন আপনার সন্তান, নাতিপুতির ভবিষ্যৎ কি?

ভাবুন, ‘বেঙ্গল ফাইলস’ পাকিস্তান বা বাংলাদেশে রিলিজ হয়নি, আর রিলিজ হয়নি পশ্চিমবাংলায়, এর অর্থ কি? কেউ হয়তো বলবেন মমতা সরকার তো ব্যান্ড করেনি। তা করেনি, মমতা ব্যানার্জি দুধেল গাইদের বলে দিয়েছে, এতে হিন্দু ব্যবসায়ীরা ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। এই যে ভয়, এই ভয় দেখিয়েই আরব দস্যুরা ৮শ’ বছর ভারত শাসন করেছে। ভয়কে জয় করে বেরুতে না পারলে বাঙ্গালী হিন্দুর কপালে আরো ’ডাইরেক্ট একশান’ আছে? ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ ‘ডাইরেক্ট একশান’-এর মাধ্যমে যে হিন্দু জেনোসাইড শুরু করেছে তা কিন্তু চলমান, পাকিস্তান-বাংলাদেশে তীব্রভাবে, ভারতে ইতস্তত। হলে বসেই ভাবছিলাম, দাঙ্গা ঘটালো মুসলিম লীগ, তৃণমূল কেন এ ম্যুভি’র বিরোধিতা করছে? ১৯৪৬-র মুসলিম লীগ আর ২০২৫-র তৃণমূল কি একই আদর্শের রাজনীতি করে?

‘বেঙ্গল ফাইলস’ ম্যুভি হিসাবে হয়তো এতে ততটা ক্লাইমেক্স নেই, কিন্তু এটি ইতিহাসের কালো অধ্যায়, যা এতদিন আপনাকে জানানো হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে বাঘাবাঘা পরিচালক-প্রযোজক ছিলো, আছে, তারা কিন্তু এমন ছবিতে হাত দেননি, দিয়েছেন একজন অবাঙ্গালী অগ্নিহোত্রী। ‘বেঙ্গল ফাইলস’ ম্যুভি’র পাশে দাঁড়ান, কারণ আজো যাঁরা মোঘলের দাসত্ব করছে, তারা চায়নি এটি মুক্তি পাক, তাঁরা চায়না বাঙ্গালী সত্যটা জানুক। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ‘বেঙ্গল ফাইলস’ ভাল ব্যবসা পাচ্ছেনা, বাঙ্গালীর ম্যুভি বাংলায় দেখানো না হলে ব্যবসা হবে কোত্থেকে? বিতর্ক সৃষ্টি হলেও এটি অর্থনৈতিকভাবে পরিপূর্ন সাফল্য না পাবার আর একটি কারণ হয়তো চিত্রনাট্য ততটা নির্মম ছিলোনা। ভারতী ব্যানার্জী ও মিঠুন চক্রবর্তীর উপস্থিতি কিছুটা কমিয়ে নোয়াখালীর বীভৎসতা একটু বেশি দেখানো যেতো।

‘বেঙ্গল ফাইলস’ হিন্দু গণহত্যা চ্যাপ্টার নুতন করে উন্মোচন। এটি বাঙ্গালী হিন্দুর চোখ খুলে দেবে। এটি একটি অন্ধকার চ্যাপ্টার আলোতে নিয়ে আসা। ভারতীর বাবা বিচারপতি ব্যানার্জি ও গুলামের মধ্যেকার ডায়লগগুলো হিন্দুদের মনে রাখা দরকার, কারণ গুলাম যা বলেছে, যেমন, একজন কাফের কখনোই মুসলমানের সমান হতে পারেনা, অথবা কাফেরদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই, এগুলো মাদ্রাসায় শেখানো হয়? ‘বেঙ্গল ফাইলস’ দেখবেন যাতে এ নির্মমতা আর কখনো না ঘটে, এ থেকে শেখার আছে। ম্যুভিতে বলা হচ্ছে, ভারত ভাগ শুরু হয়েছে ১৯৪৭ সালে, এটি শেষ হয়নি, এটি চলছে, চলবে, এ বক্তব্য মিথ্যা নয়? আলামত কি দেখতে পাচ্ছেন না? তবে ১৯৪৬-এ পুলিশের ভূমিকার সাথে আজকের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের চরিত্রের মিলটা হুবহু মিলে গেছে।

সবাই মিঠুন চক্রবর্তী, ভারতী, অনুপম খের-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, আমি কিন্তু এদের সাথে সিবিআই অফিসার দর্শন কুমারের অভিনয়ে মুগ্ধ। জিন্নাহ্ চমৎকার অভিনয় করেছেন, ভারতীয়দের উচিত জিন্নাহ’র কথাগুলো মনে রাখা। ভারতী সুযোগ পেয়েও সর্দার হুসেনের বুকে ছুরি মারতে পারেনি, দর্শন কুমার কিন্তু গুলামকে ছেড়ে দেয়নি। ভারতে মুসলিম আগ্রাসনের ইতিহাস দেখলে বুঝবেন হিন্দু রাজাদের অতিমাত্রায় ‘উদারতা’ যা মূলত: দুর্বলতা ভারতকে পরাধীন হতে সহায়তা করেছে। গুলামরা কিন্তু ভুল করেনি, প্রথম সুযোগেই নোয়াখালীর কাকু রাজেন্দ্র লাল চৌধুরীকে নিঠুরভাবে খুন করতে পিছপা হয়নি। ইসলামিক রেডিকেল গুলাম সারোয়ার হুসেইন-র ভূমিকায় নামসি চক্রবর্তী ভাল অভিনয় করেছেন, তিনি যে মিঠুন চক্রবর্তীর পুত্র তা জানতাম না।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test