E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কর্নেল অলি আহমেদ: বিকৃত ইতিহাসের ফেরিওয়ালা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৭ ১৭:৪৭:৫৮
কর্নেল অলি আহমেদ: বিকৃত ইতিহাসের ফেরিওয়ালা

আবীর আহাদ


কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত থেকেই বীরবিক্রম উপাধি পেয়েছিলেন। অথচ আজ সেই ঐতিহাসিক পদবীকেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার, ইতিহাস বিকৃতি ও চরিত্রহননের বিশ্বাসযোগ্যতার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। যেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বিভিন্ন দলকে খুশি করা আর নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার এক বিপজ্জনক অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। এতে মনে হয়, তিনি কোনো গোপন লোভ বা সুবিধার আশায় এই বিকৃত পথ বেছে নিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে জঘন্য অপবাদ

সম্প্রতি ডিবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে কর্নেল অলি দাবি করেছেন: বঙ্গবন্ধু নাকি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লোভে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ “ইস্ত্রি করা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে পাক সেনাদের হাতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন”, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুর পরিবার নাকি পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে ১৫শ টাকা ভাতা নিত, বঙ্গবন্ধু নাকি পাকিস্তানে বসে মুরগি-ছাগলের মাংস খেতেন! তিনি এমনকি এতদূর পর্যন্ত গেছেন যে, বঙ্গবন্ধুর “বিশ্বাসঘাতকতার বিচার হওয়া উচিত”। এ বক্তব্য শুধু বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত মর্যাদাকেই নয়, বরং পুরো মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার এক জঘন্য প্রয়াস।

বিকৃত ইতিহাসের প্রচারক

অলি আহমেদ কেবল বঙ্গবন্ধুকে নিয়েই অপবাদ ছড়াননি; বরং নানা গণমাধ্যমে বারবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছেন। এমনকি নিজেকেই মুক্তিযুদ্ধের নায়ক প্রমাণের হাস্যকর চেষ্টা করেছেন। দাবি করেছেন, মেজর জিয়া তাকে “উস্তাদ” বলে সম্বোধন করতেন—অথচ তিনি ছিলেন মেজর জিয়ার অধীনস্থ একজন সামান্য ক্যাপটেন।

তার এ ধরনের বক্তব্যই প্রমাণ করে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নয়, বরং নিজের হীনমন্যতা ও বিভ্রান্ত চেতনার পুনঃপ্রচার করছেন।

সত্যকে আড়াল করা যায় না

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৪৮-৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর সাংস্কৃতিক আন্দেলন, ৬৬ এর ছ'দফা দাবী, ৬৮-৬৯ এর আগরতলা মামলা ও গণআন্দোলন, ৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, অসহযোগ আন্দোলন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা, ১০ এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠন।

সব কিছুর শেকড়ই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও নামে। উপরোক্ত অধ্যায়ের সাথে জড়িয়ে ছিল তাঁর ১৪ বছরের কঠিন কারাবাস ও জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি। ইতিহাস, বাঙালি জাতি ও বিশ্ববাসী এ সত্যের সাক্ষী। অথচ এ সবকিছু অস্বীকার করে কর্নেল অলি মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোত তথা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন!

কার স্বার্থে এই বিকৃতি?

অলি আহমেদের বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তা হুবহু মিলে যায় বিএনপি-জামায়াত এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- তিনি কি অলৌকিক কোনো লাভের আশায় এ বিভ্রান্তির রাজনীতি করছেন? নাকি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিগুলোর মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন? ইতিহাস বিকৃত করে তিনি হয়তো স্বল্পমেয়াদে তালি পাচ্ছেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তিনি নিজেকে কেবলই হাস্যকর চরিত্রে পরিণত করছেন।

বিকৃতির ভাঁড়ামি

একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত নেতৃত্বকে অস্বীকার করেন, বঙ্গবন্ধুর দেয়া উপাধি ‘বীরবিক্রম’কে ঢাল বানিয়ে জাতির পিতাকে হেয় করেন, তিনি মূলত নিজের পরিচয়কেই কলঙ্কিত করছেন। এ জন্য তাকে "বিচ্যুত মুক্তিযোদ্ধা'' বলা যেতে পারে।

কর্নেল অলি আহমেদ আজ ইতিহাস বিকৃতির এক দেউলিয়া ফেরিওয়ালা ছাড়া আর কিছু নন। বঙ্গবন্ধুকে ছোট করার চেষ্টায় তিনি নিজেকেই পরিণত করেছেন এক রাজনৈতিক ভাঁড়ে। বীরবিক্রম পদবী বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে পাওয়া, কিন্তু সেই পদবীর আড়ালে দাঁড়িয়ে জাতির পিতাকে আক্রমণ করা মানে নিজের মুখেই থাপ্পড় মারা। অলি আহমেদ এখন ইতিহাস বিক্রির সস্তা ফেরিওয়ালা, যার অপপ্রচার প্রতিহত করা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির নৈতিক দায়িত্ব। কারণ, সত্য চিরকাল অমলিন: বঙ্গবন্ধু চিরকাল বীর, আর অলি আহমেদ চিরকাল বিকৃত ইতিহাস-বিক্রেতার হাস্যকর প্রতীক হয়ে থাকবেন।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test