E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

টাইমস স্কয়ারে দুর্গাপূজা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ১৭:৫০:৫৭
টাইমস স্কয়ারে দুর্গাপূজা

শিতাংশু গুহ


২০২৪-এ প্রথম টাইমস স্কয়ারে সফলভাবে মহাসাড়ম্ভরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়, সেটি ছিলো ঐতিহাসিক ঘটনা। সেই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে এবার (২০২৫) টাইমস স্কয়ারে দু’টি দুর্গাপূজা হচ্ছে। তাও একই দিনে (বুধবার ও বৃহস্পতিবার, ১লা-২রা অক্টবর), খুব কাছাকাছি জায়গায়। গতবার (২০২৪) একটি পূজা হয়েছিলো, নামটি টাইম্স স্কয়ার দুর্গাপূজা। এতে সবাই অংশ নেয়, সকল সংগঠন, সকল পূজা কমিটি ও ভক্তদের অংশগ্রহণে সেটি সবার পূজায় পরিণত হয়, সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে এবং সবাই মিলে এটিকে সকল পূজার কেন্দ্রবিন্দু করে তুলে। টাইমস স্কয়ার দুর্গাপূজার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে বলতে পারি, এতে কারো একক কৃতিত্ব নেই, কৃতিত্ব পুরো বাংলাদেশী হিন্দু কমিউনিটির।

এ বছর দু’টি পূজা দেখে অনেকেই ভাবছেন, তাহলে কি গতবারের কমিটি ভেঙ্গে দু’টি পূজা হচ্ছে? না, তা হচ্ছেনা, এবার একটি নুতন পূজার সংযোজন হচ্ছে। ভাল কি মন্দ তা জানিনা, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি ‘বহু ফুল ফুটতে দাও’ থিওরীর পক্ষে, অবশ্য রেষারেষি থাকলে সেটি ভিন্ন কথা। প্রতিযোগিতা থাকুক, রেষারেষি নয়! নিউইয়র্কের মন্দিরগুলোতে এমনিতেই তিথি-নক্ষত্র মেনে দুর্গাপূজা হয়, যারা হল-ভাড়া করে দুর্গাপূজা করেন, তাঁরা টাইম্স স্কয়ারে দুর্গাপূজা করলে মন্দ কি? হলের ভাড়া হাজার-হাজার ডলার, টাইম্স স্কয়ার তো প্রায় বিনামূল্যে পাওয়া যায়? খরচ বাঁচবে, প্রচার বাড়বে, আমেরিকানরা জানবে দুর্গাপূজা কি? বাঙ্গালী সংস্কৃতি জানানোর দরকার আছে।

দু’টি পূজার পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকলেও আমার ধারণা সামনে টাইমস স্কয়ারে আরো পূজা বাড়বে। এবার দু’টি পূজা দেশের মত একই মহল্লায় দু’টি পূজা। বাংলাদেশিরা নিউইয়র্কে ১৯৯০ সালে প্রথম দুর্গাপূজা করে, সেটি বেড়ে এখন প্রায় ২০-২৫টি পূজা হচ্ছে। বাড়ুক না পূজা। টাইম্স স্কয়ারে পূজা বাড়লে ক্ষতি কি? লন্ডনের রাসেল স্কয়ারে পূজা হোকনা। বলে রাখা ভাল, আমি তো নৈই-ই, আমার জানামতে গতবার টাইমস স্কয়ার দুর্গাপূজার চেয়ারম্যান প্রদীপ সাহা ও প্রধান উপদেষ্টা জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার এবার টাইম্স স্কয়ার দুর্গাপূজার সাথে সম্পৃক্ত নন। সবার মতো আমিও চাই, এবার টাইমস স্কয়ারে দু’টি পূজাই সফলভাবে সম্পন্ন হোক, গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে তাই কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো।

২০২৪-এ পূজাটি হয়েছিলো শনিবার ও রবিবার, ৫-৬ই অক্টবর এবং সেটি ছিলো নিউইয়র্কে অনুষ্টিত সকল পূজার এক সপ্তাহ আগে। তখন অন্য কারো পূজা ছিলোনা। সুতরাং সবাই টাইমস স্কয়ার পূজায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, অংশ নেন এবং ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। এ বছর এটি একটি সমস্যা, কারণ পূজাটি উইকডে-তে, বুধ-বৃহস্পতিবার, মানুষের কাজকর্ম থাকবে। এবার টাইমস স্কয়ার পূজার শুরু কিছুটা হলেও তিথিনক্ষত্র মেনে এবং একই দিনে সকল মন্দির ও বিভিন্ন পূজা কমিটি’র পূজা থাকবে, সুতরাং সবাই নিজেদের পূজায় ব্যস্ত থাকবে। নিজস্ব পূজা থাকলে অন্য পূজায় যাওয়া বেশ কষ্টকর, তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই টাইমস স্কয়ারে যেতে পারবেন না?

গতবার ছিলো একটি পূজা, এবার দু’টি, যারা মণ্ডপে গিয়ে চাঁদা দিতে চান, তাঁরা হয়তো প্রদত্ত চাঁদা দু’ভাগে ভাগ করে দেবেন। তাই হয়তো মণ্ডপে চাঁদা কম উঠবে। এজন্যে হয়তো দুই কমিটি আগেভাগে চাঁদা তুলতে মাঠে নেমে পড়েছেন। গতবার আমাদের হাতে সময় ছিলোনা, তায় প্রথম পূজা, নানান প্রতিকূলতা ছিলো, এবার উভয় কমিটি বেশ আগেই মাঠে নেমেছে, এটি ভালো দিক, তাঁরা গুছানোর সময় পেয়েছে। টাইমস স্কয়ার পূজা নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে, হাজার হোক, টাইমস স্কয়ার! বৃষ্টি হলে টাইমস স্কয়ার পূজায় সমস্যা হতে পারে, মানুষ কম হবে, মানুষ কম হলে চাঁদা কম উঠবে। সুখের বিষয় ১-২ অক্টবর গুগুল চমৎকার আবহাওয়া দেখাচ্ছে।

অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, সকালে পূজার নির্ঘন্ট অনুযায়ী অনেক মানুষ ঠিক সময়ে হাজির হ’ন, তাঁরা ভক্তিভরে পূজা সেরে, অঞ্জলি নিতে ও প্রসাদ পেতে আগ্রহী থাকেন। এ দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং খেয়াল রাখা দরকার। ঠাকুরের ভোগ, পূজা সামগ্রী, পূজারী ব্রাহ্মণ আগেভাগে তৈরী থাকাটা দরকার। গতবার টাইম্স স্কয়ারে বসবাসরত হিন্দুরা একাজে ব্যাপক সহায়তা করেছেন।প্রায় সবকিছুই কুইন্স থেকে টাইম্স স্কয়ারে নিতে হবে এবং সেখানে গাড়ী পার্কিং প্রায় নাই। গতবার আমরা আগের রাতে স্টেজ-মণ্ডপ তৈরী করেছিলাম, শোনা যাচ্ছে, এবার দুই কমিটিই আগেভাগে মণ্ডপ তৈরী করবে। টাইমস স্কয়ার পূজার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, ‘বাথরুম’। যেহেতু জায়গাটি ‘বিশ্বখ্যাত’ তাই নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার থাকতে হয়, গতবার বাংলাদেশী পুলিশরা ব্যাপক সহায়তা করেছে, আসলে পূজাটি তাঁরা অন্য সবার মতোই তাদের করে নিয়েছিলো। টাইমস স্কয়ার এলায়েন্স খুবই সহায়তা করে থাকে। এরপরও নিরাপত্তা কর্মী ভাড়া করতে হবে বৈকি। গতবার অনেকেই নিজে থেকে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন, অনেক গ্রূপ এগিয়ে এসেছে, নিজস্ব পূজা না থাকলে এবারো ব্যতিক্রম হবেনা।

দুর্গাপূজায় নারকেলের নাড়ূ-সন্দেশের কদর বেশি। শুনছি গতবারের মত এবারো নাড়ূর কোন কমতি হবেনা। গতবার ম্যানহাটনে বসবাসরত পরিবারগুলো স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলো, এবারো তাঁরা পিছিয়ে নেই। দেবীর পূজার উপচার দূর থেকে আনার সমস্যা, কাছে থেকে হলেই ভাল। টাইমস স্কয়ারে রান্না করা যাবেনা, তাই প্যাকেটজাত প্রসাদ ছাড়া উপায় নাই? তবে পূজার পর ভোগ বা ফলপ্রসাদ তো থাকেই। ড্ৰাই প্রসাদ লাগবে, প্রচলিত পাতলা খিচুড়ি তাই অচল। এটুকু বলা যায়, প্রসাদ হিসাবে যাই দেন, মানুষ তাতেই খুশি, নাড়ু-সন্দেশ পেলে তো কথাই নেই! বাংলাদেশী হিন্দুরা টাইমস স্কয়ার দুর্গাপূজা নিয়ে গর্ব করতে পারেন, কারণ নিউইয়র্কে বসবাসরত অন্য হিন্দুদের এটি মাথায় আসেনি। কলকাতার বাঙ্গালী হিন্দুরা এ পূজায় ব্যাপকভাবে অংশ নিয়ে থাকেন, এবারো নেবেন তা বলা বাহুল্য।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, টাইমস স্কয়ার দূর্গাপূজা।

পাঠকের মতামত:

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test