E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সঙ্গীত সম্রাট হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ৩৬তম প্রয়াণ দিবসে প্রাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৭:০৯:০১
সঙ্গীত সম্রাট হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ৩৬তম প্রয়াণ দিবসে প্রাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আবীর আহাদ


গত ২৬ সেপ্টেম্বর ছিলো উপমহাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ৩৬তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৮৯ সালের এই দিনে সঙ্গীত সম্রাট হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বর্ণাঢ্য সঙ্গীত জীবনের অবসান ঘটে। উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান সুরকার সলিল চৌধুরী তাঁকে নিয়ে যথার্থই উক্তি করে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, ঈশ্বর যদি গান গাইতেন, তাহলে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠেই গাইতেন! 

মেঘমন্দ্রিত জলদগম্ভির মিষ্টি মধুর কণ্ঠের অধিকারী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিনের আবহে তাঁর সাথে আমার একটি ছোট্ট স্মৃতি আজ আমার মানসপটে ভেসে উঠছে। সেটি হলো- ১৯৭১ সালের জুন মাসের সম্ভবত: ৮/৯ তারিখ। বনগাঁর টালিখোলা ইয়ুথ ক্যাম্প। আমাদের দ্বিতীয় ব্যাচের উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণার্থে চাকুলিয়া গমনের প্রাক্কাল। আমিও এ ব্যাচে যাওয়ার অপেক্ষায়। এ সময় মুজিবনগর বিপ্লবী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে আমিই বনগাঁ টালিখোলা ইয়ুথ ক্যাম্পে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসি।

অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে হঠাৎ মনে হলো এসময় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করলে ভালো হয়। এ-ভাবনার এক পর্যায়ে কলকাতার বালিগঞ্জে স্বাধীন বাংলা বেতারে যেয়ে শিল্পী আবদুল জব্বারের সাথে দেখা করি। তাকে আমি আমার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বললাম : আপনি, অজিত রায়, ফকির আলমগীর, রথীন্দ্রনাথ রায়, আপেল মাহমুদ প্রমুখ তো থাকবেনই, তবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছাড়া কিন্তু আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবো না! আবদুল জব্বার বললেন, অবশ্যই! তো চলো, এখনই ওস্তাদের কাছে যাই।' মূলত: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে আবদুল জব্বার ওস্তাদ বলতেন। সেদিনই আবদুল জব্বার ও আমি বালিগঞ্জে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনে যেয়ে তাঁর সাথে দেখা করি। এর আগেও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সাথে আমার একবার দেখাসাক্ষাত ঘটেছিলো। সেদিন অতিবিস্ময়ের সাথে উপলব্ধি করি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো কন্ঠশিল্পী আমাদের কন্ঠশিল্পী আবদুল জব্বারকে কতখানি স্নেহ করেন, ভালবাসেন, মূল্যায়ন করেন। আমার পরিকল্পনার কথাটা আবদুল জব্বারই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে পেশ করার সাথে সাথে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, আমার বন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধাদের ডাক তো আমি ফিরিয়ে দিতে পারি না! কথায় কথায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন কলকাতায় লেখাপড়া করতেন, রাজনীতি করতেন, তখন তাঁর সাথে দেখা-সাক্ষাত ঘটতো, যা বন্ধুত্বে গড়িয়েছিলো। যদিও তোমাদের অনুষ্ঠানের দিন বোম্বেতে একটি ফিল্মের জন্য আমার কয়েকটি গানে কন্ঠ দেয়ার কর্মসূচি রয়েছে, সেটি বাতিল করে দেবো!

হ্যাঁ, সেই কর্মসূচি বাতিল করে আবদুল জব্বারের সাথেই আমার অনুষ্ঠানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন। গেয়েছিলেন সেই অমর সঙ্গীত : ও আমার দেশের মাটি তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা; মাগো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে; নাই নাই ভয়, হবে হবে জয় এবং সবশেষে 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি। আর আবদুল জব্বার গেয়েছিলেন : সাড়ে সাতকোটি মানুষের আরেকটি নাম মুজিবর মুজিবর মুজিবর ও মুজিব বাইয়া যাওরে।

আমার অত্যন্ত প্রিয় শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অমর স্মৃতির প্রতি জানাই প্রাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি। তিনি আজ এ ভুবনে নেই, কিন্তু সঙ্গীত জগতে ধ্রুবতারার মতো তিনি উপমহাদেশের বুকে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test