জাতিসংঘ দিবস: বৈশ্বিক সহযোগিতা ও দায়িত্ববোধের আহ্বান

ওয়াজেদুর রহমান কনক
বিশ্বের মানুষের মধ্যে ঐক্য, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা কেবল একটি দিনের স্মরণে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি চলমান সংকল্প, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। প্রতিটি সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষ যে পথ বেছে নেয়—মৈত্রি, সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে—সেই পথই মানবজাতির টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির মূল। এই ধারণা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে পার্থক্য ও সীমাবদ্ধতা থাকলেও, সম্মিলিত প্রচেষ্টা, দায়িত্বশীলতা এবং সহানুভূতির শক্তি একেবারেই অপরিসীম, এবং তা মানবজাতিকে আরও নিরাপদ, ন্যায়সংগত ও সহনশীল ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
২৪ অক্টোবর প্রতিটি বছরে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়; এই তারিখটি নির্বাচিত হওয়ার কারণ হচ্ছে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবরই জাতিসংঘ সংস্থার ভিত্তিপত্র (UN Charter) কার্যকর হয়েছিল, এবং তাই সেই দিনটিকে বিশ্বের একটি প্রতীকী মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয়। জাতিসংঘ দিবসকে আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন করার প্রথা দীর্ঘ; ১৯৪৮ সাল থেকেই দিনটি পালিত হয়ে আসছে এবং ১৯৭১ সালে সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অবলোকন করার আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘের শুরুর পর্যায়ে ১৯৪৫ সালে সান ফ্রান্সিসকো কনফারেন্সে ৫১টি দেশ প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিল; সেইদিন থেকে সংগঠনটি ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে আজ বিশ্ব জোড়া একটি বহুপাক্ষিক সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যসংখ্যা ১৯৩টি সোভেয়ারেন রাষ্ট্র, যা জাতিসংঘকে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সহযোগিতা ও আলোচনার প্রধান মঞ্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রধান কার্যক্রম ও সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানগত চিত্র
জাতিসংঘ শুধুমাত্র কূটনৈতিক আলোচনা-আদলের ক্ষেত্র নয়; এটি শান্তি-নির্বাহ, উন্নয়ন, মানবাধিকার, মানবিক সহায়তা ও জলবায়ু নীতি বসাতে বহুমাত্রিক কার্যক্রম চালায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোর প্রধান পরিসংখ্যানগত চিত্রগুলো স্পষ্ট করে বলছে যে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো অর্জনে কাজ এখনও অনেক দূর। জাতিসংঘের প্রকাশিত “Sustainable Development Goals Report 2024” অনুযায়ী ২০৩০ এর SDG লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে মাত্র প্রায় ১৭ শতাংশ লক্ষ্যই গতিশীলভাবে সঠিক পথে আছে; প্রায় অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রাই পাত্তা কম বা মাঝারি উন্নতি দেখাচ্ছে এবং এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ক্ষেত্রে অগ্রগতি স্থবির বা পিছিয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে — এইসব তথ্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ (দারিদ্র্য, ক্ষুধা, শিক্ষার অনিশ্চয়তা, লিঙ্গভিত্তিক অসমতা, জলবায়ু ঝুঁকি ইত্যাদি) মোকাবিলায় তৎপর পদক্ষেপের তীব্র প্রয়োজন।
শান্তিরক্ষামূলক অভিযান (peacekeeping)। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের প্রকৃত উপাত্ত অনুসারে জাতিসংঘ পরিচালিত শান্তিরক্ষামূলক অনুশীলনগুলোতে মোট কর্মীসংখ্যা প্রায় ৬১,১২৭ জন; বর্তমান সময়ে সম্পৃক্ত অপারেশনসমূহ মোট মিলিয়ে এগুলোতে সক্রিয় নামিক মিশন সংখ্যা একাধিক (দলগতভাবে ১১টি মিশন ইত্যাদি নগণ্য নয়) এবং ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই অপারেশনগুলোর অনুমোদিত বাজেট আনুমানিক ৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হিসেবে ধরা হয়েছে। ইউনিটসমূহে যোগদানকারী দেশও বিস্তৃত — ১২১টি দেশ পর্যন্ত ইউনিফর্মধারী কর্মী যোগান দেয় — যা দেখায় যে সশস্ত্র সহিংসতা ও স্থিতিশীলতার সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের ভূমিকাও যথেষ্ট বড় এবং ব্যয়বহুল।
জাতিসংঘের নীতিনির্ধারণ ও কার্যক্রম চালানোর জন্য নিয়মিত (regular) বাজেট এবং শান্তি পরিস্থিতি-সংক্রান্ত আলাদা বাজেট প্রয়োজন; উদাহরণস্বরূপ সাধারণ অনুমান অনুযায়ী ২০২৫ সালের নিয়মিত বাজেটের মূল্যায়ন (regular budget assessments) প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে— কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রদেয়তা সময়মতো না পে করায় বাস্তবে শুরুতেই সংগ্রহ ঘাটতি দেখা দেয়; ২০২৫ সালের শুরু সময়কালে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত অর্থপ্রদান প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার মাত্র ছিল, যা নির্দেশ করে যে দায়িত্বশীল অর্থায়ন ব্যতীত সমগ্র ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই তফাৎ কেবল হিসাবের বিষয় নয়; তা সরাসরি কার্যক্রম ঘাটতি, কর্মক্ষমতা ও জরুরী মানবিক কার্যক্রমের উপর প্রভাব ফেলে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা—উদাহরণস্বরূপ ইউনিসেফ, UNHCR, WFP ইত্যাদি—প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে ত্রাণ, আশ্রয় ও সুরক্ষা পৌঁছে দেয়। বহু অঞ্চলে যুদ্ধ, জলবায়ু-প্ররিত দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক পতন মিলিতভাবে স্থানীয় জনসংখ্যাকে সংকটে ফেলে দিচ্ছে; ২০২৪–২৫ সালের সময়ে বিশ্বব্যাপী খাবার নিরাপত্তা, অনাবৃত বস্তির সংখ্যা, অভিবাসন ও বিতাড়িত মানুষের সংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে যে উপাত্ত প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো দেখায় যে এই সংকটগুলো কেবল একক দেশের সমস্যাই নয়—এগুলো সারাবিশ্বকে ছুঁয়ে যাচ্ছে এবং জাতিসংঘের সমন্বয় ও সহায়তা ছাড়া বহুকেই সমস্যা দ্রুত স্থির হতে পারছে না। (উপরের SDG প্রতিবেদন ও UN-সংস্থাগুলি এই বাস্তবতাগুলো বিশ্লেষণ করেছে)।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও জাতিসংঘের গুরুত্ব
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জাতিসংঘ কেবল সমস্যা চিহ্নিতকারী নয়—এটি বহুবিধ প্রকল্প, অর্থায়ন, প্রযুক্তি ও নীতি-সহায়তা প্রদান করে থাকে। দুর্যোগ-প্রশমন, জলবায়ু অভিযোজন, শিশু-পুষ্টি, শিক্ষা ও মহিলা-শক্তিকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের কার্যক্রম দেশের টেকসই উন্নয়নে অব্যাহতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া বাংলাদেশের জাতিসংঘ মিশনগুলোতেও অসংখ্য সামরিক ও полис সদস্য সক্রিয়ভাবে শান্তি অভিযানে অংশগ্রহণ করে এসেছে; এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও কূটনীতিক ইমেজকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
২৪ অক্টোবরের জাতিসংঘ দিবস শুধুমাত্র একটি স্মরণীয় তারিখ নয়; তা বিশ্ব সম্প্রদায়কে বারবার মনে করিয়ে দেয় যে জাতিগত, ধর্মীয় বা আঞ্চলিক বিভাজন সত্ত্বেও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সম্মিলিত নীতি, অনুপ্রেরণা ও দায়বদ্ধতা দরকার। বর্তমান পরিসংখ্যানগুলি (১৯৩ সদস্য রাষ্ট্র, ৫১ প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য, SDG লক্ষ্যমাত্রার কেবল আংশিক সাফল্য, শান্তিরক্ষায় প্রায় ৬১ হাজার কর্মী ও কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজেট-চাহিদা) স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে উদ্যোগ ও সংস্থান উভয়ই বাড়াতে হবে; নতুবা ২০৩০ এজেন্ডার লক্ষ্যসমূহ অনাকৌচিত্যপূর্ণ ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। এই দিনটি মনে করিয়ে দেয়—কর্মনৈতিকতা ও অর্থায়ন, রাজনীতিগত সদিচ্ছা এবং স্থানীয়-আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া বৈশ্বিক উন্নয়ন ও শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
২৪ অক্টোবরের জাতিসংঘ দিবস (United Nations Day) বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে পালিত হয়, কারণ এটি কেবল জাতিসংঘের জন্মদিন নয়—এটি মানবতার সম্মিলিত চেতনা, বৈশ্বিক সহযোগিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির প্রতীক। এই দিবসটি বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, রাজনৈতিক অবস্থান ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পালন করা হয়। নিচে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের উদাহরণসহ বিশদভাবে তুলে ধরা হলো।
জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হওয়ায়, ২৪ অক্টোবর সেখানে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে উদ্যাপিত হয়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রতি বছর আনুষ্ঠানিক সমাবেশ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্য অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ ভবনে জাতিসংঘ পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনটির সূচনা হয়। ইউরোপের বহু দেশে যেমন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও সুইজারল্যান্ডে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো একসঙ্গে মিলিত হয়ে “Global Cooperation Week” নামে সপ্তাহব্যাপী আলোচনা, সেমিনার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে “Model United Nations” (MUN) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি হয়ে কূটনৈতিক বিতর্কে অংশ নেয়।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ বহু এশীয় দেশে জাতিসংঘ দিবস সরকারি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়। জাপানে দিনটি “Peace and Human Solidarity Week” হিসেবে পালিত হয়, যেখানে জাতিসংঘের শান্তি ও মানবিক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। ভারতে জাতিসংঘের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্যোগে ন্যাশনাল স্কুল ডিবেট, আর্ট প্রতিযোগিতা, ও “UN in India” প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশে ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউনএফপিএ, এবং ইউন উইমেনের সহযোগিতায় বিভিন্ন কর্মসূচি, যেমন: পোস্টার প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, ও শান্তি-মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
আফ্রিকান দেশগুলোতে জাতিসংঘ দিবসের পালন কিছুটা অনন্য রূপ নেয়, কারণ জাতিসংঘ মহাদেশটির উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার প্রধান অংশীদার। নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ঘানা ও দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতিসংঘ অফিসগুলো স্থানীয় সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে দিবসটি উদ্যাপন করে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দিবসটি “Development Partners’ Day” নামে পালিত হয়, যেখানে দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিশু সুরক্ষা বিষয়ক জাতিসংঘ প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরা হয়।
লাতিন আমেরিকার দেশগুলো—মেক্সিকো, ব্রাজিল, চিলি ও আর্জেন্টিনা—২৪ অক্টোবরকে কূটনৈতিক বন্ধুত্বের দিন হিসেবে দেখে। সেখানে সরকারি ভবনে জাতিসংঘ পতাকা উত্তোলন, “UN Peace Song Concert” ও স্কুলভিত্তিক মানবাধিকার প্রচারাভিযান আয়োজন করা হয়। ব্রাজিলে “ONU Week” নামে সপ্তাহব্যাপী সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান হয়, যেখানে নাগরিকদের জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDGs) সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
ইউএন-সমর্থিত মানবিক সহায়তা প্রোগ্রামগুলোর কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যেমন লেবানন, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ও কাতার জাতিসংঘ দিবস উদ্যাপন করে কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে। ইউএনএইচসিআর ও ইউনিসেফের সহায়তায় উদ্বাস্তু শিবিরে বসবাসরত শিশুদের জন্য বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।
যেসব দেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অবদান রাখে, যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও রুয়ান্ডা—সেসব দেশে জাতিসংঘ দিবসটি সামরিক ও বেসামরিক উভয় মহলে বিশেষ মর্যাদা পায়। বাংলাদেশে দিনটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সম্মাননা প্রদান, প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
২০২4 সালের তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের এই দিবসে পৃথিবীর প্রায় ১৬০টিরও বেশি দেশে সরকারি বা আধা-সরকারি পর্যায়ে অনুষ্ঠান হয়। ৯০টিরও বেশি দেশে স্কুল শিক্ষার্থীরা “UN Awareness Activity” তে অংশ নেয়। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১,০০০ টিরও বেশি “UN Week Event” অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছে যায়—এই সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
যেখানেই দিবসটি পালিত হোক না কেন, এর মূল প্রতিপাদ্য এক—“বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ঐক্য”। জাতিসংঘ দিবস শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের স্মারক নয়; এটি মানবসভ্যতার সামষ্টিক দায়িত্ব ও সহযোগিতার দিন, যেখানে প্রত্যেক দেশ, প্রতিটি নাগরিককে মনে করিয়ে দেওয়া হয়—একটি ন্যায্য, সহিষ্ণু ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব।
২৪ অক্টোবর প্রতিটি বছরের বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয়, যা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের জন্মদিনের স্মরণ নয়, বরং মানবজাতির মধ্যে ঐক্য, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতীক। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ—দারিদ্র্য, ক্ষুধা, শিক্ষার অনিশ্চয়তা, লিঙ্গভিত্তিক অসমতা, জলবায়ু ঝুঁকি—মোকাবিলায় একক দেশ বা সম্প্রদায়ই যথেষ্ট নয়; বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সম্মিলিত উদ্যোগ এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব অপরিহার্য।
জাতিসংঘের কার্যক্রম শুধু কূটনৈতিক আলোচনাই নয়, বরং শান্তি-নির্বাহ, মানবাধিকার, মানবিক সহায়তা ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। শান্তিরক্ষামূলক মিশনে সক্রিয় প্রায় ৬১,০০০ জনেরও বেশি কর্মী ১২১টি দেশ থেকে সরাসরি সহায়তা প্রদান করে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই মিশনের অনুমোদিত বাজেট ছিল প্রায় ৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের এই উদ্যোগগুলো শুধু আর্থিক এবং মানবিক দিকেই নয়, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দায়বদ্ধতাকেও প্রতিফলিত করে।
একইসাথে, জাতিসংঘ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মানবতাবাদী জরুরি প্রতিক্রিয়ায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইউনিসেফ, UNHCR, WFP ইত্যাদি সংস্থাগুলি প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে খাদ্য, আশ্রয় এবং সুরক্ষা পৌঁছে দেয়। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, জলবায়ু-প্ররিত দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক পতনের কারণে অনেকে অভিবাসী বা বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়। ২০২৪–২৫ সালের উপাত্ত অনুসারে, বিশ্বজুড়ে খাবার নিরাপত্তা, অনাবৃত বস্তি, অভিবাসন ও বিতাড়িত মানুষের সংখ্যা উদ্বেগজনক। এসব সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের সমন্বয় ও সহায়তা ছাড়া দ্রুত স্থিতিশীলতা আনানো কঠিন।
অর্থায়নের দিক থেকেও জাতিসংঘের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ২০২৫ সালের নিয়মিত বাজেট প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তবে সদস্য রাষ্ট্রদের প্রদেয়তার দেরি এবং ঘাটতি বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। বাজেটের এই সীমাবদ্ধতা কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে, জরুরি মানবিক সহায়তা এবং শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যকারিতা সীমিত করে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে দায়িত্বশীল অর্থায়ন ও সহযোগিতার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও জাতিসংঘের কার্যক্রম বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি দুর্যোগ-প্রবণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থান করছে। জাতিসংঘের প্রকল্প, অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সহায়তা দেশের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক। শিশু-পুষ্টি, শিক্ষা, মহিলা-শক্তিকরণ, এবং দুর্যোগ-প্রশমন ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অবদান দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, যা দেশের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও কূটনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDGs) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বের অগ্রগতি এখনও আংশিক। SDG রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে, মাত্র ১৭% লক্ষ্য সঠিক পথে এগোচ্ছে, অর্ধেক লক্ষ্য মাঝারি অগ্রগতি দেখাচ্ছে, এবং এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ক্ষেত্রে অগ্রগতি স্থবির বা পিছিয়ে। এই বাস্তবতা ইঙ্গিত দেয় যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর পদক্ষেপ, সমন্বিত উদ্যোগ ও সদস্য রাষ্ট্রের দায়বদ্ধ অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
২৪ অক্টোবর আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের পথে একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়; আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক দায়বদ্ধতা এবং মানবিক সহমর্মিতা একসাথে কাজ করতে হবে। এই দিনটি কেবল একটি স্মরণীয় তারিখ নয়, বরং এটি আমাদের আহ্বান—একত্রিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি ন্যায্য, শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার।
২৪ অক্টোবরের জাতিসংঘ দিবস কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের জন্মদিনের স্মরণ নয়, এটি বিশ্ব মানবতার সম্মিলিত দায়িত্ব, শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আহ্বান। এই দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যেমন দারিদ্র্য, ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক সংঘাত একক দেশ বা সম্প্রদায়ের দ্বারা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সমন্বিত উদ্যোগ, আর্থিক দায়বদ্ধতা এবং মানবিক সহমর্মিতা অপরিহার্য।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষামূলক অভিযান, মানবিক সহায়তা, উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং নীতি নির্ধারণের কার্যক্রম দেখায় যে, একত্রিত প্রচেষ্টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শতাধিক দেশ থেকে প্রায় ৬১,০০০ কর্মী শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত থাকে এবং বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে খাদ্য, আশ্রয় ও নিরাপত্তা পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে জাতিসংঘের অবদান শিশু-পুষ্টি, শিক্ষা, মহিলা-শক্তিকরণ, দুর্যোগ-প্রশমন এবং প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে দেশের টেকসই উন্নয়নে প্রতিফলিত হয়।
তবে, লক্ষ্যগুলো অর্জনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ অবশিষ্ট। SDG রিপোর্ট ২০২৪ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে মাত্র ১৭% লক্ষ্য সঠিক পথে এগোচ্ছে। অর্ধেক লক্ষ্য মাঝারি অগ্রগতি দেখাচ্ছে এবং এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ক্ষেত্রে অগ্রগতি স্থবির বা পিছিয়ে। অর্থায়নের ঘাটতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের সীমাবদ্ধতা এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
দিবসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শান্তি, ন্যায় এবং উন্নয়নের পথে একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, দায়িত্বশীল নেতৃত্ব, মানবিক সহমর্মিতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ একত্রিত হলে বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব। ২৪ অক্টোবরের জাতিসংঘ দিবস তাই কেবল একটি স্মরণীয় তারিখ নয়; এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এক ধরনের আহ্বান, যা প্রতিটি দেশ, প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিককে তাদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং একটি ন্যায়সঙ্গত, নিরাপদ ও টেকসই বিশ্বের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রেরণা জোগায়।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।
পাঠকের মতামত:
- ১৫ দিন ধরে বন্ধ আটলংকা বাজারের ২০টি দোকান
- সালথার ভাওয়াল ইউনিয়নে জাকের পার্টির সভা র্যালি
- বাগেরহাটে সাংবাদিক হায়াত হত্যা, প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার
- শ্যামনগরে ৪৫ কেজি হরিণের মাংস জব্দ
- কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতির ইন্তেকাল
- কাপাসিয়ার রবু সাধুর পরলোকগমন
- হেমন্ত সন্ধ্যায় বাতাসে ছড়ালো মানবতার অকৃত্রিম সুর
- গোপালগঞ্জ-ঢাকা রুটে রেল চলাচলের দাবিতে মানববন্ধন
- শ্যামনগরে বন্দোবস্ত দলিলের জমি উদ্ধারের নামে বাড়িতে আগুন, লুটপাট
- টুঙ্গিপাড়ায় দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সোরকি জমা দেওয়ার নির্দেশ
- বিবদমান জায়গায় ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নারী ও স্বেচ্ছাসেবকদল নেতাসহ আহত ৬
- অর্থায়নের চতুর্মুখী সংকট
- গাজীপুরের শিমুলতলীতে অবৈধ মেলায় লটারীর নামে জুয়ার আসর, বিক্ষোভে উত্তাল জনতা
- ভূমিহীন নেতা শহীদুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
- ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্র শিবিরের নবীন বরণ
- জাতিসংঘ দিবস: বৈশ্বিক সহযোগিতা ও দায়িত্ববোধের আহ্বান
- ‘জুলাই যোদ্ধা নামে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা সংসদ ভবন এলাকায় বিশৃঙ্খলা করেছে’
- ‘শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত’
- শাহজালালে ভয়াবহ আগুন, ফায়ার ফাইটারসহ আহত কয়েকজন
- মেনোপজ সমস্যায় হোমিওপ্যাথি
- এগিয়েছে আর্জেন্টিনা-বাংলাদেশ, পিছিয়েছে ব্রাজিল-ভারত
- জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হলেন হানিয়া আমির
- ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে’
- ঢালাও দরপতনে বাজার মূলধন কমলো ১৮০০০ কোটি টাকা
- ‘জুলাইযোদ্ধা ও শহীদদের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি’
- একদিনে ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু
- টাইমস স্কয়ারে দুর্গাপূজা
- ঘুণে ধরা সমাজের গল্প বলবে ‘খেলার পুতুল’
- আফগানিস্তানের বিদায়, বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা
- যে পানি মেটাতে পারে চুল ও ত্বকের সমস্যা
- দীর্ঘ ২ বছরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর হয়নি
- অমলকান্তি
- কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি সরকারি সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের
- জিটি ৩০ ৫জি উন্মোচন করলো ইনফিনিক্স
- ‘বেতন এত কম যে টাকার অংক বলতে লজ্জা হয়’
- গোপালগঞ্জ-ঢাকা রুটে রেল চলাচলের দাবিতে মানববন্ধন
- ‘রাকসু-চাকসু নির্বাচনও ভালোভাবে হবে’
- আফরোজা রূপার কণ্ঠে এলো ‘শ্রাবণের ধারার মতো’
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- ‘আমার বাবার কাছেও এমন ঘটনা কখনও শুনিনি’
- টুঙ্গিপাড়ায় দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সোরকি জমা দেওয়ার নির্দেশ
- চিঠি দিও
- সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে, নারী-শিশুসহ নিহত ৯
- সারাদিন বাইসাইকেলে ঘুরে ‘ছিট কাপড়’ বিক্রি করে সংসার চালান রাবেয়া
- বিশ্বনাথে ত্রাণ নিয়ে বানভাসিদের পাশে প্রতিমন্ত্রী শফিক চৌধুরী