সেনাবাহিনীর শক্ত ভূমিকাই পারে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে
মীর আব্দুল আলীম
বাংলাদেশে নির্বাচনের ইতিহাস যেন এক দীর্ঘ অনিশ্চয়তার কাহিনি। “সুষ্ঠু” এবং “অংশগ্রহণমূলক” নির্বাচন-এই দুই শব্দই বহু বছর ধরে জনমানসে আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। কারও কাছে নির্বাচন মানে একদিনের উৎসব, আবার কারও কাছে তা একেবারেই অচল গণতন্ত্রের প্রতীক। গত দেড় দশকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলো এই সন্দেহকেই প্রবল করেছে। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, ভোটকেন্দ্র ফাঁকা পড়ে থাকা, ‘রাতের ভোট’-এর অভিযোগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয়করণ-সব মিলিয়ে জনমনে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
এই প্রেক্ষাপটে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতির আঙিনায় আবারও ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন একটাই-এবার কি সত্যিই একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোট হবে? নাকি আগের মতোই নিয়ন্ত্রিত প্রহসনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে? সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক-সবার কণ্ঠেই তাই একই দ্বিধা ও উৎকণ্ঠা। একদিকে জনগণের প্রত্যাশা প্রবল; অন্যদিকে শঙ্কার ছায়াও ঘন। রাজনীতির ময়দান যেমন দুই ভাগে বিভক্ত, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলও কড়া দৃষ্টি রেখেছে ঢাকার দিকে। অনেকে বলছেন, শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলেই হবে না। অতীত অভিজ্ঞতা বলে দিয়েছে, ক্ষমতার লড়াইয়ে দলগুলো নিজেদের স্বার্থকেই আগে দেখবে। তাই জনগণ এখন তাকিয়ে আছে আন্তবর্তীকালীন সরকারের দিকে। আরেকটি দিকে-যে শক্তি অতীতে কখনও আস্থার প্রতীক হয়েছে, আবার কখনও সমালোচিতও হয়েছে। সেই শক্তি হলো সেনাবাহিনী। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ২০২৬ সালের নির্বাচন নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হবে কিনা, তার বড় নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা। এই বাস্তবতায়, সেনাবাহিনীকে ঘিরে জনআশা ও আশঙ্কার ভারসাম্য কীভাবে দাঁড়াচ্ছে-তা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি।
হাসিনা আমলের নির্বাচনী সংশয়-অভিজ্ঞতার স্মৃতিতে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভোটার আচরণে ‘শেখা অসহায়ত্ব’ (learned helplessness) তৈরি করেছে: অনেকে বিশ্বাস করেন, ফল আগে-থেকেই নির্ধারিত; ভোটে যাওয়া সময়ের অপচয় ও ঝুঁকি। এই মানসিকতা ভাঙতে কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়; দরকার ‘প্রসেসিভ জাস্টিস’-প্রক্রিয়াগত ন্যায়বিচারের দৃশ্যমান প্রমাণ। যেমন: আগাম রাতে ব্যালট সুরক্ষা, ব্যালট-বক্স/ভোটকক্ষ লাইভ-লগিং, ইন্টারনেট সচল রাখা, অভিযোগ-ডেস্কে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ কর্মকর্তা, এবং ‘টাইম-বাউন্ড রেড্রেসাল’। প্রতিটি ধাপে যদি মানুষ দেখে-একটি অভিযোগ উঠলেই তাৎক্ষণিক নথিভুক্ত হয়, ভিডিও-ফিড রিভিউ হয় এবং অপকৃতির শাস্তি/পুনঃভোটের সিদ্ধান্ত হয়-তবে ২০২৫-এর ‘রিপিট রিস্ক’ কমে। সেনাবাহিনীর ভূমিকা এখানে ‘ফেসিলিটেটর অব প্রসেস’-কার্যকর, দৃশ্যমান ও জিরো-টলারেন্স।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাসে সেনাবাহিনীকে দুইটি পরস্পর-সম্পর্কিত কারণে আস্থার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়: (ক) সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং (খ) রাজনৈতিক দলীয় দ্বন্দ্বের বাইরে তুলনামূলকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও নিয়মানুবর্তী প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়। সাম্প্রতিক দশকে আমলাতান্ত্রিক ও পুলিশি কাঠামোতে দলীয়করণের অভিযোগ প্রবল হওয়ায় সাধারণ নাগরিকের ‘ন্যূনতম নিরপেক্ষতার’ প্রত্যাশা প্রায় এককভাবে সেনাবাহিনীর প্রতি কেন্দ্রীভূত হয়েছে। গণমাধ্যম জরিপে এই আস্থার ধারাবাহিকতা ফুটে উঠলেও বাস্তব প্রয়োগে প্রশ্ন হল-কোন শর্তে এই আস্থা কার্যকরভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয়? অভিজ্ঞতা বলছে, শুধুমাত্র উপস্থিতি নয়; স্পষ্ট ম্যান্ডেট, অপারেশনাল স্বাধীনতা, দ্রুত প্রতিক্রিয়া (rapid response) ও জবাবদিহিমূলক কমান্ড-চেইন নিশ্চিত হলেই ভোটকক্ষ-ভিত্তিক নিরাপত্তা তৈরি হয়। মনস্তাত্ত্বিকভাবে ‘ডিটারেন্স’ বা ভীতি-নিবারক প্রভাব তখনই জন্ম নেয়, যখন সম্ভাব্য গণ্ডগোলকারীরা বুঝতে পারে-কারচুপি বা সহিংসতার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক, দৃশ্যমান ও সমানভাবে আইনপ্রয়োগ হবে। ফলে আস্থার প্রতীক হওয়া কেবল ভাবাবেগ নয়, এটি প্রক্রিয়াগত নকশা, স্বচ্ছতা ও বাস্তব প্রয়োগের ফাংশন; যার অনুপস্থিতিতে সেনাবাহিনীর মর্যাদা প্রতীকী হয়ে পড়ে, কার্যকারিতা কমে যায়।
ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের কার্যকারিতা: ১৯৯১/১৯৯৬/২০০১-এর অভিজ্ঞতা দেখায়-শৃঙ্খলাবদ্ধ, ক্ষমতাসম্পন্ন ও দ্রুত-প্রতিক্রিয়াশীল সেনা-উপস্থিতি ভোটদানে আস্থা বাড়ায়। ২০১৮-তে সীমিত ম্যান্ডেটের ফলে উপস্থিতি ‘সিম্বলিক’ হয়ে পড়ে। শিক্ষা: (ক) কেন্দ্র-পর্যায়ে স্পষ্ট ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’-কখন সতর্কতা, কখন আটক, কখন পুনঃভোটের সুপারিশ; (খ) ‘এসক্যালেশন-ম্যাট্রিক্স’-ঘটনা-স্তর নির্ভর প্রতিক্রিয়া (ভাঙচুর/দখল/হামলা/ব্যালট কারচুপি); (গ) একীভূত কমান্ড-সেন্টার-ইসির সঙ্গে রিয়েল-টাইম লিঙ্ক, ভিডিও-ফিড ও জিপিএস-ট্র্যাকিং। তবেই ভোটকক্ষের ‘ফ্লোর কন্ট্রোল’ সম্ভব হয় এবং কারচুপির উইন্ডো সঙ্কুচিত হয়।
প্রশাসন ও পুলিশের দলীয়করণ যেন না থাকে। নির্বাচনের আগে ও চলাকালে প্রশাসন/পুলিশের পক্ষপাত অথবা ভয়-ভীতি সৃষ্টির অভিযোগ একটি ‘স্ট্রাকচারাল ডিফেক্ট’-যেখানে বদলির রাজনীতি, মামলা-ব্যবস্থার রাজনৈতিক ব্যবহার, এবং ক্যারিয়ার-ইনসেনটিভের বিকৃতি মিলেমিশে প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতাকে ক্ষয় করে। এই ক্ষয় যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন কেবল নির্বাচন কমিশনের আহ্বান বা প্রশাসনিক সার্কুলার দিয়ে নিরপেক্ষতা ফেরানো যায় না; দরকার ‘থার্ড-পার্টি এনফোর্সমেন্ট’। এখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি মধ্যস্থ শক্তি হিসেবে কাজ করে: (ক) পুলিশি একচ্ছত্রতা কমে, (খ) নির্বাচনী এলাকায় ‘চেকস-অ্যান্ড-ব্যালান্সেস’ তৈরি হয়, (গ) প্রিসাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের ওপরে চাপ কমে। তবে শর্ত হল—সেনাবাহিনীর দায়িত্বসংজ্ঞা স্পষ্ট, নাগরিক অধিকার রক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ-নির্দেশনা দৃশ্যমান এবং যেকোনো অভিযোগের দ্রুত স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা রাখতে হবে; নইলে ‘মিলিটারাইজড পোলিং’ নিয়ে পাল্টা অবিশ্বাস জন্মাতে পারে।
বৈশ্বিক গণতন্ত্রের মানদণ্ড এখন কেবল ভোটগ্রহণে সীমাবদ্ধ নয়; ‘ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল’-এই তিন স্তরের গ্রহণযোগ্যতা একসাথে নিশ্চিত করতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কমনওয়েলথ বা জাতিসংঘ-সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকেরা যখন সেনাবাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতির কথা বলেন, এর পেছনে তিনটি যুক্তি কাজ করে: (ক) প্রশাসন-নিরপেক্ষতার ঘাটতি পূরণের ‘ট্রাস্ট-সাপ্লিমেন্ট’, (খ) সহিংসতা-প্রবণ নির্বাচনী ভূগোল-গ্রামীণ/শহুরে ‘হটস্পট’-এ দৃশ্যমান শক্তি প্রক্ষেপণ, এবং (গ) ফল-গ্রহণযোগ্যতার ন্যূনতম শর্ত পূরণ। দেশীয় সক্ষমতার প্রশ্নে তাই প্রয়োজন ‘হাইব্রিড মডেল’: নির্বাচন কমিশনের নীতিনির্ধারণ; মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-র্যাব-আনসার-আর নিরপেক্ষ ‘ওভারওয়াচ’ ও ‘র্যাপিড কারেকটিভ’ হিসেবে সেনাবাহিনী। এই বিন্যাস আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে সহায়ক, কারণ দায়িত্ববণ্টন স্পষ্ট, জবাবদিহি নির্ধারিত এবং মানবাধিকার-সম্মত আচরণবিধি প্রয়োগযোগ্য হয়।
এদিকে ইন্টারনেট বন্ধ করা আধুনিক কালে নির্বাচনী স্বচ্ছতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আঘাত; এতে ভোটকেন্দ্রের ‘আই-উইটনেস’ হারিয়ে যায়। করণীয়: (ক) নির্বাচনী সময়ে ইন্টারনেট-শাটডাউন নিষিদ্ধ করার আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক প্রোটোকল; (খ) সেনাবাহিনীর সাইবার/সিগন্যাল কর্পসকে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার মনিটর’ হিসেবে নিয়োগ-কোনো এলাকার ব্যান্ডউইথ অস্বাভাবিকভাবে কমলে তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট; (গ) কেন্দ্রভিত্তিক সিসিটিভি-ফিডের নির্ভরযোগ্য ব্যাকআপ (লোকাল + ক্লাউড), যাতে ‘ব্ল্যাকআউট’ হলেও প্রমাণ থাকে। এতে ডিজিটাল কারচুপির ঝুঁকি কমে এবং তথ্যপ্রবাহে জনগণের আস্থা বজায় থাকে। তরুণ ভোটারের আস্থা-পলিটিক্যাল ইফিকেসি, প্রমাণভিত্তিক সংকেত ও অংশগ্রহণের নতুন ব্যাকরণ তৈরি করবে। ৪ কোটিরও বেশি তরুণ ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আনতে হলে ‘বিশ্বাসযোগ্য সংকেত’ দিতে হবে-কথায় নয়, প্রমাণে। যেমন: প্রথম দুই ঘণ্টায় প্রতিটি কেন্দ্রে সেনা-টহল দৃশ্যমান; সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ ‘ইনসিডেন্ট ড্যাশবোর্ড’; অভিযোগ করলে ৩০ মিনিটে টিম পৌঁছাবে-এমন এসএলএ (Service Level Agreement) প্রকাশ। পাশাপাশি তরুণদের জন্য ভোটকেন্দ্রে কিউ-ম্যানেজমেন্ট, বিশেষ সহায়তা ডেস্ক, প্রতিবন্ধীবান্ধব ব্যবস্থা ও নিরাপদ যাতায়াত কোরিডর ঘোষণা করা যেতে পারে। যখন তরুণ দেখে ‘সিস্টেম আমার জন্য প্রস্তুত’, তখনই তাদের রাজনৈতিক সক্ষমতার বোধ (political efficacy) জাগে। সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ পাহারা এই বার্তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
বাংলাদেশের নির্বাচন আঞ্চলিক পরিসরে ‘সিকিউরিটি এক্সটারনালিটি’ তৈরি করে-শরণার্থী প্রবাহ, সীমান্ত-টানাপোড়েন, লজিস্টিকস করিডর, ব্লু-ইকোনমি। সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ইমেজ দুইভাবে গুরুত্বপূর্ণ: (ক) প্রতিবেশী ও বৈশ্বিক শক্তির কাছে স্থিতিশীলতার বার্তা-নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণযোগ্য; (খ) কূটনৈতিক দরকষাকষিতে নৈতিক উচ্চভূমি-‘আমরা প্রক্রিয়া-নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে সশস্ত্র বাহিনীকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত করেছি’। এতে নিষেধাজ্ঞা/ভিসা-নীতির ঝুঁকি কমে, উন্নয়ন সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বাড়ে। অর্থনীতি অনিশ্চয়তাকে অপছন্দ করে। একতরফা নির্বাচনের আশঙ্কা ‘পলিটিক্যাল রিস্ক প্রিমিয়াম’ বাড়ায়-ঋণ ব্যয়, বীমা, ইনভেন্টরি কস্ট সব ওঠে। সমাধান: নির্বাচনী ক্যালেন্ডার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড স্টেবিলিটি প্লেবুক’ প্রকাশ-কোন জেলায় কত প্লাটুন, শিল্পাঞ্চলে ২৪/৭ কুইক-রেসপন্স, পোর্ট/কাস্টমস/হাইওয়েতে সুরক্ষা কোরিডর। চেম্বার/বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে জয়েন্ট কমান্ড সেল খোলা যায় যাতে সরবরাহ-শৃঙ্খল ব্যাহত না হয়। সেনা-নেতৃত্বাধীন এই স্থিতিশীলতা সংকেত বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়ায়, বাজারে ভোলাটিলিটি কমায়।
গ্রামে ‘লোকাল নেটওয়ার্ক’-ইউনিয়ন-ভিত্তিক তদারকি, চৌকিদার-দারোয়ান, দলীয় প্রভাবশালী-ভোটকেন্দ্র দখলকে সহজ করে। প্রতিকার: (ক) মাইক্রো-জিওগ্রাফিক রিস্ক স্কোরিং-গত নির্বাচনের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভূগোলগত দূরত্ব মিলিয়ে কেন্দ্রে-ভিত্তিক ঝুঁকিমাত্রা; (খ) ঝুঁকি-উচ্চ কেন্দ্রে আগাম ‘স্ট্যাটিক’ সেনা-পোস্ট; (গ) নারী-ভোটারের জন্য আলাদা নিরাপদ প্রবেশপথ ও টহল; (ঘ) রাত-সার্ভেইলেন্স-গ্রামীণ রাস্তায় মোবাইল প্যাট্রোল ও ড্রোন নজরদারি। এতে ‘ব্যালট বাক্স ভরার’ ঐতিহ্যগত অবকাশ কমে, এবং গ্রামীণ ভোটার সাহস পায়।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদ যেন এক সুস্পষ্ট বার্তা-সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে এখানে “নিরাপত্তা” শব্দের অর্থ কেবল বাহ্যিক হুমকি থেকে রক্ষা নয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রাখা, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করা। সংবিধান ভোটাধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা মানেই দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষতি, এবং নিরাপত্তার ঘাটতি তৈরি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যদি কেন্দ্রগুলো দখল হয়ে যায়, ভোটাররা ভয়ে ঘরে থাকে, বা ব্যালট আগেই ভর্তি হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের সেই মৌলিক অধিকার কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এটি শুধু ভোটের প্রসঙ্গ নয়, পুরো দেশের গণতান্ত্রিক অস্তিত্বের প্রশ্ন। এ ধরনের পরিস্থিতি রোধ করাই সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক দায়িত্ব। কারণ নিরাপত্তা মানে কেবল জীবন বাঁচানো নয়; মানুষের রাজনৈতিক অস্তিত্ব, নাগরিক অধিকার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও রক্ষা করা। সংবিধান জনগণের সার্বভৌমত্বের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আর জনগণের ভোট ছাড়া সেই সার্বভৌমত্বের কোনো অর্থ থাকে না।
সেনাবাহিনী যদি ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসে, তা কেবল রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নয়-বরং সংবিধান রক্ষার সরাসরি প্রয়াস। এটি হবে গণতন্ত্রকে মর্যাদা দেওয়া, জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন করা এবং দেশের ভবিষ্যৎকে সংহত করার এক বড় দায়িত্ব। এই দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে, নির্বাচন আর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। ফলে সেনাবাহিনীকে এই মুহূর্তে নিরপেক্ষভাবে এবং দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিতে হবে—যা হবে সাংবিধানিক কর্তব্য, নৈতিক দায়িত্ব এবং দেশের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি দায়বদ্ধতার স্বীকৃতি।
বাংলাদেশের মানুষ এখন অনন্তবর্তীকালনি সরকারের উপর গণতন্ত্রে বিশ্বাস রাখে। তবে হাসিনা আমলের বারবার প্রহসনমূলক নির্বাচন সেই বিশ্বাসকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যখন ভোটকেন্দ্রগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে, অথচ ফলাফল আগেই লেখা হয়ে যায়, তখন সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করে-আমাদের মতামতের কি কোনো মূল্য আছে? দীর্ঘ মেয়াদি এ ধরনের পরিস্থিতি গণতন্ত্রকে মৃতপ্রায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। জনগণ রাজনীতির প্রতি অসন্তুষ্ট হয়, বিমুখ হয় এবং ধীরে ধীরে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এই মুহূর্তে জাতির প্রত্যাশা একটাই-বর্তমান সরকার এবং সেনাবাহিনী দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে, ভোটকেন্দ্রকে নিরপেক্ষ করবে এবং নাগরিকদের নিরাপদ পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করবে। সরকার এবং সেনাবাহিনী যদি সত্যিকারের নির্বাচন আয়োজন করতে পারে, তারা কেবল একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং পুরো জাতির ভবিষ্যৎকে বাঁচাবে। এটি হবে দেশের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক, যা ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক মান, জনগণের আস্থা এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা সবকিছুকে পুনঃসংহত করবে। অন্যথায়, বাংলাদেশ আবারও অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক সংকট এবং গণতান্ত্রিক ব্যর্থতার অন্ধকারে ঠেলে যাবে। প্রতারণামূলক নির্বাচনের কারণে রাষ্ট্রব্যবস্থা দুর্বল হবে, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং জনগণ রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই আজকের এই মুহূর্তে সরকার ও সেনাবাহিনীর দায়িত্ব শুধু নির্বাচন নয়, বরং জাতিকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা। এই পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হলে আগামী প্রজন্ম কৃতজ্ঞ থাকবে; ব্যর্থ হলে ইতিহাসের কঠিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
সরকার এবং সেনাবাহিনী যদি নিরপেক্ষ ও দৃঢ় অবস্থান দেখায়, তবে তারা কেবল ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের গণতন্ত্রকে নতুন প্রাণ দেবে, জনগণের আস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে এবং জাতীয় ভবিষ্যতের রূপটাই স্থির করবে। এটি হবে এক যুগান্তকারী অধ্যায়, যা ইতিহাসে উজ্জ্বলভাবে লেখা থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
পাঠকের মতামত:
- ‘আমাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন করা, এটা এখন পরিষ্কার’
- ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
- গাজীপুরে পৃথক স্থানে যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিল
- আমিরে জামায়াতকে নিয়ে ওসির আপত্তিকর মন্তব্যে তোলপাড়, তদন্তে নেমেছে পুলিশ
- জামালপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
- মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় বাদিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
- বাগেরহাটে ৪০০ চায়না দুয়ারী জাল জব্দ, আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস
- টুনিরহাট গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে নওগাঁ
- ছোট সঞ্চয়, বড় নিরাপত্তা: অর্থ ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা
- সেনাবাহিনীর শক্ত ভূমিকাই পারে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে
- মাদক সেবনের দায়ে যুবকের কারাদণ্ড
- সুবর্ণচরে বয়সের তথ্য গোপন করে গ্রাম পুলিশে চাকরি করছেন আ.লীগ নেতা
- মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে সার নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক
- একসঙ্গে ৩৫০টি সোনালিকা ট্রাক্টর হস্তান্তর করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বাংলাদেশের নাম
- সাভারে আদিবাসী কল্যাণ সমিতির কার্য়করী কমিটির পরিচিতি সভা
- বাগেরহাটে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য র্যালি
- ভ্যান-অটোর মুখোমুখি সংঘর্ষ: নিহত ৪, আহত ৪
- কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীতে পড়ে ব্যবসায়ীর নিখোঁজ, লাশ উদ্ধার
- কাপাসিয়ায় বিএনপির উঠান বৈঠক
- নাটোরের গোরস্থানে পাওয়া গেলো মাগুরার ইটভাটার ম্যানেজারের লাশ
- ব্যাংক কার্ড ছাড়াই সহজ মাসিক কিস্তিতে কেনা যাবে অনার স্মার্টফোন
- গোপালগঞ্জে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতিসহ ৫৯ নেতার পদত্যাগ
- ডিএমএফ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন বৈশাখী টিভির তন্ময়
- ডেঙ্গুতে গৃহবধূর মৃত্যু, নার্সদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ
- বিকেলে বাধা প্রদান, সকালেই মন্দিরসহ প্রতিমা গায়েব
- চিঠি দিও
- চাঁদপুরে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন : গ্রেফতার ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে
- কালীগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
- ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অ্যাম্বুলেন্সে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫
- ‘শিল্পের প্রতি টান থেকেই কলকাতায় যাওয়া’
- ছোট সঞ্চয়, বড় নিরাপত্তা: অর্থ ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা
- ‘ক্ষমতা ছেড়ে দিন, এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন করে দেবো’
- শাপলা কুঁড়ির আসর সিলেট জেলা শাখার অনুমোদন
- ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়কেও দায় নিতে হবে’
- প্রকাশিত হয়েছে এস এম জাহিদ হাসানের ভ্রমণগ্রন্থ ‘চলতি পথের বাঁকে’
- সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে দিনরাত কথা বলছে ‘বিবর্তন যশোর’
- র্যাংকিংয়েও আফগানিস্তানকে টপকে গেল বাংলাদেশ
- ফেক আইডি থেকে উস্কানিমূলক সাম্প্রদায়িক পোস্ট, পাথরঘাটায় সংবাদ সম্মেলন
- খ্যাতিমান সাংবাদিক রতন সরকারের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী আজ
- পাকিস্তানের মাটিতে শেখ মুজিবের ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি টিকবে না
- ফোবানার নতুন সভাপতি বেলাল, নির্বাহী সচিব রউফ
- রিজার্ভ ছাড়ালো ৩২ বিলিয়ন ডলার
- ‘বাংলাদেশের জার্সি আর গায়ে দেওয়া হলো না’
- সেনাবাহিনীর শক্ত ভূমিকাই পারে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে
- ‘ভারত নোংরা খেলা খেলতে পারে, দ্বিমুখী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত পাকিস্তান’
-1.gif)








