E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রংপুর অঞ্চলের কৃষি ও শিল্প সম্ভাবনা: একটি সমন্বিত পর্যালোচনা

২০২৫ অক্টোবর ২৯ ১৭:২৫:১০
রংপুর অঞ্চলের কৃষি ও শিল্প সম্ভাবনা: একটি সমন্বিত পর্যালোচনা

ওয়াজেদুর রহমান কনক


বৃহত্তর রংপুর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, যা ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে বৈচিত্র্যময়। এটি দেশের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১০ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সংযোগ রেখেছে। অঞ্চলটি নদীমুখী উপত্যকা এবং সমতল ভূমি, হাওর ও জলাভূমির সমন্বয়ে গঠিত। তিস্তা নদী বৃহত্তর রংপুরের কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার প্রাণস্থলী, যা প্রায় ৭০০০০ হেক্টর জমি সেচিত রাখে। তিস্তা নদীর পানি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপিত হলে ধান, গম, আলু ও ভুট্টার উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। নদীজলাধার ছাড়াও পদ্মা, করতোয়াল, ধলেশ্বরী এবং গঙ্গা নদীর অবদান কৃষি, পরিবহন এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

রংপুরের মাটি বৈচিত্র্যময়। লাল মাটি প্রধানত আলু, গম, শাকসবজি ও তেলের ফসলের জন্য ফলপ্রসূ। ভিউমাটি ধান ও ভুট্টার জন্য আদর্শ, এবং দোঁহ বা করলা মাটি আর্দ্র-উর্বর অঞ্চলে প্রাচুর্যপূর্ণ ফসল উৎপাদনের সুযোগ দেয়। জেলার প্রায় ৭৫ শতাংশ জমি ধানের চাষের উপযোগী। সাম্প্রতিক কৃষি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৪.৫ থেকে ৫ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদিত হয়, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আলু উৎপাদন প্রায় ১.২ মিলিয়ন টন, গম উৎপাদন ০.৭ মিলিয়ন টন এবং ভুট্টার উৎপাদন প্রায় ০.৫ মিলিয়ন টনের মধ্যে থাকে। এই ফসলগুলোর উৎপাদন সরবরাহ চক্রে প্রভাব ফেলছে, যা স্থানীয় বাজার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে খনিজ উপাদানও উল্লেখযোগ্য। রংপুরে কয়লা, বালু, চুনাপাথর এবং হালকা ক্ষুদ্র খনিজ বিদ্যমান, যা শিল্পায়নের জন্য সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। তবে শিল্পায়ন এখনও সীমিত এবং খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার হয়নি। বনাঞ্চল মোট এলাকার প্রায় ৫ শতাংশ, যা পরিবেশ ভারসাম্য, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বনাঞ্চল হ্রাস পেলে মাটি ক্ষয়, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

জলাশয় এবং হাওর বৃহত্তর রংপুরের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। প্রায় ২০০টি উল্লেখযোগ্য জলাশয় এবং হাওর রয়েছে, যা বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্যচাষ, এবং কৃষিজমির জল সংরক্ষণে অপরিহার্য। এই জলাশয়গুলোতে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও মাছ চাষের উন্নত কৌশল ব্যবহার করে বছরে প্রায় ৪৫,০০০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও, হাওর অঞ্চলের জলাধার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এবং পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতির জন্য সম্ভাবনা রাখে।

বৃহত্তর রংপুরের জলবায়ু সাধারণত উষ্ণমৃদু। শীতকালে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। গড় বাৎসরিক বৃষ্টিপাত প্রায় ১২০০ মিমি, যা কৃষি ও জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে হঠাৎ বন্যা বা খরা অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন ও জনজীবনে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে তিস্তা নদী এবং অন্যান্য নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ না হলে ফসল ও বসতির জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ১৩.৫ মিলিয়ন, যার ৭০ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রায় ৬৫ শতাংশ কৃষি নির্ভর, ২০ শতাংশ শিল্প এবং ১৫ শতাংশ সেবা খাত ভিত্তিক। অর্থনৈতিক কাঠামো প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৃষি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। নদী, মাটি, জলাশয় এবং খনিজ সম্পদের কার্যকর ব্যবহার না হলে স্থানীয় অর্থনীতি, খাদ্য উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়তে পারে।

উন্নয়ন সম্ভাবনা বিবেচনা করলে, বৃহত্তর রংপুরে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কৃষি-প্রযুক্তি সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে। সীমান্তবর্তী অবস্থান ব্যবসা ও রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য সুবিধাজনক। স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারের সমন্বিত উদ্যোগে নদী নিয়ন্ত্রণ, হাওর পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বনাঞ্চল সংরক্ষণ এবং খনিজ সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

বৃহত্তর রংপুর বাংলাদেশের উত্তরের একটি কৌশলগত ও ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। এটি দেশের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১০ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত এবং সীমান্তবর্তী অবস্থানকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রাকৃতিক দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অঞ্চলটির ভৌগোলিক অবকাঠামো নদীমুখী উপত্যকা, সমতল ভূমি, হাওর এবং জলাশয়ের সমন্বয়ে গঠিত, যা স্থানীয় কৃষি, পানি সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য। তিস্তা, পদ্মা, ধলেশ্বরী, গঙ্গা এবং করতোয়াল নদী অঞ্চলটির প্রাণনালী হিসেবে বিবেচিত, যেগুলো কেবল কৃষি উৎপাদন নয়, বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, পরিবহন এবং অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপেও নির্ভরশীল।

রংপুরের মাটি বৈচিত্র্যময় এবং এর উর্বরতা কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে অঞ্চলটির প্রধান শক্তি। লাল মাটি আলু ও গমের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত, ভিউমাটি ধান ও ভুট্টার উৎপাদনে কার্যকর, এবং দোঁহ ও করলা মাটি আর্দ্র অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে। এই মাটির বৈচিত্র্য কৃষি পণ্যের পরিমাণ ও মান উভয়েই প্রভাব ফেলে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনে। তবে, মাটি সংরক্ষণ, সেচ ব্যবস্থা এবং হাওরের জলস্তরের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে উৎপাদন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে।

প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে খনিজ উপাদান, বনভূমি, হাওর এবং জলাশয় স্থানীয় অর্থনীতি ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রংপুরের বনাঞ্চল যদিও মোট এলাকার মাত্র ৫ শতাংশ, তবে এটি পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা, মাটির ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাওর এবং জলাশয় কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অপরিহার্য। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাওরের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪৫,০০০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন সম্ভব, যা স্থানীয় ও জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অঞ্চলের জলবায়ু উষ্ণমৃদু এবং মৌসুমি বৈচিত্র্যসহ। শীতকালে গড় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রীষ্মকালে ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। বাৎসরিক গড় বৃষ্টি প্রায় ১২০০ মিমি। এ ধরনের জলবায়ু কৃষি ও বসতি উভয়ের জন্য সুবিধাজনক হলেও হঠাৎ বন্যা বা খরা জনজীবন এবং ফসলের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।

জনসংখ্যার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৃহত্তর রংপুরে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩.৫ মিলিয়ন, যার ৭০ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করে। অর্থনৈতিক কাঠামো প্রধানত কৃষি নির্ভর (৬৫%), শিল্প (২০%) এবং সেবা খাত (১৫%) ভিত্তিক। এই কাঠামো প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৃষি উৎপাদনের উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। নদী, মাটি, হাওর, বন এবং খনিজ সম্পদের কার্যকর ব্যবহার না হলে অর্থনীতি, খাদ্য উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।

সার্বিকভাবে, বৃহত্তর রংপুরের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নের মূল ভিত্তি। নদী, মাটি, বন, হাওর ও খনিজ সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং পরিকল্পিত নীতি গ্রহণ এ অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।

বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ তার অর্থনীতি, সামাজিক কাঠামো এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। নদী, হাওর, জলাশয়, উর্বর মাটি, বনাঞ্চল এবং খনিজ সম্পদ একত্রিতভাবে অঞ্চলটিকে একটি উচ্চ সম্ভাবনাময় উন্নয়ন ক্ষেত্র হিসেবে উপস্থাপন করে। তিস্তা, পদ্মা, ধলেশ্বরী ও করতোয়া নদী কেবল কৃষি ও সেচ ব্যবস্থায় অবদান রাখে না, বরং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাওর এবং জলাশয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে কাজ করে, যা বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্যচাষ এবং পর্যটন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

মাটি বৈচিত্র্য, যা লাল মাটি, ভিউমাটি এবং দোঁহ মাটির সমন্বয়ে গঠিত, কৃষি উৎপাদনে সুষম অবদান রাখে। ধান, আলু, গম ও ভুট্টা চাষে এই মাটির উর্বরতা সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থানীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত। বনাঞ্চল যদিও মোট এলাকার মাত্র ৫ শতাংশ, তবে এটি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, মাটির ক্ষয় রোধ, জলাধার রক্ষণাবেক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। খনিজ সম্পদ যেমন কয়লা, চুনাপাথর এবং বালু শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে, যদি সেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা হয়।

অঞ্চলের জলবায়ু, যা উষ্ণমৃদু এবং মৌসুমী বৈচিত্র্যযুক্ত, কৃষি, জনবসতি এবং পরিবেশের জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই সৃষ্টি করে। শীতকালীন তাপমাত্রা এবং গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার নিয়মিত ভিন্নতা, পাশাপাশি প্রায় ১২০০ মিমি বাৎসরিক বৃষ্টিপাত, কৃষির জন্য সহায়ক হলেও বন্যা বা খরার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর নদী নিয়ন্ত্রণ, সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং হাওর পুনঃপ্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।

জনসংখ্যার পরিসংখ্যান ও অর্থনৈতিক কাঠামো দেখায়, বৃহত্তর রংপুরের প্রায় ১৩.৫ মিলিয়ন মানুষ, যার ৭০ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রায় ৬৫ শতাংশ কৃষি নির্ভর, ২০ শতাংশ শিল্প এবং ১৫ শতাংশ সেবা খাত ভিত্তিক। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন গভীরভাবে সংযুক্ত। সঠিক নীতি, পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সম্পদগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজে লাগানো সম্ভব।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে তাকালে, বৃহত্তর রংপুরে কৃষি আধুনিকীকরণ, শিল্পায়ন সম্প্রসারণ, খনিজ সম্পদের ব্যবহার, বন ও জলাশয়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সীমান্তবর্তী অবস্থান থেকে বাণিজ্য সম্প্রসারণে অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে। অঞ্চলটিতে কৃষি ও শিল্প খাতের সমন্বয়, তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল অবকাঠামোর সম্প্রসারণ এবং টেকসই নগরায়ন পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে রংপুরকে উত্তরবাংলার একটি অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর, পরিবেশবান্ধব এবং সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

সর্বোপরি, বৃহত্তর রংপুরের উন্নয়নকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাবে না; এটি ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক এবং সামাজিক দিক থেকে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজন। নদী, হাওর, মাটি, বন এবং খনিজ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, প্রাকৃতিক ঝুঁকি মোকাবেলা এবং জনসম্পদের উন্নয়ন নিশ্চিত করলে বৃহত্তর রংপুর হবে একটি টেকসই, প্রগতিশীল এবং আন্তর্জাতিক মানের উন্নয়ন মডেল হিসেবে উদাহরণযোগ্য অঞ্চল।

রংপুর অঞ্চলের কৃষি ও শিল্প সম্ভাবনা সম্পর্কিত তথ্যের উৎস মূলত সরকারি, আন্তর্জাতিক এবং গবেষণা-নির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নথি ও প্রতিবেদন থেকে সংগৃহীত। এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন, জলবায়ু, মাটি, শ্রমশক্তি, শিল্পায়ন, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের তথ্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এর বেশিরভাগ প্রাথমিক তথ্য এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (DAE), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC), পানি উন্নয়ন বোর্ড (BWDB), এবং পরিকল্পনা কমিশনের প্রকাশিত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও দারিদ্র্য বিমোচন নথি থেকে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), বিশ্বব্যাংক, এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB)-এর প্রকল্পভিত্তিক গবেষণাতেও রংপুর অঞ্চলের উৎপাদনশীলতা, দারিদ্র্যের মাত্রা, কৃষিনির্ভর জীবনযাত্রা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বিস্তৃত বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। বিশেষ করে তিস্তা অববাহিকার পানি ব্যবস্থাপনা ও সেচব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কৃষি পরিকল্পনার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।

এছাড়া রংপুর অঞ্চলের শিল্প সম্ভাবনা, যেমন কৃষি-ভিত্তিক শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বস্ত্র শিল্প, এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা বিষয়ে তথ্য সংগৃহীত হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (BSCIC), শিল্প মন্ত্রণালয়, এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA)-এর প্রকাশিত ডেটা থেকে।

স্থানীয় গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং এনজিওদের ক্ষেত্রভিত্তিক গবেষণাও এই তথ্যসমূহকে বাস্তব চিত্রে প্রতিফলিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট, রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, এবং BRAC বা Practical Action-এর মতো সংগঠনগুলোর মাঠ পর্যায়ের জরিপ এই অঞ্চলের কৃষি ও শিল্পায়নের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

তথ্য সংগ্রহের সময়কাল মূলত গত এক দশকের মধ্যে, যেখানে ২০১১ সালের জনগণনা, ২০১৬ সালের কৃষি শুমারি, এবং ২০২২ সালের সর্বশেষ কৃষি উৎপাদন প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব উৎসের সম্মিলিত বিশ্লেষণে বোঝা যায়, রংপুর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা, এবং নবীন শিল্পায়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দ্রুত বিকাশমান অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে।

তথ্যসূত্রগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রংপুরের উন্নয়ন কেবল সরকারি প্রকল্পের ফল নয়; বরং এটি স্থানীয় উদ্ভাবন, কৃষক-শিল্প উদ্যোক্তা, এবং গবেষণা-নির্ভর উদ্যোগের সমন্বয়ে গঠিত একটি ধীর কিন্তু স্থিতিশীল অগ্রগতি। এই প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিতে সঠিক তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা, স্বচ্ছ বিনিয়োগ নীতি, এবং গবেষণা-সমর্থিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতের রংপুরকে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক বিকাশের একটি মডেল অঞ্চলে রূপ দিতে পারে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

২৯ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test