E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কালিদাস বৈদ্য

২০২৫ নভেম্বর ১৪ ১৭:৪৯:৩৪
কালিদাস বৈদ্য

শিতাংশু গুহ


কালিদাস বৈদ্য। একদা তিনি পুরান ঢাকায় থাকতেন। পেশায় ডাক্তার। ঢাকায় ডাক্তারী করেছেন। পরে কলকাতা চলে গেছেন। কবে, কি কারণে তিনি ঢাকা ছাড়েন আমার জানা নেই। তবে ঢাকা থাকতে আমরা তার নাম শুনেছি। তার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ছিলো, কিন্তু ভয়ে কেউ কথা বলতো না? তখন শুনেছি, তিনি হিন্দুদের জন্যে ‘বঙ্গভূমি’ নামে একটি পৃথক বাসভূমি’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছেন। ১৯৯০ পর্যন্ত ঢাকা থাকাকালে আমি একজন হিন্দুকেও পাইনি যিনি প্রকাশ্যে না হোক, অন্তত: গোপনে বঙ্গভূমি’র জন্যে কাজ করেছেন? ১৯৮৮ সালে একদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে দেখি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অর্থাৎ ফরিদপুর থেকে বরিশাল, খুলনা, যশোরে অনেক হিন্দুকে বঙ্গভূমির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের ভাগ্যে কি ঘটেছিলো জানিনা, তবে বুঝলাম, হিন্দুরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে নুতন অস্ত্র হিসাবে ‘বঙ্গভূমি’ ব্যবহৃত হবে! তখন ‘এরশাদ হটাও’ আন্দোলন চাঙ্গা হচ্ছিলো। তাই, ‘তথাকথিত’ বঙ্গভূমি’র অভিযোগে আটককৃত হিন্দুদের বেশিদিন জেলে থাকতে হয়নি। ‘তথাকথিত’ বলার কারণ হচ্ছে, এই আন্দোলন কখনোই হিন্দুদের অনুপ্রাণিত করেনি বা হিন্দুরা কখনো এতে সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা চিন্তা করেনি। বস্তুত: এটি ছিলো ‘কাগুজে বাঘ’, বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়া কিছু হিন্দু কলকাতায় বসে রাজাউজির মারছিলেন। এদের না ছিলো সাংগঠনিক শক্তি, বা কর্মতৎপরতা।

একমাত্র কালিদাস বৈদ্য বা অন্য দু’একজন ছাড়া আর কোন নেতার নাম আমরা কখনো শুনিনি। এ ধরণের সংগঠন সাধারণত: সংশ্লিষ্টদের ক্ষতি করে। যেমন, ১৯৮৮ সালে হিন্দুদের ধরপাকড় করে হুসাইন মোহম্মদ এরশাদ একদিকে হিন্দুদের ক্ষতি করতে চেয়েছেন, অন্যদিকে ‘ইন্ডিয়া আইলো’ ধুঁয়া তুলে বিরোধীদের বিভ্রান্ত করে নিজে বাঁচতে চেয়েছেন। তার সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আরো একটি বিষয় হলো, বঙ্গভূমি আন্দোলন যে কখনো বাংলাদেশের বুকে আঁচড় কাটতে পারেনি এর প্রমান হলো, পরবর্তী কোন সরকারই এনিয়ে মাথা ঘামায়নি, বা কোন হিন্দু আর এনিয়ে আটক হয়নি। যদিও, বিডিআর-বিএসএফ ফ্ল্যাগ মিটিং-এ খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশ সরকার ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা দেয়ার অভিযোগের পাল্টা হিসাবে কখনো সখনো ‘বঙ্গভূমি’ প্রসঙ্গ এনেছে। ভারত কি কখনো এই আন্দোলনকে প্রশ্রয় দিয়েছে? এই প্রশ্নের আমেরিকান উত্তর হচ্ছে, ‘বুলশিট’। বাংলাদেশ বা ভারত সরকার কখনোই এটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি, জনগণও নয়, যদিও এরশাদ ও খালেদা জিয়া সরকার এটিকে ব্যবহার করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।

বঙ্গভূমি আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা কি? উত্তর হচ্ছে, কালিদাস বৈদ্য মারা যাবার সাথে সাথে বঙ্গভূমিও মারা গেছে। বঙ্গভূমি’র প্রতি আগ্রহ না থাকলেও কালিদাস বৈদ্য’র প্রতি হিন্দুদের মৌন সহানুভূতি ছিলো। কারণ, অত্যাচারিত হিন্দুরা দেখছে, তাদের জন্যে কেউ অন্তত: ভাবছে? হোক না সেই ভাবনাটা সময়োপযোগী নয় বা ‘ঘোড়ার আগে গাড়ী জুড়ে দেয়ার মত’? হয়তো, কালিদাস বৈদ্য আন্তরিক ছিলেন, তাই কোনকিছু চিন্তা-ভাবনা না করেই তিনি এ ধরণের একটি কর্মসূচি হাতে নেন। হয়তো, তার ধারণা ছিলো, ডাক দিলেই দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে? যেমন হিন্দুরা এতকাল ভেবে বসে আছে, ‘ইন্ডিয়া তাদের উদ্ধার করবে’? একে বলে, ‘ভ্রান্তি বিলাস’। কুয়েত উদ্ধারে আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমণ করে তখন ইরাকীরা ভেবেছিলো ‘আবাবিল পাখি’ এসে তাদের উদ্ধার করবে? বাস্তবে সেটা হয়নি, আবাবিল পাখিরা আরব্য উপন্যাসেই মানায়, বাস্তবে নয়? কালিদাস বৈদ্যও হয়তো তেমন অলৌকিক কিছু আশা করেছিলেন? কারণ, এ ধরণের একটি সংগঠনকে এগিয়ে নিতে যে কর্মতৎপরতা, মনন, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা বা ত্যাগ প্রয়োজন এর কোনটাই এর নেতাদের ছিলো বলে মনে হয়না।

আমি কখনো কালিদাস বৈদ্যকে দেখিনি। তার সাথে কোথাও আমার দেখা হয়নি। তবে একবার টেলিফোনে কথা হয়েছিলো। তখন তিনি শয্যাশায়ী। চলাফেরা করতে অক্ষম। সালটা ২০০৫। আমরা কলকাতায় ক্যাম্ব আয়োজিত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কিত এক সেমিনারে যোগ দিতে সেখানে যাই। দু’দিন ব্যাপী এই সেমিনার হয়েছিলো বালিগঞ্জে। তসলিমা নাসরিন, শিব নারায়ণ চক্রবর্তী এতে অংশ নেন। কালিদাস বৈদ্যের দু’একজন লোক এসেছিলেন। তারা অনেকের সাথে কথা বলেন। বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছিলেন তাদের সাথেও কথা বলেন। আমরাও কথা বলেছি। তাদের নাম আমার মনে নেই, অথবা তাদের কথাবার্তায় কেউ উজ্জীবিত হয়েছেন, এমন তথ্য আমার কাছে নেই! তবে তারা আমাকে কালিদাস বৈদ্যের সাথে কথা বলার অনুরোধ করেছিলেন। তারাই ফোন নাম্বার দেন, আমি কথা বলেছিলাম। কি কথা হয়েছিলো ঠিক মনে নেই, তবে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা, তিনিও ঠিক আমাকে ততটা আস্থায় নিয়েছিলেন বলে মনে হয়নি, তবে তিনি তার বাসায় যেতে বলেছিলেন। আমার সুযোগ হয়নি। তার সাথে কথা বলে আমার ধারণা হয়েছিলো, তিনি ভদ্রলোক, দেশের কথা ভাবেন। দুঃখ তো ছিলোই, কিছু করতেও চেয়েছিলেন, তবে সাধ থাকলেও সাধ্য ছিলোনা। আমার মনে আছে, তার লোকজনদের আমরা বলেছিলাম, নিয়মতান্ত্রিক পথে আসুন, তারা আমাদের সাথে দ্বিমত করেনি, তবে আমাদের পছন্দও করেনি। তারপরে আরো দু’তিনবার কলকাতা গেছি, তাদের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।

ভারতের 'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকা ২৪শে নভেম্বর ২০০২ সালে জলপাইগুড়ি থেকে 'পুন্:একত্রিত বঙ্গসেনার জ্বিহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকী' শীর্ষক একটি সংবাদে বলা হয়: 'ইসলামিক জ্বিহাদের বিরুদ্ধে শেষ যুদ্ধ' শিরোনামে বঙ্গসেনার একটি লিফলেট তাদের হাতে এসেছে। পত্রিকাটি বলেছে, ২৫শে মার্চ ১৯৮২ সালে পূর্ব-বাংলার হিন্দুদের নিয়ে 'বঙ্গসেনা' গঠিত হয়। এই গ্রূপ পুনর্গঠিত হয়ে হিন্দুদের জন্যে একটি আবাসভূমি গঠনের লক্ষ্যে ইসলামিক জ্বিহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছে। এই গ্রূপের স্বঘোষিত প্রধান সেনাপতি সত্তরোর্ধ কালিদাস বৈদ্য বলেছেন, "বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে তারা বিভিন্ন ইসলামী গ্রূপ ও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে পদ্মার পশ্চিমপাড়ে ছয়টি জেলা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হিন্দুদের জন্যে একটি স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করবো"। কালিদাস বৈদ্য জলপাইগুড়িতে কোন অজ্ঞাত নিবাস থেকে রিপোর্টারদের সাথে কথা বলছিলেন। তিনি তিস্তাব্রীজ সংলগ্ন বিবেকানন্দ পল্লীতে একটি সমাবেশের কথাও বলেন। কালিদাস বৈদ্য বলেন, ২০০১-র নির্বাচনের পর বাংলাদেশ থেকে তিন লাখের বেশি হিন্দু পালিয়ে ভারতে এসেছে। তিনি বলেন, মুসলমানের অত্যাচারে যারা এ পর্যন্ত পালিয়ে এসেছে তাদের জন্যে বাংলাদেশের ৬টি জেলা, খুলনা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও পটুয়াখালী নিয়ে তাদের এই আবাসভূমি হবে।

পত্রিকাটি বলেছে: বঙ্গসেনার পোশাক পরিহিত কলকাতার নীলকমল মন্ডল জানান যে, তারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্পে ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, এমনকি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। তার মতে এসব ক্যাম্পে গোপন প্রশিক্ষণ চলছে। ক্যাম্পগুলো কোথায় তারা তা বলতে অস্বীকৃতি জানান, যদিও বলেন, বাংলা, মহারাষ্ট্র, উত্তরাঞ্চল, বিহার, ঝাড়খন্ড ও অন্যত্র ঐসব ক্যাম্প অবস্থিত। পত্রিকা জানায়, প্রেস ব্রিফিং-এ রাষ্ট্রপতি পার্থ সামন্ত উপস্থিত ছিলেন না, এপ্রসঙ্গে কালিদাস বৈদ্য বলেন, নিরাপত্তার কারণে রাষ্ট্রপতি সর্বদা আত্মগোপনে থাকেন। নেতৃবৃন্দ তাদের আবাসভূমির নাম 'বঙ্গভূমি' এবং রাজধানী 'সামন্ত নগর' বলে উল্লেখ করেন, যদিও সামন্তনগর কোথায় তা তারা জানাননি। কালিদাস বৈদ্য জানান, তারা মুসলমানের বিরুদ্ধে নন, কিন্তু বিশ্বে যেভাবে ইসলামী মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে এর বিরুদ্ধে। তারমতে শুধু বাংলাতেই তাদের ৫লক্ষ ক্যাডার আছে, যারা হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায়? কিন্তু কিভাবে তারা একটি দেশ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন তা নিয়ে মুখ খুলেননি, যদিও অস্ত্র পেতে সমস্যা হবেনা বলে তাদের দৃঢ় মনোবল লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখ্য, তিস্তার পাড়ে বিবেকানন্দ পল্লীতে সমাবেশের কোন খবর জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কাছে নেই বলে তারা জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপারিন্ডেন্ট আনন্দ কুমার।

উইকিপিডিয়া জানায়, বঙ্গসেনা, ইংরেজি 'বেঙ্গল আর্মী' একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রূপ। এরা বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্যে একটি পৃথক আবাসভূমি গঠন করতে চায়। এর নেতা হচ্ছেন, কালিদাস বৈদ্য। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-র মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর চৌধুরী তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-র ডিরেক্টর জেনারেল অজয় রাজ্ শর্মা-র কাছে অভিযোগ তুলেন যে, বঙ্গসেনা সন্ত্রাসী গ্রূপ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। গ্লোবাল পলিটিশিয়ান পত্রিকায় খোদেজা বেগম নান্মী একজন ভারতকে বঙ্গসেনাদের সাহায্য করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। ২০০৬ সালের মার্চে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বঙ্গসেনার বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকান্ডে উদ্ধেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা বঙ্গভূমিকে তার দেশের স্বার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে বর্ণনা করেন। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রূয়ারি ভারত ৪শ'র বেশি বঙ্গসেনাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্র জানায়, ঐদিন বঙ্গসেনারা উত্তর ২৪ পরগনার বর্ডার সংলগ্ন 'হেলেঞ্চা' শহরে জমায়েত হচ্ছিলো এবং তারা সীমান্ত অতিক্রমের হুমকী দেয়।

জানুয়ারি ২০০৪ সালে বিডিআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম অঞ্চল এবং আশেপাশের ভারতীয় এলাকায় শান্তিবাহিনীর অবশিষ্ট ক্যাম্পের একটি তালিকা দেন তার ভারতীয় প্রতিপক্ষের কাছে। ওই তালিকায় বলা হয়, বঙ্গসেনা অন্যন্যদের যোগসাজোশে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। ২০০৭ সেপ্টেম্বরে মুখ্যত: আসামের দু'টি এনজিও, 'ডিফু সিটিজেন পিস্ ফোরাম' এবং 'করবী হিউম্যান রাইট্স ওয়াচ' অভিযোগ করে যে, বঙ্গসেনারা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত এবং এই গ্রূপ ঐ অঞ্চলের শান্তির জন্যে হুমকীস্বরূপ। তখন বাংলাদেশের ফরেন সেক্রেটারী শমসের মোবিন চৌধুরী এটা পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য তারা সহ্য করবেন না। 'অল ইন্ডিয়া মাইনোরিটি ফোরাম' যা মূলত: মুসলমানদের নিয়ে গঠিত, তখন বঙ্গভূমি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলো।

ওয়েবে আরো জানা যায়, মূলত: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মীর অত্যাচারে যেসব হিন্দু ভারতে যান, তাদের সহায়তার জন্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরপর ১৯৭৩ সালে বঙ্গভূমি গঠিত হয়। যদিও এই আন্দোলন তেমন কোন সমর্থন পায়নি। বিবিসি নিউজ ২০০১ সালে চিত্তরঞ্জন সুতার-কে বঙ্গভূমি'র সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। কালিদাস বৈদ্য ১৯৩৩ সালের পহেলা মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৫শে অক্টবর ২০১০-এ কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন।

চিত্ত রঞ্জন সুতার

চিত্ত রঞ্জন সুতার বরিশালের (বাখেরগঞ্জ, পিরোজপুর) লোক, তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং এমপি ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হ’ন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন। তিনি তফসিলি সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন এবং ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু’র উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তার সম্পর্কে জানে না, বা তাদের জানানো হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান অপরিসীম। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নাম জাতি বারবার নিলেও তিনি হতে পারতেন ৫ম জাতীয় নেতা। হননি, কারণ তিনি হিন্দু। তার প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যকার পুরো যোগাযোগ রক্ষা করতেন চিত্ত রঞ্জন সুতার। তাকে বলা হতো স্বাধীনতা যুদ্ধের সমন্বয়ক। ইন্দিরা গান্ধী ও তাজউদ্দীনের যোগসূত্র ছিলেন চিত্ত সুতার। বস্তুত যাবতীয় অর্থ তাঁর হাত দিয়েই লেনদেন হতো। ১৯৭১ সালে যেমন হিন্দুদের কদর ছিলো, ১৯৭২’র পর আস্তে আস্তে কদর কমে যায়, চিত্ত রঞ্জন সুতারের অবস্থাটা হয় আরো করুন। বলা হতো তিনি ‘র’ এজেন্ট এবং ইন্দিরা গান্ধীর কাছে হিন্দুদের জন্যে পৃথক আবাসভূমির জন্যে আবেদন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হয়তো এটি বিশ্বাস করেন, এবং তাকে মোটেও পাত্তা দেননি।

১৯৭৪’র কোন এক সময়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তিনি বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার ক’দিন আগে, ১১ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালে দেশত্যাগ করেন। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান তাঁর বাংলাদেশী পাসপোর্ট বাতিল করেন। এরপর তিনি আর কখনো দেশে ফিরে আসেননি। তবে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা সর্বদা তাঁর সাথে যোগাযোগ রাখতেন। শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে তিনি নিয়মিত দেখা করতেন। শেখ সেলিম নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু নিহত হলে যারা ভারতে আশ্রয় নেন, তারা প্রায় সবাই তার শরণাপন্ন ছিলেন। তিনি তখনও ছিলেন মূল যোগসূত্র। তিনি থাকতেন কলকাতার হিন্দুস্থান স্ট্রীটের একটি বাড়ীতে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হরেকৃষ্ণ দেবনাথ ছিলেন তার সার্বক্ষণিক সহচর, তিনি ১৯৭৫-র পর ভারত যান এবং আর ফিরে আসতে পারেননি, শুনেছি তিনি মারা গেছেন। বিবিসি নিউজ ২০০১ সালে চিত্তরঞ্জন সুতার-কে বঙ্গভূমি'র সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। যদিও বঙ্গভূমি নেতা কালিদাস বৈদ্য ও চিত্ত রঞ্জন সূতারের মধ্যে যোগাযোগ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। চিত্ত সূতার মারা গেলে যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ নিউইয়র্কে একটি শোকসভা করলে তা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়? তার জন্ম ২৩ মার্চ ১৯২৮ (বাখেরগঞ্জ), মৃত্যু ২৭শে নভেম্বর ২০০২ (দিল্লি)। গুজব রয়েছে যে, বঙ্গভূমির প্রেসিডেন্ট পার্থ সামন্ত আসলে চিত্ত রঞ্জন সুতার।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৪ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test