গণতন্ত্রের সন্ধিক্ষণ: ২৫ ডিসেম্বর ও তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে আজ ২৫ ডিসেম্বর, দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে ফেরা নতুন প্রত্যাশার সূচনা করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের নাম কেবল দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত নয়; এটি একটি আদর্শিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের দর্শন তিনি উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নয়, বরং রাজনৈতিক চর্চা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ধারণ করেছেন। তাঁর কাছে রাজনীতি কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ছিল না; বরং এটি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি নৈতিক লড়াই।
সংগঠক থেকে নেতৃত্বে উত্তরণ
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি দলকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করেন। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ এবং জেলা–উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি বিএনপিকে একটি তৃণমূলভিত্তিক সংগঠনে পরিণত করেন। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং কর্মীদের মূল্যায়নের ধারা দলের শক্তি দৃঢ় করে। এই কার্যকর সংগঠকসত্তা পরবর্তীতে নেতৃত্বের ভূমিকায় আরও পরিপক্বতা আনতে সহায়তা করেছে। তিনি সবসময় দলীয় নীতি ও আদর্শকে প্রাধান্য দিয়েছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ কখনো নয়।
এক-এগারো ও নির্বাসনের রাজনীতি
২০০৭ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। এক-এগারোর অগণতান্ত্রিক বাস্তবতায় দেশের রাজনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়লেও, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও জোরপূর্বক রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার মুখেও তিনি আপসহীন ছিলেন। চিকিৎসার অজুহাতে তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হলেও, বাস্তবে এটি রাজনৈতিক নির্বাসনই ছিল। দীর্ঘ প্রবাসজীবনে তিনি বিএনপিকে শুধু টিকিয়ে রাখেননি; দলকে ভাঙনের হাত থেকেও রক্ষা করেছেন। একাধিকবার দলকে নেতৃত্বশূন্য করার বা বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু তাঁর ধৈর্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে দল ঐক্যবদ্ধ থাকেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন—নেতৃত্ব মানে শুধু উপস্থিতি নয়; সংকটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই প্রকৃত নেতৃত্ব।
ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক রাজনীতি
তারেক রহমান বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে স্পষ্টভাবে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক করেছেন। তাঁর মতে, দেশের চলমান সংকটের মূল কারণ জনগণের ভোটাধিকার হরণ। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া টেকসই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণমুক্ত করার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এটি রাজনৈতিক দলকে আদর্শিক পথে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের চেয়ে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শাসক বা সরকারের কাজ হলো জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা; যারা এর বিপরীতে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণই শেষ সত্তা। তাই তারেক রহমানের রাজনীতিতে সর্বদা জনগণকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়।
তরুণ প্রজন্ম ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
তারেক রহমান সবসময়ই তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার পক্ষে ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিক্ষিত, মেধাবী ও চিন্তাশীল তরুণদের রাজনীতিতে আনার আহ্বান দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। দীর্ঘ প্রবাসে থেকেও তিনি দেশের প্রতিটি আন্দোলন ও কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কৌশল নির্ধারণ, সময়োপযোগী কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংকট তুলে ধরা—এই নেপথ্যের নেতৃত্ব বিএনপিকে রাজনীতির মূলধারায় টিকিয়ে রেখেছে।তরুণদের অংশগ্রহণ দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে নতুন ধারণা, উদ্ভাবনী কৌশল এবং নৈতিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটাতে পারে—এটাই তার বার্তা।
২৫ ডিসেম্বর: একটি প্রতীকী প্রত্যাবর্তন
আজ ২৫ ডিসেম্বর, তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে বিএনপি যে সংবর্ধনা আয়োজন করেছে, তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি দীর্ঘ অপেক্ষা, আবেগ এবং রাজনৈতিক প্রত্যাশার প্রতিফলন।রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফুট এলাকায় প্রস্তুতি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীদের আগমন প্রমাণ করে—তারেক রহমান আজও দলের রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের অনুপস্থিতি কাটিয়ে ওঠা, মাঠের রাজনীতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা—সবই তাঁর সরাসরি উপস্থিতির মাধ্যমে সম্ভব। পাশাপাশি, এটি সরকারবিরোধী রাজনীতিতে ভারসাম্য স্থাপন করবে।
১. রাজনৈতিক সচেতনতা ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ: প্রত্যাবর্তন সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে, ভোটাধিকার ও ন্যায্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে।
২. নেতৃত্ব পুনর্গঠন ও সংহতি: দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার পর তারেক রহমানের উপস্থিতি দলের ভেতরে নেতৃত্ব পুনর্গঠন এবং সংহতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
পরিশেষে, আজ বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫। শুধু একজন নেতার দেশে ফেরার দিন নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে—দমন-পীড়ন, মামলা কিংবা নির্বাসনের মাধ্যমে কোনো আদর্শ চিরকাল দমন করা যায় না। জনগণের আকাঙ্ক্ষাই ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারণ করে।
নিশ্চয়ই সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং গণতন্ত্রহীন বাস্তবতা বড় বাধা। তবে দীর্ঘ সংগ্রাম, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও আপসহীন অবস্থান তাঁকে এগিয়ে যেতে শক্তি দেবে। তাই বলা যায়, আজ ২৫ ডিসেম্বর একটি নতুন প্রত্যাশার সূচনা। যদি প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়; এটি গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ, নতুন নেতৃত্বের শক্তি এবং তরুণ প্রজন্মের আশা—সবকিছুর একক চিহ্ন। ২৫ ডিসেম্বর সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক নবজাগরণের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক : কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পাঠকের মতামত:
- নিউ ইয়র্কে সাত হাজার দণ্ডপ্রাপ্ত অভিবাসীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে
- দিপু দাসের বাড়িতে পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সমীর বসু
- শেখ হাসিনার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামানিক
- গোপালগঞ্জের ৩টি অসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৩১ প্রার্থী
- চরভদ্রাসনে বাল্কহেড থেকে পদ্মায় পড়ে সুকানী নিখোঁজ
- পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ট্রলি সরদারকে ছিনিয়ে আনলো একটি মহল, দুই পুলিশ আহত
- কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না মাটিখেকোদের
- গোপালগঞ্জে জিপি আই ইন্টার ডিপার্টমেন্ট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট
- দিনাজপুর সদর আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
- নড়াইল- ২ আসনে মনোনয়ন পেলেন এডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ
- দেশজুড়ে মব ভায়োলেন্সের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
- বিপন্ন বন্যপ্রাণী সুরক্ষা সচেতনতায় নতুন অ্যামেনিটি কিট উন্মোচন করল এমিরেটস
- রোসাটম টেকনিক্যাল একাডেমিতে বিদেশি পারমাণবিক বিশেষজ্ঞদের জন্য ইন্টার্নশিপ
- গণতন্ত্রের সন্ধিক্ষণ: ২৫ ডিসেম্বর ও তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন
- নড়াইলে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
- দীপু দাসের পরিবারের পাশে দাঁড়ালো বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদ
- মাদারীপুরে শাজাহান খানের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারা দেয়া যুবদল নেতার পদ স্থগিত
- মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবায় হাজিরের জন্য দুই লাখ নোটিস জারি
- নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না
- অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের
- আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রেস সচিব
- যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসা পুরোপুরি নিষিদ্ধের আহ্বান রিপাবলিকানদের
- ইত্তেফাকের ঐতিহ্য ও বর্তমানে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের অস্তিত্বের প্রশ্ন
- ক্রিসমাস উপলক্ষে স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করলে অভিবাসীরা পাবেন ৩ হাজার ডলার
- যুক্তরাষ্ট্রে ভুয়া পরিচয়পত্র বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশি যুবক
- ‘সোনা’ ফলছে মধুপুর শাল-গজারির লাল মাটিতে
- নবীনগরে তৃতীয়বারের মতো ইংরেজী বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
- সিলেটের জনপ্রিয় সংঙ্গীত শিল্পী হতে চান শর্মিলা বড়ুয়া
- সিরাজগঞ্জে প্রাইভেটকারে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ৪
- রংপুরে সেপটিক ট্যাংকে পড়ে মা-ছেলেসহ নিহত ৩
- চা শ্রমিকদের কেউ হামলার শিকার হয়নি, জানালেন বাগান পঞ্চায়েত
- পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ট্রলি সরদারকে ছিনিয়ে আনলো একটি মহল, দুই পুলিশ আহত
- প্রধানমন্ত্রীর সহযোগতিায় বাঁচাতে চায় তপন বেপারী
- ‘আয়নাঘরসহ সব গোপন বন্দিশালা বন্ধ করতে হবে’
- ‘বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো পুনর্গঠন করতে চাই’
- কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ, পাহাড়ধসে নিহত ২
- ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন সবচেয়ে সৎ রাজনীতিবিদ’
- গাংনীর ইউএনও’র বদলি আদেশ বাতিলের দাবিতে এবার মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন
- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে নিহত ৯
- এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ
- খুলনায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু
- জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকাদানের প্রস্তুতিমূলক সভা
- ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়ে কলাপাড়ায় ১৩০ পরিবারের ৭ দফা দাবিতে মানববন্ধন
- 'তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে'
- মহম্মদপুরে মানবতার সেবায় ‘ছায়া’
-1.gif)








