E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মেজর সিনহা হত্যা, ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল

২০২৫ জুন ০২ ১১:৫৭:৫১
মেজর সিনহা হত্যা, ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল

স্টাফ রিপোর্টার : কক্সবাজারে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।  একইসঙ্গে ৬ আসামির যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত।

এছাড়া প্রত্যেক আসামির ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ বহাল রাখা হয়েছে রায়ে।

সোমবার (২ জুন) বিচারপতি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মোহাম্মদ সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে গেল ২৯ মে বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষ হয়। একইসঙ্গে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেন।

এর আগে, গত ২৩ এপ্রিল এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়। ২১ এপ্রিল আলোচিত এ হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। একইসঙ্গে মামলার যাবতীয় নথি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর পরপর ৪টি গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হন মেজর সিনহা। ঘটনার পাঁচদিন পর আদালতে মামলা করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় র‍্যাব। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ ছাড়া কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান বাকি সাত আসামি। পরে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে আপিল করেন দণ্ডিতরা।

এর আগে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লিয়াকত আলী বেকসুর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। পটিয়ার অধিবাসী লিয়াকত আলী ঘটনার সময় বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক ছিলেন। পরে তাকে বরখাস্ত করা হয়। সে মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ডেথ রেফারেন্স গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে পৌঁছায়।

সিনহা ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য প্রায় এক মাস কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

তখন কক্সবাজারের পুলিশ বলেছিলেন, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন। পরে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাকে গুলি করেন। ঘটনার পাঁচ দিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র‍্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে র‍্যাব ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।

এ মামলার আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব।

অপরদিকে, সিনহা নিহতের ছয় দিন পর পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানার পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী ও শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী এপিবিএনের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা।

২০২১ সালেন ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‍্যাব-১৫-এর তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

২০২২ সালের ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়। সে বছর বিচারকার্যের প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন দুজন। তারা হলেন মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত। দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চার, তৃতীয় দফার তিন দিনে আট, চতুর্থ দফার দুই দিনে ছয়, পঞ্চম দফার তিন দিনে ১৫, ষষ্ঠ দফার তিন দিনে ২৪, সপ্তম দফার তিন দিনে পাঁচ ও অষ্টম দফায় তিন দিনে একজনের (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সাক্ষ্য নেওয়া হয়। নবম দফায় ১৫ আসামির সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

(ওএস/এএস/জুন ০২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test