E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

এক লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাঁটলিপিকার একেএম শহীদুজ্জামানের ৭ বছর কারাদণ্ড 

২০২৫ জুলাই ২৮ ১৮:৫৪:০৮
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাঁটলিপিকার একেএম শহীদুজ্জামানের ৭ বছর কারাদণ্ড 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : 

সাতক্ষীরার একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পাইয়ে দেওয়ার নামে নেওয়া এক লাখ ঘুষের টাকাসহ দুদকের হাতে আটককৃত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাঁটলিপিকার একেএম শহীদুজ্জামান টুটুলকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, সাত হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোঃ আশরাফুল ইসলাম এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামী শহীদুজ্জামান কাঠগোড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

সাজাপ্রাপ্ত শহীদুজ্জামান সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার পারকুমিরা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো: সোহরাব উদ্দিনের ছেলে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য অনুদান হিসেবে তিন লাখ টাকা পাওয়ার জন্য ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মেহেদী হাসান ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। আবেদনটি নিয়ে তিনি সাঁটলিপিকার এ কে এম শহীদুজ্জামানের অফিস কক্ষে যান। শহীদুজ্জামান আবেদনপত্রটিতে সিল এবং স্বাক্ষর করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ডাকেন। ৩০ শতাংশ হারে টাকা দিলে তাকে ওই অনুদান পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন শহীদুজ্জামান।

প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে তাকে তাৎক্ষণিক ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দেম। পরবর্তীতে শহীদুজ্জামান তাকে বলেন যে আরো ৫০ হাজার টাকা দিলে তাকে আরো দুই লাখ টাকা পাইয়ে দেবেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক যোগাযোগ করলেও শহীদুজ্জামান তাকে ঘোরাতে থাকেন এবং বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি উৎকোচ দিতে রাজি হন।

২০১৮ সালের ৩১ মে শহীদুজ্জামানের সাথে দেখা করলে ওই শিক্ষককে বাকি টাকা দ্রুত দেওয়ার জন্য তাগিদ দেন। বিষয়টি অনৈতিক বিবেচনা করে প্রধান শিক্ষক দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। ওই বছরের ৩ জুন প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান খুলনার দুদক পরিচালকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য দুদক কর্মকর্তারা ফাঁদ পাতেন। ২০১৮ সালের ১২ জুন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ কার্যালয়ে ওঁৎ পাতেন দুদক কর্মকর্তারা। শ্রান্তি বিনোদনের ছুটিতে থাকলেও ঘুষের লোভে শহীদুজ্জামান ওই দিন অফিসে আসেন। ওই দিন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান শহীদুজ্জামানের কক্ষে প্রবেশ করে পূর্বোল্লিখিত ৫০ হাজার টাকা দেন। তখন শহীদুজ্জামান এক লাখ টাকা উৎকোচ না দিলে তার কাজ হবে না বলে প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দেন। এ কথা শোনার পর তিনি বিভিন্ন স্থান হতে আরো ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করে তাকে দেন। টাকাটি নিয়ে শহীদুজ্জামান তার প্যান্টের বাম পকেটে রাখেন। ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক সংকেত দিয়ে জানানোর সাথে সাথে শহীদুজ্জামানের কক্ষে ঢুকে দুদক কর্মকর্তারা এক লাখ টাকাসহ তাকে আটক করেন।

এ ঘটনায় ওই দিন দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার সহকারী পরিচালক মো: মহাতাব উদ্দিন বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় ২৫ নং মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২৮ নভেম্বর সমন্বিত জেলা কার্যালয়, খুলনা দুর্নীতি দমন কমিশন সহকারী পরিচালক মো: শাওন মিয়া শহীদ্জ্জুামানকে আসামি করে সাতক্ষীরা আদালতে একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেন এবং একই আদালতে ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আটকের প্রায় তিন মাস পর শহীদুজ্জামান হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য খুলনা বিভাগীয় পেশাল জজ আদালতে পাঠানো হয়।

তবে, ঘুষ গ্রহণের এই মামলাটি সাজানো বলে সে সময় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হয়।

মামলার ১২ জন সাক্ষীর জেরা,জবানবন্দি ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে আসামী শহীদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ বিচারক মোঃ আশরাফুল ইসলাম তাকে উপরোক্ত কারাদণ্ডাদেশ দেন।

খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাড. খোন্দকার মুজিবর রহমান কারাদণ্ডাদেশের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার বিকেলে সাজাপ্রাপ্ত আসামি শহীদুজ্জামানকে আদালতের মাধ্যমে খুলনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ২৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test