E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আদালতে দাঁড়িয়ে যা বললেন ড. কলিমুল্লাহ

২০২৫ আগস্ট ০৭ ১৮:১৯:৫০
আদালতে দাঁড়িয়ে যা বললেন ড. কলিমুল্লাহ

স্টাফ রিপোর্টার : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। 

এর আগে, এ মামলায় ড. কলিমুল্লাহকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় বিচারককে তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ২০১৭ সাল থেকে কর্মরত ছিলাম। বিচারক তখন বলেন, কিন্তু আপনি ফুলটাইম ঢাকায়ই থাকতেন।

কলিমুল্লাহ বলেন, না স্যার। আমি রংপুরেই থাকতাম। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন দীপু মনির অন্যায় আবদার রাখতে বাধ্য করতেন। সেই থেকে রাগান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। তখন বিচারক বলেন, আপনি ও আপনার মা একসাথে কোনো নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন?

জবাবে কলিমুল্লাহ বলেন, না স্যার। নিয়োগ সরকারিভাবে করা ছিল। তখন বিচারক বলেন, কিন্তু আপনি ছিলেন কি না?

কলিমুল্লাহ বলেন, সরকারিভাবে নিয়োগ দিয়েছিল। আমি নিয়োগ দিইনি। তখন বিচারক বলেন, নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার এমনিতেও আপনার নেই। আপনি একই সঙ্গে ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ছিলেন। ঢাবিসহ অন্য কোনো ভার্সিটির ভিসির ক্ষেত্রে তো এমন দেখিনি।

এ সময় কলিমুল্লাহ বলেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি একটু আলাদা। এর আগের ভিসিদের ক্ষেত্রেও এমন করা হয়েছে। পরে বিচারক বলেন, আপনার বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। তখন কলিমুল্লাহ বলেন, না স্যার। আমি এসবের বিরুদ্ধে ছিলাম বলেই ষড়যন্ত্র করে আমাকে জড়ানো হয়েছে।

কথোপকথনের মাঝে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, উনি দাবি করছেন ১৭ ঘণ্টা অফিস করতেন। অথচ উনাকে টিভিতে টকশোতে নিয়মিতভাবে আমরা সবাই দেখেছি।

কলিমুল্লাহর বক্তব্যের পর বিচারক বলেন, একাই যেতে হয়, এসব লাইনে সঙ্গে আর কেউ যায় না। কবরে সঙ্গে কেউ যায় না, জেলেও সঙ্গে কেউ যায় না। আপাতত আপনাকে জেলে যেতে হবে। আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে। একমাত্র আলিমুল গায়েবই জানেন কী করেছেন আর আপনি জানেন। কিছুদিন পর দুদক জানবে এরপর মানুষজন জানবে। যতদিন জেলে থাকবেন, ভালো থাকবেন। যে চিকিৎসা আপনাকে দেওয়া দরকার দেওয়া হবে।

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কলিমউল্লাহসহ পাঁচজনকে আসামি করে গত ১৮ জুন দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অন্য আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন করেন। তারা ৩০ কোটি টাকা মূল্যের বেশি চুক্তি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়া করেন। ঠিকাদারের রানিং বিল থেকে কেটে নেওয়া নিরাপত্তা জামানতকে এফডিআর হিসেবে ব্যাংকে জমা রাখা এবং সেই এফডিআর ঠিকাদারকে লোন দেওয়ার জন্য নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট অনুমোদন তথা গ্যারান্টার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিতে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার কোনো আইন না থাকা সত্ত্বেও অগ্রিম বিল দেন এবং অগ্রিম দেওয়া বিল সমন্বয়ের আগেই বিলের বিপরীতে প্রদত্ত ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো অবমুক্ত করা হয়। প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ড্রইং বা ডিজাইন না মেনে সরকারি খাতে ক্রয়পদ্ধতির বিধিবহির্ভূতভাবে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। অস্বাভাবিক হারে মূল্য দাখিল বা ফ্রন্ট লোডিং থাকা সত্ত্বেও পিপিআর ২০০৮-এর বিধান অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এরপর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে দুদকের আবেদনের পরিক্ষেপ্রেতে কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test