E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা সরকারি সম্পত্তি থেকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পারুলিয়া ভূমি কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৮:৩৯:০২
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পারুলিয়া ভূমি কর্মকর্তাকে লিগ্যাল নোটিশ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আদেশ ও হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ অমান্য করে স্বত্বহীন হয়ে যাওয়া কথিত জমির মালিক ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সহায়তায় সাতক্ষীরার দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিষাখালির এক হাজার ৩১৮ বিঘা সরকারি সম্পত্তি থেকে গত ২৪ আগষ্ট ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার ঘটনায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার ইমরুল হায়দার রিটকারি ভূমিহীন নেতা আনারুল ইসলামের পক্ষে আজ সোমবার দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নওশাদ ও পারুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সুধীন সরকারকে এ নোটিশ পাঠান। ওই দুই সরকারি কর্মকর্তাকে নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ব্যারিষ্টার ইমরুল হায়দার লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করেছেন যে, ২০১২ সালে সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক একেএম মাহামুদুর রহমান পারুলিয়ার চণ্ডিচরণ ঘোষের ফেলে যাওয়া এক হাজার ৩১৮ বিঘা জমি জালজালিয়াতির মাধ্যমে ১৯৫৫ সাল থেকে জবরদখল করা কথিত জমির মালিকদের বিরুদ্ধে রায় দেন। অদেশে ওই জমির মধ্যে প্রায় ৫০ বিঘা খাল, রাস্তা, কালভার্ট এসএ খতিয়ানে জমির মালিকদের পক্ষে উল্লেখ থাকা, জমির মালিক দাবিদারদের পক্ষে দাখিলকৃত বিনিময় দলিলের ৬০.৬১ ও ৬২ নং পাতার হাতের লেখা দলিলের অন্য পাতার লেখার সঙ্গে ভিন্ন থাকা ছাড়া কিছু জমির বয়নামা দলিলের মূল কপি জমা না দিয়ে ফটোকপি জমা দেওয়ার কারণে ওই জমি লাওয়ারিশ উল্লেখসহ দুইজনকে রিসিভার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই আদেশের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদলালতে ও সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে যেয়ে হেরে যান কথিত জমির মালিকরা। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় এর বিরুদ্ধে পূর্ণবিচার চেয়ে স্বত্বহীন জমির মালিক আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নজরুল ইসলাম, সুরুজ কাজী, গোলাম কাজী, আব্দুল আজিজ, ইকবাল মাসুদসহ ৮০ জনের বেশি ভূমিদস্যু সুপ্রিম কোর্টে সিভিল রিভিউ পিটিশন ৪৬৮/২১ দাখিল করেন। একপর্যায়ে ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সরকারি জমিতে সাপমারা খালের দুই ধার থেকে খননকালে উচ্ছেদ হওয়াসহ বিভিন্ন স্থানের প্রায় আট শতাধিক ভূমিহীন পরিবার ওই জমিতে খুপড়ি খুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করে।

ওই জমি থেকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করলে ভূমিহীন নেতা আনারুল ইসলাম ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে ১৫০০/২২ নং রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শুনানী শেষে বিবাদী সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ ৮জনকে ওই জমিতে ছয় সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্থিতাবস্থা বজায় থাকাকালিন ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর স্বত্বহীন জমির মালিকদের পক্ষে পুলিশ দিয়ে সহায়তা করে ৭৮৫ টি ভূমিহীন পরিবারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। যদিও কিছুদিন পর ভূমিহীনরা ওই জমিতে আবারো ফিরে আসে।

২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ওই জমি লাওয়ারিশ ঘোষণা করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু তৎকালিন ও বর্তমান জেলা প্রশাসক ওই জমিতে কথিত জমির মালিকদের খাজনা নেওয়া বন্ধের জন্য দেবহাটার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও পারুলিয়া ইউয়নিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। গত ১০ আগষ্ট ১৫০০/২২ নং রিট পিটিশনের স্থিতাবস্থা আরো ছয় মাসের মেয়াদ বৃদ্ধি করে হাইকোর্ট।

২৪ আগষ্ট ভোরে পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যদের মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালানোর একপর্যায়ে সেখানে বসবাসরত তিন শতাধিক ভূমিহীনকে উচ্ছেদ করে কথিত জমির মালিক ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। ওই সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা দিতে প্রতিদিন পুলিশ খলিষাখালিতে টহল অব্যহত রেখেছে। তবে ওই জমি জবরদখলে রাখতে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান এর ভূমিকা রয়েছে বলে উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনদের অভিযোগ। উচ্ছেদকালে ও উচ্ছেদের আগে ভূমিহীনরা হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা জারির কাগজ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেখালেও তারা তা আমলে নেননি। উপরন্তু ওই জমির মালিকানা সুপ্রিম কোর্টে স্বত্বহীন হওয়া ভূমিদস্যুদের বলে নিশ্চিত করেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test