E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ১৪:০২:০০
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের অপর সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।

২ ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। মূল রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-১ তথা উসকানি, মারণাস্ত্র, ড্রোন, হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশসহ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের দায়ে শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চানখারপুলে ছয় হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর দায়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-২ এ শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

এছাড়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ-২ বা চানখারপুলে ছয় হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর দায়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেওয়ায় মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনিও একই অপরাধে অপরাধী। তবে স্বেচ্ছায় ও সত্য বলায় তার প্রতি নমনীয় হন ট্রাইব্যুনাল।

এছাড়া শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় পলাতক রয়েছেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় বছরখানেক ধরে কারাগারে রয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফলে সাবেক এই আইজিপির শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেন প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনাল তাকে ৫ বছরের কারদণ্ড দেন।

সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটের পর কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে সাবেক আইজিপি মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। অনেকটা মাথা নিচু করে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় ঢোকেন তিনি।

এদিকে, শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাড়ানো হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ-র‌্যাব, এপিবিএন-বিজিবির পাশাপাশি নিয়োজিত করা হয় সেনাবাহিনীও। তৎপর দেখা যায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও। নিরাপত্তার স্বার্থে রোববার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সীমিত করা হয় জনসাধারণের চলাচলও।

গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন।

এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। আর ৯ কার্যদিবস চলে প্রসিকিউশন-স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক পাল্টা যুক্তিখণ্ডন। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণে সময় দেওয়া হয়।

যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চায় প্রসিকিউশন। তবে রাজসাক্ষী হওয়ায় মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test