E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের রায় 

২০২৫ নভেম্বর ২০ ১৪:৩২:১৩
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের রায় 

স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, তার পরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

শুনানিতে আইনজীবীরাও এ সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত দিয়েছিলেন। আদালত তাদের মতামত গ্রহণ করে রায়ে উল্লেখ করে দেওয়ায় সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিনে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।

আপিল বিভাগের বেঞ্চের অপর ছয় বিচারপতি হলেন- মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।

১৪ বছর আগে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আজকের আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ণ বহাল হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

আইনজীবীরা জানান, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ থেকে উদ্ভূত আপিল আদালত মঞ্জুর করেছেন। আজকের এই রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল হলো বলে জানান তারা।

এর আগে সংবিধানের যে সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল, সেই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর আগে গত ২১, ২২, ২৩, ২৮, ২৯ অক্টোবর ও ২,৪, ৫, ৬ ও ১১ নভেম্বর শুনানি হয়। ওই ১০ দিনে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজনের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, ইন্টারভেনার হিসেবে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী এস এম শাহরিয়ার শুনানি সম্পন্ন করেন এবং বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ, ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির।

এর আগে, গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ।

এ আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।

ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।

আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। পরে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২০ নভেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test