E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ে অন্য দেশের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে

২০২৫ জুলাই ২৪ ১৩:১৪:১০
জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ে অন্য দেশের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ে এক দেশের বিরুদ্ধে এখন থেকে মামলা করতে পারবে অন্য দেশ। এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছে জাতিসংঘের একটি শীর্ষ আদালত। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কোন অংশ, কে ঘটিয়েছে তা সমাধান করা কঠিন হতে পারে বলে মত দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। এই রায় বাধ্যতামূলক না হলেও এর ব্যাপক পরিণতি হতে পারে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিবিসির।

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য এটিকে এক ধরনের বিজয় হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে ওইসব দেশ যারা এই সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী ধীর অগ্রগতির কারণে হতাশ হয়ে আদালতে এসেছিল।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এই অভূতপূর্ব মামলার বিষয়টি ২০১৯ সালে আলোচনায় এসেছিল। সে সময় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির মুখে থাকা নিম্ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের একদল তরুণ আইনের শিক্ষার্থী এই ধারণাটি সামনে আনেন।

টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুন এই ছাত্রদের মধ্যে একজন। আদালতের সিদ্ধান্ত শুনতে নেদারল্যান্ডসের হেগেতে এসেছিলেন তিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এটা খুবই রোমাঞ্চকর। আমাদের মধ্যে আবেগের ঝড় বইছে। এটি এমন একটি জয় যা নিয়ে আমরা গর্বের সঙ্গে আমাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে যেতে পারি।

বিরূপ আবহাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ভানুয়াতু। দেশটির শিক্ষার্থী ফ্লোরা ভানো বলেন, আজ রাতে আমি আরামে ঘুমাবো। আমরা যা সহ্য করেছি তার স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। এটি আমাদের কষ্টের ফল এবং আমাদের ভবিষ্যতের অধিকার।

তিনি বলেন, এটি কেবল আমাদের জন্য নয় বরং প্রতিটি দেশ যারা ক্ষতির মুখে রয়েছে তাদের জন্য একটি বিজয়। যারা তাদের কথা শোনানোর জন্য লড়াই করছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে বিবেচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিজে, যার বৈশ্বিক অবস্থান ও এখতিয়ার রয়েছে।

আইনজীবীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই মতামত আইসিজের বাইরে জাতীয় আদালতেও আগামী সপ্তাহের প্রথম দিক থেকেই ব্যবহার করা যেতে পারে। জলবায়ুকর্মী এবং আইনজীবীরা আশা করছেন, এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত সেই দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পথ সহজ করবে যারা সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী।

বাড়তে থাকা সমস্যা মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছিল তারা। যে হতাশা থেকে অনেক দরিদ্র দেশও এই মামলাটি সমর্থন করেছিল। যদিও এ বিষয়ে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত হবে না বলে আগেই বলেছিল যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশগুলো। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি ছিল, এই সমস্যা মোকাবিলায় ২০১৫ সালে জাতিসংঘের প্যারিস চুক্তিসহ বিদ্যমান জলবায়ু চুক্তিগুলোই যথেষ্ট। উন্নত দেশগুলোর এই যুক্তি বুধবার খারিজ করে দেন আদালত।

বিচারক ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যদি দেশগুলো সম্ভাব্য সর্বোচ্চ উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা তৈরি না করে, তাহলে এটি প্যারিস চুক্তিতে তাদের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। তিনি আরও বলেন, এই মতামত বৃহত্তর আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে প্রযোজ্য হবে।

যার অর্থ হলো, যে দেশগুলো প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ত্যাগ করতে চায়, তাদেরও জলবায়ু ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে হবে। এই মতামত উপদেশমূলক হলেও আইসিজের আগের সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন দেশের সরকার বাস্তবায়ন করেছিল। যার মধ্যে গত বছর যুক্তরাজ্য যখন চাগোস দ্বীপপুঞ্জ মরিশাসের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয়েছিল তখনও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

(ওএস/এএস/জুলাই ২৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test