E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পুতিন হয়তো চুক্তি করতে চাইবেন না বলে আশঙ্কা ট্রাম্পের

২০২৫ আগস্ট ২০ ১২:৪৬:৩৯
পুতিন হয়তো চুক্তি করতে চাইবেন না বলে আশঙ্কা ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সেটিকে খুব বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না ক্রেমলিন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে আলোচনা করতে আবারো দুই নেতাকে আহ্বান জানিয়েছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে বৈঠকের প্রচেষ্টার বিষয়টি সামনে আসে এমন এক সময়ে যখন গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে এবং সোমবার হোয়াইট হাউজে সাতজন ইউরোপীয় নেতা ও জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঠিক তখন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন এই সংঘাত এর সমাধান করা কঠিন একটি কাজ। তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্ভবত সংঘাতের ইতি টানতে আগ্রহী নন।

মঙ্গলবার তিনি বলেছেন যে, 'আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা হয়তো জানতে পারবো পুতিন কেন চুক্তি করতে রাজি নন।

প্রেসিডেন্ট পুতিন সোমবার ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন যে তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ব্যাপারে উদার।

কিন্তু পরের দিনই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের একটি অস্পষ্ট বক্তব্য ওই আলোচনার প্রস্তাবে পানি ঢেলে দেয়। কেননা, তিনি বলেছিলেন, যেকোনো বৈঠকের প্রস্তুতি ধীরে ধীরে এবং বিশেষজ্ঞ স্তর থেকে শুরু করে এবং তারপরে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

রাশিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের উপপ্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেছেন, সরাসরি আলোচনার সুযোগকে কেউই নাকচ করেনি। তবে শুধু নামমাত্র বৈঠকে করার কোনো মানে হয় না।

মঙ্গলবার খবরে বলা হয়, পুতিন ট্রাম্পকে প্রস্তাব দিয়েছেন যে জেলেনস্কি আলোচনার জন্য মস্কো যেতে পারেন। কিন্তু এটি ইউক্রেন কখনোই মেনে নেবে না।

এটি সম্ভবত রাশিয়ার এমন একটি প্রস্তাব ছিল, যা এতটাই অবাস্তব যে কিয়েভ এতে স্বাভাবিকভাবেই রাজি হতে চাইবে না।

গত কয়েক দিনের আলোচনা দেখে মনে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের জটিলতা- মস্কোর দাবি আর কিয়েভের অবস্থানগত পার্থক্যের মধ্যে যে তীব্র ফারাক রয়েছে সেটি নতুনভাবে উপলব্দি করতে পেরেছেন।

পুতিনকে রাজি করাতে পারবেন বলে তিনি যে বহুল আলোচিত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন তা কিন্তু বাস্তবে হয়নি। এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সরাসরি একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তিতে যাওয়া উচিত।

তবে সম্প্রতি বৈঠকে শুধুমাত্র ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পকে বোঝাতে পেরেছেন যে শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে কিয়েভের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।

মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে ইউরোপীয়রা যদি ইউক্রেনে স্থলভাগে সেনা সরবরাহ করে তবে আমেরিকা আকাশপথে তাদের সাহায্য করতে রাজি আছেন। যদিও তিনি মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন।

তবে তিনি বিস্তারিতভাবে বলেননি যে, এই আকাশ সহায়তা মানে কেবল গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় নাকি যুদ্ধবিমান মোতায়েনের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি অস্পষ্ট থাকলেও, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং' জানিয়েছে যে তারা ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিত করতে একটি বাহিনী গঠন করতে চায়। যুদ্ধ শেষ হলে বাহিনীটিকে ইউক্রেনে পাঠানো যেতে পারে।

মঙ্গলবার এই গ্রুপের একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা আগামী দিনগুলোতে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক ও শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার পরিকল্পনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের পর এখন ট্রাম্প মনে করছেন, সরাসরি আলোচনা শান্তিচুক্তিকে আরও কাছাকাছি আনতে পারে। তবে তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে দুই নেতার মধ্যে ভয়াবহ শত্রুতাও রয়েছে।

ইউক্রেন রাশিয়ার মধ্যে শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে হাজার হাজার প্রাণহানি ও ব্যাপক ধংসযজ্ঞ ও প্রতিনিয়ত বিমান হামলার ঘটনাও ঘটছে।

পুতিন মনে করেন, পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে জেলেনস্কি অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। বহু বছর ধরে তিনি একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন যে কিয়েভে এখন চলছে নব্য নাৎসিবাদ।

জেলেনস্কির সঙ্গে ক্রেমলিনের সম্পর্কের তিক্ততা এতটাই বেড়েছে যে পুতিন মনে করেন, যদি শেষ পর্যন্ত কিয়েভের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতেই হয় তাহলে ইউক্রেনের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে।

এই মুহূর্তে রুশ বাহিনী যুদ্ধে অনেকটা ফ্রন্টলাইনে আছে। যে কারণে যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে রাশিয়ার আগ্রহ খুব কম।

তবুও ইউরোপীয় নেতারা ও জেলেনস্কি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পক্ষে কথা বলছেন। সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন তিনি পুতিনের সঙ্গে যে কোনো মাধ্যমে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত। এদিকে ইউরোপীয় নেতারা সম্ভাব্য ওই বৈঠকের স্থান নিয়েও প্রস্তাব দিচ্ছেন।

ইউরোপীয় নেতারা আলোচনার সমর্থন জানানোর পাশাপাশি ট্রাম্পকে এটিও বলেছেন যে, রাশিয়া যদি যুদ্ধের অবসান ঘটাতে না চায় তাহলে যেন মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন ট্রাম্প।

এসব আলোচনা বা প্রস্তাব যাই থাকুক, ইউক্রেনের ইউরোপীয় অংশীদাররা ট্রাম্পের মতো খুব আশাবাদীও হচ্ছেন না যে সহসাই বন্ধ হবে এই সংঘাত।

মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুতিনকে একজন শিকারি ও দানব হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, পুতিন যে সহজে শান্তির পথে হাঁটবে, তা তিনি মনে করেন না।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব বলেছেন যে, পুতিনকে ভরসা করার তেমন কোনো কারণই নেই। যে কারণে তিনি পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে।

আগামী দিনগুলোতে আরও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে, সেক্ষেত্রে ট্রাম্প ইউরোপকে কতটা সমর্থন দেবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।

ব্রিটেনের সেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল টনি রাদাকিন ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিতকারী বাহিনী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করতে। অন্যদিকে ন্যাটোর সামরিক প্রধানরা বুধবার ভার্চুয়াল বৈঠকে বসবেন বলে জানা গেছে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা

(ওএস/এএস/আগস্ট ১৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২০ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test