E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় কতটা অস্বস্তিতে ভারত

২০২৫ আগস্ট ২৮ ১২:৩১:১৭
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় কতটা অস্বস্তিতে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় ছয় মাস আগে ওমানের রাজধানী মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের অবকাশে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বৈঠক হয়। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটকে (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করে তোলার প্রসঙ্গ তোলা হয়।

এর আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও একাধিকবার সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার কথা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন। প্রায় এক দশক ধরে এই জোটের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। কিন্তু মাস্কাটের বৈঠক জয়শংকর পরিষ্কার জানিয়ে দেন, সার্কের কথা আপাতত না তোলাই ভালো – কারণ কোন দেশটির কারণে আর কেন সার্ক অচল হয়ে আছে, সেটা জোটের সদস্য দেশগুলোর ভালো মতোই জানা।

শুধু তাই নয়, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা মানে সেটাকে ভারত যে ‌‘পাকিস্তানের সুরে সুর মেলানো’ হিসেবেই দেখবে, সেটাও উল্লেখ করেন জয়শংকর।

ভারত যেখানে সার্কের হয়ে কথা বলাকেও পাকিস্তানের হয়ে কথা বলা হিসেবে দেখছে, সেখানে ঢাকা ও ইসলামাবাদের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা যে দিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলছে, তা সহজেই অনুমেয়।

মাস্কাটে ওই বৈঠকের পরবর্তী কয়েক মাসে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ শুধু কাছাকাছিই আসেনি, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, সংস্কৃতি বা যোগাযোগ – প্রায় সব খাতেই দুই দেশের সহযোগিতা নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতেই বাংলাদেশ বহু বছরের মধ্যে প্রথমবার পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করে। ফলে দুই দেশের মধ্যে আবার শুরু হয় সরাসরি বাণিজ্য।

এরপর উদ্যোগ নেওয়া হয় ভিসা বিধিনিষেধ শিথিল করার এবং ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে ডিরেক্ট ফ্লাইট চালু করার। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও জানায় পাকিস্তান।

দুদেশের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারাও একে অপরের দেশে যেতে শুরু করেন, সেই সব সফরের ছবিও প্রকাশ হতে থাকে।

এই ধারাবাহিকতাতেই সম্প্রতি বাংলাদেশে সফর করে গেলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার। তিনি তার এই সফরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে তো বটেই – বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন।

এমনকি ইশহাক দার বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে একাত্তর বা গণহত্যার মতো স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়েও কথা বলতে দ্বিধা করেননি। এটাকে একটি ‘মীমাংসিত বিষয়’ বলে দাবি করে তিনি বাংলাদেশিদের ‘হৃদয় পরিষ্কার করে’ সামনে এগিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

ঘটনাপ্রবাহের এই গতি আর আকস্মিকতা ভারতকে রীতিমতো উদ্বেগে ফেলেছে। পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফর কিংবা করাচি থেকে চট্টগ্রামে পণ্যের চালান নিয়ে এর আগে যখনই ভারত সরকারকে প্রশ্ন করা হয়েছে, মুখপাত্র বাঁধাধরা জবাব দিয়েছেন, আমাদের নিরাপত্তা পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন যে কোনো ডেভেলপমেন্টের দিকেই আমরা সতর্ক নজর রাখি।

কিন্তু ভারতের কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের অনেকেই এখন ঢাকা-ইসলামাবাদের এই নতুন আঞ্চলিক সমীকরণ তাদের স্বার্থকে কীভাবে ব্যাহত করতে পারে এনিয়ে খোলাখুলি কথা বলছেন।

ভারতের প্রধান সেনাধ্যক্ষ (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ) জেনারেল অনিল চৌহান পর্যন্ত গত মাসে প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন যে, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা স্বার্থের ক্ষেত্রে এক ধরনের ‘অভিন্নতা’ দেখা যাচ্ছে – ভারতের জন্য যার প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী।

জেনারেল চৌহান বলেন, এই তিন দেশের ক্ষেত্রে যে সম্ভাব্য কনভার্জেন্স অব ইন্টারেস্ট দেখা যাচ্ছে, তা ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ডায়নামিক্সের ওপর বড় প্রভাব ফেলতেই পারে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কাছাকাছি আসাকে ভারত এখন ঠিক কীভাবে দেখছে, কোন কোন ঘটনা তাদের বিচলিত করছে এবং কেন – এই প্রতিবেদনে তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা আসছে বারবার
ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সরকারি নীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি যে বেশ শান্ত এবং স্বশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব ক্ষীয়মান। কিন্তু ভারত মনে করছে, এখন এই পরিস্থিতি আবার পাল্টানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ ভিনা সিক্রি এমন একটা সময় ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার ছিলেন (২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল) যখন বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার ক্ষমতায় এবং তখনও ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

২০০৪ সালে ভিনা সিক্রি যখন ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত, তখন চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১০টি ট্রাকে করে অস্ত্র পাচারের ঘটনা ঘটেছিল – যা আলফাসহ ভারতেরই বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল বলে ধারণা করা হয়।

সিক্রি মনে করেন, আজকের ঢাকায় ড. ইউনূস ও ইশহাক দারের করমর্দনের যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে সেটা একরকম ‘দেজাঁ ভু’ মোমেন্ট – কারণ ভারত অবিকল এই ধরনের পরিস্থিতি আগেও পার করেছে।

বিবিসিকে তিনি বলেছেন, সে সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গিরা বাংলাদেশের মাটিতেই ঘাঁটি তৈরি করে তৎপরতা চালাত। আমরা তখন বাংলাদেশ সরকারকে বহুবার এইসব প্রশিক্ষণ শিবিরের তালিকা, লোকেশন ও নানা সাক্ষ্যপ্রমাণও দিয়েছি।

তখনকার বাংলাদেশ সরকার অবশ্য কখনোই ভারতের ভাষায় এই সব ‘জঙ্গি শিবিরের’ অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। এসব স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে বরাবরই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে এসেছে ভারত।

কিন্তু ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার পর অরবিন্দ রাজখোয়া বা অনুপ চেতিয়ার মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অনেক শীর্ষ নেতাকেই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তবে গত এক বছরে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের আনাগোনা আবার বেড়েছে, তাতে ভারতের নিরাপত্তা স্ট্র্যাটেজিস্টদের কপালে আবার দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যথারীতি।

সামরিক পর্যায়েও পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতাকে তাই ভারতের জন্য ‘খুব বড় সিকিওরিটি কনসার্ন’ বলে মনে করছেন ভিনা সিক্রি।

সেনাধ্যক্ষ অনিল চৌহান সম্প্রতি ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় যে ‘ঝুঁকি’র কথা বলেছেন, সেটাও সম্ভবত এদিকে ইঙ্গিত করেই।

ভারত ও বাংলাদেশের চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ স্থল-সীমান্তের বেশির ভাগটাই উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে এবং সেটা একেবারেই নিশ্ছিদ্র নয়। কাজেই এই সব ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের মাটিকে আবার ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা হতে পারে বলে মনে করছেন দিল্লিতে অনেক পর্যবেক্ষক।

বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও পাকিস্তানের মধ্যে আইএসআই-এর মধ্যে সহযোগিতা ও সম্পর্কের ক্ষেত্র তৈরি হয় কি না বা তা কতদূর প্রসারিত হয়, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে ভারতে।

ভূরাজনীতির দৃষ্টিতে এই সমীকরণের গুরুত্ব কী?
লন্ডন-ভিত্তিক জিওপলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট প্রিয়জিৎ দেবসরকার বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক রাজনীতি ও কূটনীতি নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নৈকট্যকে তিনি আবার দেখতে চান একটু ভিন্ন আঙ্গিকে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ওয়ার্ল্ডভিউ’-এর সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানকে একই হাইফেনে জুড়ে তিনি যেভাবে দুটি দেশকে একই দৃষ্টিতে দেখানোর চেষ্টা করছেন এটা তারই একটা এক্সটেনশন বা সম্প্রসারণ।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প এই অঞ্চলে ভারতকে তাদের প্রধান মিত্র বা সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে মোটেই তুলে ধরতে চান না বরং চান পাকিস্তান, ভারত ও সেই সঙ্গে বাংলাদেশকেও ‘ইকুয়াল ফুটিং’-এ বা এক কাতারে ফেলতে

ফলে ঢাকা ও ইসলামাবাদ যাতে নিজেদের মধ্যে কাছাকাছি আসতে পারে, সেই প্রচেষ্টায় ওয়াশিংটনেরও প্রচ্ছন্ন সায় বা সমর্থন আছে বলে তিনি যুক্তি দিচ্ছেন।

বস্তুত বাংলাদেশকে আমেরিকা যে দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তি ‘ভারতের চোখ দিয়ে’ আর দেখতে রাজি নয় এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা নিজেরাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে – বাইডেন প্রশাসনের আমলেই সেটা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।

এখন ট্রাম্পের আমলে ঢাকা ও ইসলামাবাদকে কাছাকাছি আনার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার কৌশলের পরের ধাপটি রূপায়িত হচ্ছে বলে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক মনে করছেন।

প্রিয়জিৎ দেবসরকারের মতে, পাকিস্তানও এই প্রস্তাব লুফে নিয়েছে-কারণ এই পদক্ষেপ তাদের স্বার্থের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

বিগত বহু দশক ধরে পাকিস্তানের ঘোষিত নীতিই হলো, ‘ব্লিড ইন্ডিয়া উইথ আ থাউজ্যান্ড কাটস’ – মানে যত গুলো সম্ভব ধারালো আঘাত করে ভারতকে রক্তাক্ত করো। ভারত মনে করে মুম্বাই, উরি, পুলওয়ামা বা পহেলগাম তাদের সেই নীতিরই প্রতিফলন।

ভারতের পশ্চিম সীমান্তে তাদের সে চেষ্টা অব্যাহতভাবেই চলছে, এখন বাংলাদেশের দিক থেকে ভারতের পূর্ব সীমান্তেও যদিই একই কাজ করা যায় তাহলে পাকিস্তানের লাভ ছাড়া ক্ষতি তো কিছু নেই।

ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান ও উত্তর সীমান্তে চীনের সঙ্গে সম্পর্কে উত্তেজনা ও কমবেশি সংঘাত চলছে বহুকাল ধরেই। এখন পূর্ব সীমান্তে এতদিন ধরে অপেক্ষাকৃত শান্ত বাংলাদেশ ফ্রন্টিয়ারও সেই তালিকায় যুক্ত হলে ভারতের জন্য সেটা হবে বিরাট এক দুশ্চিন্তার কারণ।

লড়াই এখানে ভাবধারা ও আদর্শের
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কাছাকাছি আসাটা ভারতের জন্য শুধু সামরিক বা নিরাপত্তাগত উদ্বেগের প্রশ্ন নয়, এর মধ্যে একটি আদর্শিক ও চিন্তা-চেতনাগত দুর্ভাবনার জায়গা আছে বলেও মনে করেন দিল্লির কোনো কোনো বাংলাদেশ ওয়াচার।

এমনই একজন বর্ষীয়ান পর্যবেক্ষক হলেন সাবেক আইপিএস অফিসার শান্তনু মুখার্জি। তিনি ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। মরিশাসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদেও ছিলেন এই বিশ্লেষক।

শান্তনু মুখার্জি বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তান যে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দিয়ে তাদের দেশে পড়াতে নিয়ে যেতে চাইছে – কিংবা বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে চাইছে – ভারতের জন্য সেটা দুশ্চিন্তার।

ভারত এতদিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শান্তিনিকেতনে বা বরোদার এম এস ইউনিভার্সিটিতে পড়ার বৃত্তি দিয়েছে, তারা ভারতের সংস্কৃতিতে ও রাবীন্দ্রিক ভাবধারায় দীক্ষিত হয়েছেন এবং সেই চিন্তাধারা নিজের দেশেও নিয়ে গেছেন।

পাকিস্তান এখন ঠিক সেই কাজটাই করতে চাইছে তাদের মতো করে। তারা জিন্নাহ বা আল্লামা ইকবালের ডকট্রিনে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে দীক্ষিত করতে চাইছে, যেটা রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অবশ্যই এটার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।

দিল্লিতে বিশ্লেষকরা মনে করেন, আজও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা হলো একাত্তর - যে যুদ্ধে ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিল, এক সাথে রক্ত দিয়েছিল।

কিন্তু একাত্তরে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের মতো বিষয়গুলোকে হালকা করে দেখানো কিংবা সেই যুদ্ধকে ‘ভারতের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে তুলে ধরার যে পাকিস্তানি ন্যারেটিভ, সেটাই আজকের বাংলাদেশে প্রাধান্য পাচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।

শান্তনু মুখার্জি আরও বলেন, ইশহাক দার বাংলাদেশে এসে কোন কোন দলের সঙ্গে দেখা করলেন? বিএনপির সঙ্গে, জামায়াতের সঙ্গে আর ছাত্রদের নতুন দল এনসিপির সঙ্গে। ধর্মনিরপেক্ষ কোনো দলের সঙ্গে তাকে কিন্তু কথা বলতে দেখননি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে জিতে যে দল বা জোটই ক্ষমতায় আসুক, তারা যাতে পাকিস্তানের বয়ানকেই প্রাধান্য দেয় এবং আঞ্চলিক পররাষ্ট্রনীতিতে পাকিস্তান-চীনের দিকেই ঝোঁকে – সেটা নিশ্চিত করাই এসব আলোচনার লক্ষ্য ছিল বলে মনে করেন শান্তনু মুখার্জি।

সবমিলিয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা আগাগোড়াই ভারতের স্বার্থবিরোধী হতে যাচ্ছে বলে দিল্লীতে একটি বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে।

তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা

(ওএস/এএস/আগস্ট ২৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৮ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test