E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত শতাধিক, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৭ ১৩:০৭:৩১
গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে নিহত শতাধিক, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা শহরে গত দুই বছর ধরে চলমান আগ্রাসনের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। বোমা ও গুলির আঘাতে হাজার হাজার বাসিন্দা তাদের পিতৃভূমি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

তাদের আশঙ্কা, হয়তো আর কখনোই ফিরে আসা হবে না আপন জন্মস্থলে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই অভিযানকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা শহরে নির্বিচারে ব্যাপক বিমান হামলার পর গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্থল অভিযান শুরু করে দখলদার বাহিনী। এই অভিযানে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন। অবশ্য চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোর থেকে এ পর্যন্ত গাজাজুড়ে অন্তত ১০৬ জন নিহত হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলার মুখে পালাতে থাকা লোকজনকে বহনকারী একটি গাড়িও ইসরায়েলের বোমায় আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। শহরের অন্তত ১৭টি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে, এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের তুফাহ এলাকায় আয়বাকি মসজিদকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান।

বোমা বর্ষণের পাশাপাশি সেনারা উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব অংশেও বিস্ফোরক-ভর্তি রোবট ব্যবহার করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত শহর থেকে যখন কালো ধোঁয়া উঠছে, যখন আসবাবপত্রবোঝাই ভ্যান আর গাধার গাড়ি, আর হাতে শেষ সম্বল নিয়ে হেঁটে চলা মানুষদের ভিড় উপকূলীয় আল-রশিদ সড়ক ধরে দক্ষিণমুখী, তখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ তার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন
‘গাজা জ্বলছে!’

যদিও অনেকে ইসরায়েলের দখল পরিকল্পনার শুরুর দিনগুলোতে গাজায় থেকে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু দখলদার সেনারা যখন হত্যাযজ্ঞের মাত্রা বাড়িয়ে আকাশচুম্বী ভবন, ঘরবাড়ি ও বেসামরিক অবকাঠামো মাটিতে মিশিয়ে দিল, তখন নিরাপদ আশ্রয়ের অনিশ্চয়তায় লোকজন দক্ষিণের দিকে এগোতে থাকেন।

চলতি মাসের শুরুতে মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেড মনিটর জানিয়েছিল, ইসরায়েলি সেনারা ১৫টি রোবট মোতায়েন করেছে—প্রতিটি রোবট একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২০টি আবাসন ইউনিট ধ্বংস করতে সক্ষম।

মঙ্গলবার এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা অনুমান করেছেন, প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার মানুষ শহর থেকে পালিয়েছে। অন্যদিকে গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় বলেছে, ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিমাংশে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং এক লাখ ৯০ হাজার পুরোপুরি শহর ছেড়েছেন।

ইসরায়েলি সেনারা বলছে, গাজা শহর পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে ‘কয়েক মাস’ সময় লাগবে।

‘যতদিনই লাগুক না কেন, আমরা গাজায় অভিযান চালিয়ে যাব,’ বলছিলেন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন।

এই ভয়াবহ অভিযানের মধ্যেই মঙ্গলবার জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ একটি গণহত্যা। প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের প্রাণ ঝরানো দুই বছরের এই সংঘাতের বিষয়ে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা।

কমিশনে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য বক্তব্যগুলো প্রমাণ করছে যে ইসরায়েলের গণহত্যার ‘ডোলুস স্পেশালিস’ রয়েছে—অর্থাৎ ফিলিস্তিনি জনগণকে ধ্বংস করার ‘নির্দিষ্ট অভিপ্রায়’ নিয়ে তারা কাজ করছেন।

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে। এক্সে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘গাজার বর্তমান পরিস্থিতি এমন এক মানবিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে যা কোনো ধরনের শৈথিল্য বা বিলম্ব সহ্য করতে পারবে না। ’

এই আগ্রাসন নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দা-সমালোচনা বাড়ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার বলেছেন, এই যুদ্ধ নৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং আইনি দিক থেকেও অসহনীয়।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলকে ‘এই ধ্বংসাত্মক অভিযান থামিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আলোচনায় ফিরতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।

আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিনস ‘যারা গণহত্যা চালাচ্ছে এবং যারা অস্ত্র দিয়ে গণহত্যাকে সমর্থন করছে’ তাদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘ থেকে তাদের বহিষ্কার করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। আর যারা আমাদের সহমানবদের ওপর এই নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে, তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করতে আমাদের আর দ্বিধা করা উচিত নয়। ’

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test