E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২১ ১৬:২৩:০০
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে জুলাই মাসে স্টারমার স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল যদি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয় এবং দ্বি–রাষ্ট্রীয় সমাধানের (টু-স্টেট সল্যুশন) লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই শান্তি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়, তবে সেপ্টেম্বরেই যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। সেই ঘোষণার ধারাবাহিকতাতেই এই পদক্ষেপ আসতে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এতদিন লন্ডনের অবস্থান ছিল, শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং সেটি আসবে সর্বোচ্চ প্রভাবের সময়ে। কিন্তু গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় এবং ইসরায়েলের অমানবিক অভিযান যুক্তরাজ্যকে নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য করেছে।

সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে অবনতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগেই গাজার দুর্ভিক্ষ ও সহিংসতাকে ‘অসহনীয়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। সর্বশেষ ইসরায়েলি স্থল অভিযানে লাখো মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এই অভিযানকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন জানায়, গাজায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। তবে ইসরায়েল এ অভিযোগকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ বলে নাকচ করেছে।

ব্রিটিশ মন্ত্রীরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তির আশা বাঁচিয়ে রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব ছিল তাদের। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের অব্যাহত সম্প্রসারণ, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ, এই সিদ্ধান্তে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

জুলাই মাসে স্বীকৃতির সম্ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছিলেন, পশ্চিম তীরে ব্যাপক সম্প্রসারণ, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা এবং বিতর্কিত ‘ই-১’ প্রকল্প কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আশা ধ্বংস করছে।

এ মাসের শুরুতে ডাউনিং স্ট্রিটে বৈঠকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি স্বাগত জানান। বৈঠকে দুই নেতা একমত হন যে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের শাসন ব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করা’ বলে অভিহিত করেছেন। জিম্মিদের পরিবার এবং কনজারভেটিভ পার্টির নেতাদের একাংশও সরকারের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। জিম্মিদের পরিবার এক খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন, অন্তত জীবিত ২০ জন জিম্মিকে মুক্ত করার আগ পর্যন্ত স্বীকৃতি না দিতে। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্ত হামাসকে উল্লসিত করেছে এবং জিম্মি ফেরানোর প্রচেষ্টা জটিল করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও যুক্তরাজ্যের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। তবে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হওয়ার অধিকার হামাসের ওপর নির্ভরশীল নয়, কারণ হামাসকে তারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েলি সেনারা গাজায় ভয়াবহ অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, তখন থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৪ হাজার ৯৬৪ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনকে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে। গত বছর স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে এই স্বীকৃতি দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে পর্তুগাল, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে।

তবে আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনের কোনো সুনির্দিষ্ট সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই। তাই এই স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী। দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বলতে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাকে নিয়ে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে বোঝানো হয়। বর্তমানে পশ্চিম তীর ও গাজা—দুটিই ইসরায়েলের দখলে, ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিজেদের ভূমি ও জনগণের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।

ব্রিটেনের লেবার পার্টির ভেতরেও দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির দাবি জোরদার হচ্ছিল। জুলাই মাসে স্টারমারের ঘোষণার আগেই অর্ধেকের বেশি লেবার এমপি সরকারকে অবিলম্বে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান। তাদের মতে, শান্তি প্রক্রিয়া রক্ষার জন্য এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।
(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test