E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় খাদ্য সংকট কমেনি

২০২৫ অক্টোবর ২৪ ১২:৩৫:০৩
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় খাদ্য সংকট কমেনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পেরোলেও গাজায় খাদ্য সংকট এখনো ‘বিপর্যয়কর’ অবস্থায় রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া বন্ধ করে।

বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে ত্রাণ সংস্থাগুলো জানায়, গাজায় যে অল্প পরিমাণ সরবরাহ ঢুকছে, তা স্থানীয় জনগণের পুষ্টিগত চাহিদা পূরণে একেবারেই অপ্রতুল। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, প্রতিদিনের লক্ষ্যমাত্রা ২,০০০ টনের তুলনায় গাজায় এখনো বহুগুণ কম খাদ্যসামগ্রী প্রবেশ করছে, কারণ বর্তমানে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কেবল দুটি সীমান্তপথ খোলা রয়েছে। খবর আল জাজিরা।

ডব্লিউএইচও প্রধান তেদ্রোস আধানোম গেব্রেইয়েসুস বলেন, “পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ, কারণ যে পরিমাণ ত্রাণ ঢুকছে তা যথেষ্ট নয়। খাবার পর্যাপ্ত না থাকায় ক্ষুধার কষ্ট একটুও কমেনি।”

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজার কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ জনগণ অনাহারে ভুগছে, এর মধ্যে ১১,৫০০ গর্ভবতী নারীও রয়েছেন। বুধবার জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, অপুষ্টির প্রভাব গাজার মানুষের ওপর ‘প্রজন্মগত’ প্রভাব ফেলবে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপপরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবার্টন জানান, গাজায় এখন ৭০ শতাংশ নবজাতকই অকালে জন্ম নিচ্ছে বা ওজন কম নিয়ে জন্মাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে এ হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ।

তিনি বলেন, “অপুষ্টির প্রভাব শুধু মায়ের ওপর নয়, নবজাতকের ওপরও আজীবন থেকে যাবে, যা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।”

গত আগস্টে গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা (আইপিসি) জানায়, তখন গাজার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ ‘চরম দুর্ভিক্ষের’ অবস্থায় ছিল।

মার্কিন মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২,০০০ টন মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশের কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি মঙ্গলবার জানায়, বর্তমানে গড়পড়তা মাত্র ৭৫০ টন খাদ্য প্রবেশ করছে, কারণ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাত্র দুটি প্রবেশপথ—দক্ষিণে কেরেম আবু সালেম এবং মধ্য গাজার আল-কারারা খোলা রয়েছে।

ফিলিস্তিনি কৃষি সংস্থার (পিএআরসি) বহির্বিশ্ব সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক বাহা জাকউত বলেন, “যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পরও গাজার পরিস্থিতি বিপর্যয়কর।”

তিনি জানান, অনেক সময় বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকলেট, সোডা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু বীজ, জলপাই বা প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিষিদ্ধ রাখা হচ্ছে।

“দুঃখজনকভাবে এসব পণ্য শিশু, নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের ন্যূনতম পুষ্টি চাহিদাও পূরণ করতে পারে না,” বলেন জাকউত।

তিনি আরও জানান, কিছু ফল ও সবজি ঢুকলেও দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা অসম্ভব। যেমন, এক কিলো টমেটোর দাম আগে ছিল ১ শেকেল, এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ শেকেল (প্রায় ৪.৫০ ডলার)।

বৃহস্পতিবার ৪১টি মানবিক সংগঠন, যার মধ্যে অক্সফাম ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলও রয়েছে, এক যৌথ খোলা চিঠিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, তারা গাজায় ত্রাণ পাঠানোর অনুরোধগুলো ‘ইচ্ছেমতো’ বাতিল করছে।

চিঠিতে বলা হয়, “১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি ত্রাণ অনুরোধ বাতিল করা হয়েছে, আর জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর ছয়টি অনুরোধও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।”

ইসরায়েল যে ত্রাণ আটকেছে তার মধ্যে ছিল তাঁবু, কম্বল, গদি, খাদ্য ও পুষ্টিসামগ্রী, পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী, শিশুদের পোশাক এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক যন্ত্রপাতি—যা যুদ্ধবিরতির সময় অবাধভাবে প্রবেশের কথা ছিল।

বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রায় দেয়, গাজার জনগণের ‘মৌলিক চাহিদা’ পূরণে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে এপ্রিল মাসে জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ আটকে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে।

যদিও এরপর কিছু ত্রাণ ঢুকেছে, তবুও মানবিক সংস্থাগুলোর দাবি, পরিমাণ এখনো অনেক কম এবং ইসরায়েলকে আরও প্রবেশাধিকার দিতে হবে।

তাদের খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমাদের সরঞ্জাম প্রস্তুত, কর্মীরা প্রস্তুত, আমরা বৃহৎ পরিসরে সহায়তা দিতে পারি। এখন যা প্রয়োজন, তা হলো প্রবেশের অনুমতি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মানতে হবে।”

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৮,২৮০ জন নিহত এবং ১,৭০,৩৭৫ জন আহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অপরদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে অন্তত ১,১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষ বন্দি হন।

(ওএস/এএস/অক্টোবর ২৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৪ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test