E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ভারত ‘নীতিগত অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন’ না করলে ঢাকায় প্রাসঙ্গিকতা হারাতে পারে

২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ১৬:১১:১৩
ভারত ‘নীতিগত অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন’ না করলে ঢাকায় প্রাসঙ্গিকতা হারাতে পারে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশে ভারতের সবচেয়ে আস্থাভাজন। এই আস্থা কতটা সেটা খোদ শেখ হাসিনার ভাষায় ছিল এমন—‘ভারতকে যা দিয়েছি সারা জীবন মনে রাখবে’। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার ক্ষমতাচ্যুতি শুধু আওয়ামী লীগকেই বিপদে ফেলেনি, অভাবনীয় সংকটে ফেলেছে ভারতকেও।

একদিকে জুলাই গণহত্যায় অভিযুক্ত হাসিনা ও তার অনুসারীদের আশ্রয় দেওয়া, অন্যদিকে তার পতনের পর গঠিত ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ‘সম্পর্ক বজায়’ রাখার চ্যালেঞ্জ—এই দুইদিক সামলানো কঠিন হয়ে পড়ায় এক পর্যায়ে হাসিনাপন্থি নীতিতেই ঝুঁকে যায় ভারত সরকার।

বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও দিল্লির করণীয় ঠিক করতে ভারত সরকার সম্প্রতি সর্বদলীয় একটি সংসদীয় প্যানেল গঠন করে, যার নেতৃত্ব দেওয়া হয় কংগ্রেস নেতা শশী থারুরকে। এই কমিটির প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিষয়ে বেজায় হতাশা ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে তার নীতিগত অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে ঢাকায় নিজের কৌশলগত অবস্থান হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে। (অর্থাৎ প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে প্রভাব কমে যেতে পারে)।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‌সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ তৈরি করেছে। যদিও পরিস্থিতি ‌‘সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যে’ নেমে যাবে না বলে মত দিয়েছে কমিটি, তবুও বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই সংসদীয় কমিটি সরকারকে একাধিক সুপারিশ দিয়েছে। কমিটির মতে, চলমান অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করছে—‘ইসলামপন্থি উগ্রবাদের’ উত্থান, ‘চীন ও পাকিস্তানের প্রভাবের তীব্র বৃদ্ধি’ এবং ‘শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন’।

কমিটি বলেছে, ‘১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জটি ছিল অস্তিত্বগত—মানবিক সংকট ও একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতি আরও গভীর ও প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে; এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং ভারতের কাছ থেকে কৌশলগতভাবে সরে যাওয়ার সম্ভাব্যতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘এই মুহূর্তে ভারত যদি তার কৌশল পুনর্নির্ধারণে ব্যর্থ হয়, তাহলে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ঢাকায় কৌশলগত অবস্থান হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।’

কমিটি বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত এবং চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—বিশেষ করে অবকাঠামো, বন্দর উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে। এ প্রসঙ্গে মোংলা সমুদ্রবন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি এবং পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা আটটি সাবমেরিন ধারণে সক্ষম—যেখানে বাংলাদেশের হাতে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক ও সামাজিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর মতো দলও রয়েছে। ইসলামপন্থী এই দলটির প্রতিনিধিরা চীন সফরও করেছেন।

কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তির সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের প্রচেষ্টা কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখতে হবে এবং উন্নয়ন, যোগাযোগ ও বন্দর ব্যবহারে ভারতকে ঢাকাকে তুলনামূলক সুবিধা দিতে হবে।

ইসলামপন্থিদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রসঙ্গে কমিটি উল্লেখ করেছে, আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী নিবন্ধন পুনর্বহাল করা হয়েছে, যা তাদের আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবে। অন্যদিকে, সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

কমিটির দাবি, ‘আওয়ামী লীগের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যৎ যেকোনো নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্রকে স্পষ্টভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ২০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২০ ডিসেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test