'আসুন আমরা বাংলাদেশকে সার্বজনীন করি'
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক : শুরুতেই সবাইকে দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখি। দুর্গাপূজা আসলে সুর এবং অ-সুরের মধ্যে লড়াই। সুর অর্থ সুন্দর এবং অ-সুর অর্থ অসুন্দর। যাহা সুন্দর তাহা সত্য। সত্য সর্বদা বিজয়ী হয়। দেবী দূর্গা ও মহিষাসুরের মধ্যেকার এই যুদ্ধে অসুর পরাজিত হয়। দেবী অর্থাৎ সুর বা সুন্দর বিজয়ী হয়। এটিকে মানুষের মনের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় বা সমাজের ভাল-মন্দ বা একটি দেশের শুভ-অশুভ হিসাবে বিবেচনা করা যায়? সবাই শুভশক্তির বিজয় কামনা করে। দেবীদুর্গা শুভ শক্তির প্রতীক। মা যেমন সর্বদা সন্তানের মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত, জগৎজ্জননী মা-দুর্গা তেমনি জীবের মঙ্গলে অসুরের সাথে যুদ্ধে করেন। জগতের কল্যানে ধরাধামে তিনি বারবার আবির্ভুত হন। দেবীদুর্গা বাংলাদেশের হিন্দুদের অসুর বিনাশের শক্তি দিন।
বাংলাদেশে এবার প্রায় ত্রিশ হাজার পূজা হচ্ছে। সরকার পূজার সময় যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেন, এজন্যে সরকারকে ধন্যবাদ। প্রশ্ন হলো, পূজার সময় নিরাপত্তা লাগে কেন? আগে তো লাগতো না? বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে বলেছিলেন, এখন থেকে যে যার ধর্ম পালন করবেন, কেউ কারো উপর ধর্মের নামে জোর-জবরদস্তি করতে পারবেনা। এজন্যেই তিনি সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করেছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্র কোন ধর্মকে প্রাধান্য দেবেনা। বাংলাদেশে একটি ধর্মকে প্রশ্রয় দেয়াটা এখন শুধু স্পষ্ট নয়, বরং দৃষ্টিকটু। অথচ মুখে ধর্মনিরপেক্ষার খই ফোঁটাতে আমরা ওস্তাদ। এজন্যেই হয়তো ইমরান এইচ সরকার বলেছিলেন, মুখে মুক্তিযুদ্ধের খই ফুটাবেন, আর মুর্ক্তি ভাঙ্গবেন তা তো হয়না! দেশে এখন বঙ্গবন্ধু নেই, ধর্মনিরপেক্ষতাও নেই?
বাংলাদেশে পূজার সময় প্রচুর মুর্ক্তি ভাঙ্গে, সেটা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে, বাহাত্তরেও ভেঙেছে; ২০১৭-তেওঁ ভাঙ্গছে। বাংলাদেশের ৪৬ বছরের ইতিহাসে হাজার হাজার মুর্ক্তি, মন্দির ভাঙ্গলেও আজ অবধি একজন এই অপরাধে শাস্তি পেয়েছে, এমন নজির সৃষ্টি হয়নি। এবার মানিকগঞ্জের সিংগাইর-এ দু'টি মন্দিরের ১৫টি মুর্ক্তি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। সাতক্ষীরার আশাশুনীতে ৫টি প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে। লালমনিরহাটে মন্দিরের জমি দখলের অভিযোগে ১৮টি মন্দিরে দুর্গাপূজা হবেনা। দিনাজপুরের বীরগঞ্জে মহালয়ার দিন দূর্গা প্রতিমা ভেঙেছে দুর্বৃত্তরা? চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় পাঁচবাড়ী পূজা মণ্ডপে এবার ব্যতিক্রমী একটি দেবীমুর্ক্তি গড়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসাবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত নির্যাতনের বিভিন্ন সংবাদের কাটিং দিয়ে দেবীমুর্ক্তির পোশাক এবং ব্যাকগ্রাউন্ড সাজানো হয়েছে। মুর্ক্তির হাতে একটি কাটা মুন্ড এবং অন্যহাত খুঁটিতে বাঁধা দেখানো হয়েছে। কমিটির নেতারা বলেছেন, প্রতিবাদ হিসাবেই এটা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ-এ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নাকি হিন্দুদের একটি মণ্ডপে পূজা করার নির্দেশ দিয়েছেন? আগে সেখানে চারটি মণ্ডপে পূজা হতো। এবার ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশ, একটি পূজা। হুকুম না মানলে 'মালাউনদের মেরে সাইজ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন' তিনি। কবছর আগে 'ঘটপূজার' কথা তো আমরা সবাই জানি?
'যখন দূর্গা আসেন, অসুরও সাথে আসে'। দূর্গা দেবী ক'দিন বাদে চলে যান, কিন্তু অসুররা থেকে যায়? যারা মুর্ক্তি ভাঙ্গে তাদের কি অসুর বলা যায়? আসলে যা অ-সুন্দর তাই অসুর? দুর্গাপূজায় হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এবার কেউ কেউ ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা এই খরচের কিছুটা দেশের বন্যার্তদের এবং শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণ করবেন। এটি নি:সন্দেহে ভালো উদ্যাগ। মানবতার কল্যানে দেবীদুর্গার আগমন, তাই দুর্গতের সাহায্যে এগিয়ে যেতে তো হবেই। এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে আরো একটি আহ্বানে এসেছে যে, নিউইয়র্ক, বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রতিটি মন্দির ও পূজা কমিটিগুলো অনুগ্রহ করে যদি প্রতিবছর বাংলাদেশে একটি হিন্দু পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে কি খুব ভালো হয়না? এমন মহতী সিদ্ধান্ত শুধু যে হিন্দুদের উপকারে লাগবে তা নয়, বরং এতে সমাজ ও দেশের উপকার হবে। নিউইয়র্কে প্রতিটি পূজায় খরচ ২৫-৬০ হাজার ডলার। মাত্র ১হাজার ডলার বাঁচিয়ে দেশে একটি পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করে দিলে পূজার আনন্দ নিশ্চয় বেড়ে যাবে।
দুর্গাপূজা সর্বজনীন। অর্থাৎ সবার। সবাই মিলেই এটি সার্থক করতে হয়। সবাই মিলিত হওয়া তখনই সম্ভব যখন সবার মধ্যে ভ্রাত্রিত্ববোধ থাকে। 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম'-গানটি আমরা প্রায়শঃ গাইতে পছন্দ করি। কিন্তু আগের দিনগুলো ফিরিয়ে আনতে আমাদের কোন প্রচেষ্টা নেই? মানুষে মানুষে আগেরমত সংযোগ নেই? পরিবারের সংজ্ঞা পাল্টে যাচ্ছে। উৎসবগুলো হয়ে যাচ্ছে সম্প্রদায় ভিত্তিক। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মানুষ যখন নিউইয়র্কে 'বাংলাদেশ পূজা সমিতি'-র ব্যানারে দুর্গাপূজা শুরু করে, তখন পূজাটা হিন্দুদের থাকলেও উৎসবে সবাই জড়িত ছিলো। পূজায় মুসলমানদের উপস্থিতি ছিলো উৎসাহব্যঞ্জক। এখন নিউইয়র্কে অনেকগুলো পূজা হয়, লোক সমাগম প্রচুর। কিন্তু সংখ্যাগুরুর উপস্থিতি কমে গেছে। এর কারণ কি? তবে গতবার জ্যাকসন হাইটসে পূজা হয়েছিলো, তাতে জড়িত ছিলাম, সেই পূজার সংখ্যাগুরুর উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয় এবং স্থানীয় বাঙ্গালী ব্যবসায়ীরা তাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এবার পূজাটি আর জ্যাকসন হাইটসে হচ্ছেনা। অন্যত্র সরে গেছে।
দেবীদুর্গা এবার নৌকায় এসেছেন। অর্থাৎ এবার ফলন ভালো হবে? আসলেই এবার বাম্পার ফলন দরকার। কারণ, বন্যার কারণে দেশে খাদ্যের মজুত কমে গেছে। আমাদের বার্মা থাকে চাল কিনতে হচ্ছে। তদুপরি অতিরিক্ত কয়েক লক্ষ শরণার্থীদের খাওয়াতে হচ্ছে। দেবীদুর্গা বাংলাদেশকে রক্ষা করুন। সংখ্যালঘুদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচান। তবে কানাডা থেকে শেখ শামসুন্নাহার ইতি লিখেছেন, 'পড়শীর জন্যে কেঁদে বুক ভাসাই, পূজা মণ্ডপ ভেঙ্গে বাপ্-দাদার ভিটামাটি থেকে তাড়াই' আমাদের এনীতি থেকে সরে আসা দরকার। আর কত? শরণার্থীরা জানান দিচ্ছে, কেউ স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়েনা, ছাড়তে বাধ্য হয়? যার বাড়িতে আগে দুর্গাপূজা হতো, এখন কেন হয়না, তা কি কেউ জিজ্ঞাসা করে না? হিন্দুরা কে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করুন এবং তা ঠেকান। নইলে সৈয়দ আশরাফ-র কথাই না সত্য হয়ে যায়, 'হিন্দুরা ভালো না থাকলে আপনারাও ভালো থাকবেন না? দেশটি আমার। দুর্গাদেবী আমার। আসুন, আমরা দেশটিকে সার্বজনীন করি। ধর্ম যার যার, দেশ সবার।
(এসজি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭)
পাঠকের মতামত:
- সারা দেশে দিন-রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে
- সাভারের ২৩ কিলোমিটার সড়কে থেমে থেমে যানজট
- শনিবার খুলে দেয়া হচ্ছে বেনজীরের সাভানা পার্ক
- পাংশায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ
- নড়াইলে খাল ও রাস্তার পাশ দিয়ে রোপন করা হলো বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ
- ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ
- আনার হত্যা: আ.লীগ নেতা বাবুর দায় স্বীকার
- ঈদের আগে অর্থনীতিতে স্বস্তি
- প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পেয়ে যা বললো হাসিমাখা মুখগুলো
- শান্তিতে ভারত-পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে এগিয়ে বাংলাদেশ
- শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
- পাবনায় মাদক সম্রাটের নেতৃত্বে একজনকে কুপিয়ে আহত
- ঈশ্বরদীতে নকল সেমাই উৎপাদনের দায়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের জরিমানা
- প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে ঠাকুরগাঁওয়ের জয়
- জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে লাখো মানুষ
- দৌলতদিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে
- জাতির পিতার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের শ্রদ্ধা
- কুমিল্লায় বিধবা আনোয়ারা হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আল-আমিন গ্রেফতার
- নড়াইলে পুলিশ সদস্যের ‘বিশেষ অঙ্গ’ কেটে দেওয়া সেই ডলির বিরুদ্ধে মামলা
- ফুলপুরে কোরবানির পশুর গাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগ
- ফরিদপুরে কানাইপুর শিকদার বাড়ির মহানাম যজ্ঞানুষ্ঠান সমাপ্ত
- কালিহাতীতে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাইভেটকারের ৩ যাত্রী নিহত
- জীবিত জয়তনকে মৃত দেখিয়ে ইউপি সদস্যের শাশুড়ির নামে বিধবা কার্ড
- কুয়াকাটায় এবার ভেসে এলো ১০ ফুট লম্বা মৃত ডলফিন
- টাঙ্গাইলে চাহিদার তুলনায় প্রায় ২০ হাজার বেশি পশু প্রস্তুত
- হাসপাতালে মিঠুন চক্রবর্তী
- ‘জনগণের সঙ্গে পুলিশের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে’
- বিপিএল এর একশো টাকার টিকেট এক হাজার টাকা!
- আলো নিভে নাই
- খুলনা বিভাগে করোনায় প্রাণ গেল ৩ জনের
- কেন্দ্র দখল নিয়ে নরসিংদীতে সংঘর্ষ, নিহত ১
- চিরায়ত লোক উৎসব জামাই ষষ্ঠী
- ‘সরকারের ব্যাংকঋণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে’
- মিন্টুকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে কালের কণ্ঠের সংবাদকর্মীকে হুমকি
- সাবেক ভ্যাট কমিশনার ওয়াহিদা রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- বোয়ালমারীতে কৈশোর ক্লাবের ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা
- ‘দেশে আট মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে’
- এমপি আনার হত্যায় আ.লীগের আরেক নেতা গ্রেপ্তার
- মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল কুমিল্লার পাকবাহিনীর বিভিন্ন অবস্থানে হামলা চালায়
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- সাকিবের অপকর্মের কারণেই দ. আফ্রিকার কাছে বাংলাদেশের ভরাডুবি
- রুশ জাতীয় দিবস উদযাপিত
- সাবেক সংসদ সদস্য মানু মজুমদার আর নেই
- দিনাজপুরে যুবকের হাসুয়ার কোপে বৃদ্ধ নিহত, গণপিটুনিতে নিহত ঘাতক