E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নিউ ইয়র্কে বন্দুক হামলার সময় কর্মরত ছিলেন না নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল

২০২৫ জুলাই ৩০ ১৭:৪৫:০৩
নিউ ইয়র্কে বন্দুক হামলার সময় কর্মরত ছিলেন না নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল

ইমা এলিস, যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের ব্যস্ত এলাকা মিডটাউনে এক ভয়াবহ বন্দুক হামলায় নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ঘটনার সময় কর্তব্যে কর্মরত ছিলেন না। এ তথ্য জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নিউ ইয়র্কের মিডটাউন ম্যানহাটনের একটি উঁচু ভবনে সোমবার সন্ধ্যায় একজন বন্দুকধারী লম্বা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গুলি চালালে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন, যাদের মধ্যে চারজন মারা যান। এদের মধ্যে একজন ছিলেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের এক অফিসার, যিনি সে সময় কর্তব্যে ছিলেন না।

নিহত পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন ৩৬ বছর বয়সী দিদারুল ইসলাম, যিনি বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং নিউ ইয়র্কে তিন বছর ছয় মাস ধরে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি যেমন একজন বীর হিসেবে বেঁচেছিলেন, তেমনিভাবেই মারা গেছেন। তিনি জানান, দিদারুল ইসলাম বিবাহিত ছিলেন, তাঁর দুটি ছোট ছেলে আছে এবং স্ত্রীর গর্ভে তাঁদের তৃতীয় সন্তান।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত বন্দুকধারী ছিলেন শেইন তামুরা, যিনি নেভাদার বাসিন্দা। তিনি নিজেই নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন।

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, আমরা এখনও ঘটনাটির খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছি। আজ রাতে পাঁচজন নিরীহ মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন মারা গেছেন যার একজন নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ৪৭তম প্রিসিঙ্কটের অফিসার দিদারুল ইসলাম। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি প্রাণ হারালেন। সোমবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ পঞ্চম আহত ব্যক্তি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সিসিটিভি ফুটেজে বন্দুকধারীর গুলি চালানোর মুহূর্ত ধারণ

ঘটনাটি ঘটে ব্ল্যাকস্টোন ভবনের লবিতে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ন্যাশনাল ফুটবল লিগের অফিসও রয়েছে।

পুলিশ কমিশনার জেনিফার টিশ বলেন, সন্ধ্যা ৬টা ২৮ মিনিটে ৯১১ নম্বরে কল আসে যে ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউ ঠিকানার ভবনের ভেতরে একজন সক্রিয় বন্দুকধারী আছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বন্দুকধারী একটি কালো বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে নেমে ডান হাতে একটি এম৪ রাইফেল নিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন।

টিশ বলেন, তিনি ভবনের লবিতে ঢুকে ডানে ঘুরে প্রথমেই এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর গুলি চালান। এরপর একটি খুঁটির পেছনে আশ্রয় নেওয়া এক নারীকে গুলি করেন। এরপর তিনি লিফট লবির দিকে এগিয়ে যান এবং নিরাপত্তা ডেস্কের আড়ালে থাকা এক নিরাপত্তা রক্ষীকে গুলি করেন। লবিতে আরও একজন পুরুষ গুলিবিদ্ধ হন।

ফুটেজে দেখা যায়, এক নারীকে তিনি লিফট থেকে নিরাপদে বের হতে দেন, তারপর নিজে লিফটে ওঠেন।

টিশ বলেন, তিনি ৩৩ তলায় ওঠেন এবং হেঁটে হেঁটে গুলি চালাতে থাকেন। ঐ তলায় একজন নিহত হন। তারপর তিনি হলওয়ে ধরে হেঁটে যান এবং নিজেই নিজের বুকে গুলি চালান।

গাড়িটি তল্লাশি করে একটি রাইফেল কেস, একটি রিভলভার ও গুলির খোল পাওয়া যায়। টিশ জানান, এই গাড়িটি ২৬ জুলাই কলোরাডো, ২৭ জুলাই নেব্রাস্কা ও আইওয়া পার হয়ে নিউ জার্সির কলম্বাসে পৌঁছায় বিকেল ৪টা ২৪ মিনিটে।

পুলিশ অফিসার ইসলামের মৃত্যুতে শোক

মেয়র অ্যাডামস বলেন, অফিসার দিদারুল ইসলাম এই শহরের প্রাণের প্রতীক। তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা একজন অভিবাসী, যিনি এই শহরকে ভালোবাসতেন,তিনি একজন প্রকৃত নিউ ইয়র্কার।

অ্যাডামস বলেন, প্রত্যেকেই বলেছে, তিনি একজন ধর্মভীরু মানুষ ছিলেন, যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। নিহত অন্য তিনজন দুই পুরুষ ও এক নারী এর নাম তৎক্ষণাৎ প্রকাশ করা হয়নি।

অ্যাডামস আরও বলেন, এই দেশের প্রতিটি কোণে বন্দুক সহিংসতা অসংখ্য পরিবারকে ভেঙে দিয়েছে, অসংখ্য প্রতিবেশীকে শোকাহত করেছে। আমরা আমাদের শহরকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব, কিন্তু আজ রাতে আমরা যারা নিহত হয়েছেন তাঁদের জন্য শোক জানাই এবং তাঁদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করি।

তদন্তে পুলিশ

এনওয়াইপিডি জানায়, বন্দুকধারী একাই হামলা চালান বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে তাঁর উদ্দেশ্য বা কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। লাস ভেগাস পুলিশ কর্তৃপক্ষ এনওয়াইপিডিকে জানিয়েছে, শেইন তামুরার একটি মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইতিহাস রয়েছে।

ভবনটি সন্ধ্যা ৭টার দিকে খালি করে ফেলা হয়। ঘটনাস্থলের ফুটেজে দেখা যায়, অফিসপোশাক পরা লোকজন হাত তুলে ভবন থেকে বেরিয়ে আসছেন।

ঘটনাস্থলের পাশের একটি রেস্টুরেন্টে খাবার নিচ্ছিলেন এমন কিছু ফিনান্স কর্মী হঠাৎ আওয়াজ শুনে ও মানুষ দৌড়াতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে ভবনে ফিরে যান।

রেস্টুরেন্টে কর্মী আনা স্মিথ বলেন, এটা ছিল একধরনের গণআতঙ্ক। তাঁরা প্রায় দুই ঘণ্টা ভবনের ভেতরে ছিলেন, এরপর তাঁদের বেরিয়ে যেতে বলা হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনালের উত্তরে এবং সেন্ট প্যাট্রিক ক্যাথেড্রালের এক ব্লক পূর্বে ব্যস্ত মিডটাউন এলাকায়। নগরীর জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ ট্রাফিক জ্যাম, সড়ক বন্ধ এবং গণপরিবহন বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক সিটিতে সাম্প্রতিক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম হত্যাকাণ্ড এবং বন্দুক হামলায় আহতের হার রেকর্ড হয়েছে।

(আইএ/এসপি/জুলাই ৩০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test