E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আটলান্টার ফোবানা সম্মেলন সফল না ব্যর্থ?

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৭:৩৬:৩৫
আটলান্টার ফোবানা সম্মেলন সফল না ব্যর্থ?

ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডুলুথে (আটলান্টা) ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) ৩৯তম সম্মেলন শেষ হয়েছে গত রোববার (৩১ আগষ্ট)। চরম অব্যবস্থাপনা,অনিয়ম আর দর্শকশ্রোতারা সীমাহীন হয়রানির শিকার হন সম্মেলনের দ্বিতীয় রাতে। পুলিশের গ্রেপ্তারের হুমকিতে লজ্জিত হয়েছেন শত শত দর্শকশ্রোতা। আয়োজকদের খামখেয়ালিপনায় মিলনায়তনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত দর্শকশ্রোতার সমাগম হওয়ায় গুয়িনেট কাউন্টির ফায়ার মার্শাল শনিবারের অনুষ্ঠানে বন্ধ করে দেয়। টিকেট কেটেও ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি প্রচুর সংখ্যক দর্শকশ্রোতা। এসময় পুলিশ এসে সকল দর্শকশ্রোতাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিলে লজ্জিত হয়ে পড়েন সকলেই।

শুধু তাই নয়, রোববার তৃতীয় রাতে সময়ের অভাবে শিল্পী ও কলাকুশলীদের দফায় দফায় মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে দু'টি গানের বদলে একটি কিংবা তিনিটির বদলে ২টি গান গাওয়ার সুযোগ পান তারা। শিল্পীরা অভিযোগ করেন তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদান করে শ্লট কিনেছিলেন। হাজারো দর্শকের সামনে এভাবে মাইক বন্ধ করে দেওয়ায় তারা চরমভাবে অপমানিত বোধ করেন।

আটলান্টা থেকে ৩৫ মাইল দূরে ডুলুথ শহরের প্রাণকেন্দ্র গ্যাস সাউথ কনভেনশন সেন্টারে গতকাল শুক্রবার (২৯ আগষ্ট) সন্ধ্যায় ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা হাজারো প্রবাসী বাঙালির পদচারণায় পুরো অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয়েছিল এক টুকরো বাংলাদেশে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে শনিবার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে।

শনিবার (৩০ আগষ্ট) ভার্জিনিয়ার অপাজেয় বাংলার পরিবেশনায় হিন্দুদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ, মুসলিমদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ এবং সকল মানুষের জীবন গুরুত্বপূর্ণ এ রকম একটি বিষয় শিল্পীদের পেছনের পর্দায় উঠে আসে। পরিবেশনা শেষে ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক নাহিদুল খান সাহেল মঞ্চে উঠে বলেন ফোবানা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, এখানে কোন রাজনীতির কোন বিষয় আনা যাবে না বলে তিনি শিল্পীদের কটাক্ষ করেন। এত শিল্পীরা লাঞ্ছিতবোধ করেন। পরদিন রোববার এ বিষয়টি উঠে আসে ফোবানার বার্ষিক সাধারন সভায়। অপাজেয় বাংলার কর্ণধার শম্পা শ্রীসহ অনেকেই আহবায়কের কাছে এ বিষয়টির ব্যাখ্যা চান। এর উত্তরে তিনি পুনরায় রাজনৈতিক বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন।

নাহিদুল খান সাহেল এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিবেদককে জানান, রাজনৈতিক শ্লোগান দেখানো হয়েছিল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তির ছবি ভিডিওতে। ফোবানা অরাজনৈতিক সংগঠন, যে কোন রাজনৈতিক শ্লোগান বা রাজনীতিবিদদের ছবি কেউ দেখালে তার বিরুদ্ধে কথা বলা আমার দায়িত্ব। অথচ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবির প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ছবি প্রদর্শিত না হওয়ায় জর্জিয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি প্রতিবাদ সভাও করেছেন বলে জানা গেছে। প্রতিবাদ সভা থেকে অবিলম্বে জর্জিয়া বিএনপির সভাপতি পদ থেকে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।

এদিকে ৩৯তম ফোবানার নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারপারসন মাসুদ রব চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হয়, মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে একজন শিল্পীকে অপমান করার ঘটনায় সাধারন সভায় আটলান্টা ফোবানার আহবায়ক সাহেল খানের বহিস্কারের দাবি উঠেছে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? উত্তরে তিনি বলেন, এ কথা ঠিক নয়।

ফোবানার সাবেক নির্বাহী সচিব আবীর আলমগীর জানান, সাধারন সভা আমি পরিচালনা করেছি, এ তথ্য আমিই জানি না। আপনি কোথা থেকে এই তথ্য আবিস্কার করলেন। এ ধরণের ভুয়া তথ্য কে দিয়েছে জানি না।

আসন্ন ৪০তম ফোবানার নির্বাহী কমিটির নব নির্বাচিত চেয়ারপারসন রবিউল করিম বেলাল জানান, সাধারন সভায় এ রকম বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শনিবার রাতে সাহেল খানের ঘোষনাও তিনি নিজ কানেই শুনেছেন। তিনি বলেন, সাধারন সভায় কোন সাংবাদিকের প্রবেশাধিকার ছিল না, কিন্তু সভার এ তথ্য আপনি কীভাবে পেলেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এখন কোন সংবাদ প্রকাশ করা ঠিক হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রোববার সন্ধ্যার পর থেকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনির মাধ্যমে প্রবেশপথে জিম্মি করা হয় শত শত দর্শকশ্রোতাদের। গত আটত্রিশ বছরে যা ঘটেনি এবারে তাই ঘটছে আটলান্টার ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনে। জর্জিয়ার সর্বস্তরের মানুষ এ সম্মেলনে কোন সাড়া দেয়নি। সবার অংশগ্রহণ না থাকায় আটলান্টার প্রবাসীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন আয়োজকদের পারিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন দোকান কর্মচারীদের সর্বস্তরে দায়িত্ব প্রদান করে চরম স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়েছেন তারা। যা এর আগে অন্য কোন ফোবানায় ঘটেনি।ফলে এবারের ফোবানা রুপান্তরিত হয়েছে তাদের পারিবারিক ফোবানা সম্মেলনে।

এবারের সম্মেলনে ছিল বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর বিশেষ সেবা সার্ভিস। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব জর্জিয়া এই বিশেষ সার্ভিসটি আয়োজন করেছে বলে প্রচারণা চালানো হলেও অ্যাসোসিয়েশন অব জর্জিয়ার কোন সদস্যদের সম্পৃক্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুলত সমিতির নাম ভাঙিয়ে এটি ছিল একটি মিথ্যা প্রচারণা। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন আটলান্টাভিত্তিক সাহিত্য-সংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলা ধারা’, কিন্ত গত ১০ বছরেও বাংলা ধারার কোন কর্মকান্ড দেখেনি আটলান্টাবাসী। আটলান্টা প্রবাসী বেশ কয়েকজন সচেতন বাংলাদেশি এ তথ্য জানিয়েছেন। এবারের সম্মেলনে উত্তর আমেরিকার ২৪টি শহর থেকে সর্বমোট ৭৪টি সংগঠন এবং সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন বলে ফোবানার নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন।

গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আটলান্টা ফোবানা সম্মেলনে সব অনুষ্ঠান নিখুঁত ছিল না। কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল, সামান্য বিশৃঙ্খলা, অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বিবৃতিতে তিনি ভুল, বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা স্বীকার করেন।

নিমন্ত্রণ পায়নি আটলান্টার সাংবাদিকরা

আটলান্টার ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনে এ প্রতিবেদকসহ নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকে প্রচুর সংখ্যক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হলেও অফিসিয়াল কোন নিমন্ত্রণ পায়নি আটলান্টার সাংবাদিক শিকদার মনজিলুর রহমান, রুমি কবির, এ এইচ রাসেল খান ও নুর ভুইয়া।

৩৯ বছরেও সাংবাদিকদের বসার ব্যবস্থা হয়নি ফোবানা সম্মেলনে

৩৯ বছরেও সাংবাদিকদের বসার আলাদা কোন ব্যবস্থা হয়নি ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলনে। সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার ও ভিডিওগ্রাফারদের বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কেউ প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সারিতে বসলে তাদের উঠিয়ে দেওয়া হয় অনুরোধে বা নিরাপত্তাকর্মীদের দ্বারা। এ বিষয়টি প্রতি বছরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও কেউ তা কর্ণপাত করেননি।

দ্বিতীয় দিনে শনিবার (৩০ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় ৩৯তম ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া একজন সংবাদকর্মীকে চেয়ার ছেড়ে অন্যত্র যাবার অনুরোধ করেন। পরে তিনি করিডোরে ফ্লোরে বসেই কাজ করেন। সাংবাদিকদের অবমূল্যায়ন করে পৃষ্ঠপোষকদের পেছেনে ছুটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসময় অপর একজন কর্মী এসে ভার্জিনিয়ার জনৈক একজন পৃষ্ঠপোষককেও চেয়ার ছেড়ে অন্যত্র যেতে বলেন। তিনি বলেন আমিও একজন স্পন্সর। পাল্টা উত্তরে তিনি বলেন যারা ১০ হাজার ডলারের বেশি স্পন্সর করেছে এসব চেয়ার শুধু তাদের জন্য। বিতর্ক না বাড়িয়ে পরে তিনি ফিরে যেতে বাধ্য হন।

(আইএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test